রঙ্গমঞ্চ প্রতিবেদক
বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী যানবাহন রিকশা ও রিকশাচিত্র ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক এই সংস্থা বুধবার বিকেলে এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্বীকৃতির কথা জানিয়েছে। দেশের মানুষের জন্য খবরটি আনন্দের। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি খবরটি আরো একজনের জন্য বিশেষ আনন্দের।
তিনি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের মেয়ে শিরিন শিলা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মিস ইউনিভার্সের মঞ্চে বাংলাদেশের লাল জামদানি আর রিকশাচিত্রের হুড পরে সবার নজর কেড়েছিলেন। শুধু তাই নয়, দেশি ঐতিহ্যের প্রতি তাঁর এই টান থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির চায়ের দোকানগুলোকে রিকশাচিত্রে রাঙিয়ে তোলার উদ্যোগ নেন গত বছর। সেই উদ্যোগ দারুণভাবে আলোচনায় আসে।
তার উদ্যোগে টিএসসির সবগুলো চায়ের দোকান রঙিন হয় রিকশাচিত্রের মাধ্যমে। সেই শিল্পকর্মের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘দ্বিতীয় অধ্যায় : চায়ের কাপে রিকশাচিত্র’।
ইউনেসকোর স্বীকৃতি নিয়ে রিকশাচিত্রকে সামনে তুলে আনা এই তারকার অনুভূতি কী? কালের কণ্ঠকে শিরিন শিলা বলেন, ‘আমি আসলে খবরটা আপনার কাছে প্রথম শুনলাম। এটা ভীষণ আনন্দের খবর।
কিন্তু এই স্বীকৃতিটা আমরা কতটা প্রমোট করতে পারব সেটাই চিন্তার বিষয়। শুধু স্বীকৃতি পেলাম তাতেই তো হবে না, এটা নিয়ে আরো কাজ করতে হবে। কাজ করার ক্ষেত্রে দেখা যায় আমরা সব সময় সহযোগিতা পাই না। আমি যখন রিকশাচিত্র নিয়ে প্রথমবার টিএসসিতে উদ্যোগ নিয়েছিলাম, সেটা আমি আমার নিজের টাকায় করেছিলাম। একেবারে নিজ খরচে।
কারণ এটা আমার ভালো লাগার একটা জায়গা। তারপর এটা নিয়ে বড় করে পরিকল্পনা করতে যাব, দেখা গেল টাকার সংকট- এসব কারণে আর এগোতে পারিনি।’
শিলা তার ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের অনেকেই বাংলাদেশের সংস্কৃতি বা ঐতিহ্যবাহী বিষয় নিয়ে সেভাবে বলতে পারবে না। কিন্তু এটা আমাদের সবার জানা দরকার। বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতিগুলোকে যেন আমরা আরো তুলে ধরতে পারি, সেটা নিয়ে যেন আমরা কাজ করতে পারি। কতটুকু কাজ হবে তা জানি না, কিন্তু আমি চাই আরো কাজ হোক। বাংলাদেশের কাজগুলো যেন বড় পরিসরে তুলে ধরতে পারি সেই চেষ্টা করব।’
টিএসসির সেই রিকশাচিত্র
বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেলের কথা তুলে ধরে শিরিন শিলা বলেন, ‘তিনি আমাদের গামছাকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরেছেন। বিশ্বের দরবারে আমরা যদি কোনো ডিজাইনারের কথা বলি, তাহলে বিবি রাসেলের কথা বললে সবাই চেনে। উনি ওইভাবে নিয়ে যেতে পেরেছেন। আমি জানি না আমরা রিকশাচিত্র নিয়ে কতটা সামনে এগিয়ে যেতে পারব। তবে রিকশাচিত্র নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন আছে আমার। আমি আশা রাখি, যেদিন স্বাবলম্বী হতে পার সেদিন হয়তো স্বপ্নগুলো পূরণ করতে পারব।’
রিকশাচিত্র নিয়ে আরো কাজ করার জন্য এই মডেল ও অভিনেত্রী দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চান।