8:48 pm, Sunday, 22 December 2024

জাপান অস্কারে বাজিমাত

  • কারুবাক
  • আপডেটের সময় : ০৬:১২:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪
  • 54 ভিউ
শেয়ার করুন

কারুবাক ডেস্ক :

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় লস অ্যাঞ্জেলেসের হলিউড অ্যান্ড হাইল্যান্ড সেন্টারের ডলবি থিয়েটারে গত ১১ মার্চ ৯৬তম অস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

দুই দশকের বেশি সময় পর আবারও অস্কার জিতলেন জাপানের খ্যাতিমান অ্যানিমেটর হায়াও মিয়াজাকি। তার পরিচালিত ‘দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন’ সেরা অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। এই ছবিটি গত জানুয়ারিতে হায়াও মিয়াজাকিকে গোল্ডেন গ্লোব এনে দিয়েছে। এরপর বাফটা অ্যাওয়ার্ডস জিতেছেন তিনি।

তবে কোন পুরস্কারই সশরীরে উপস্থিত থেকে নিতে পারেননি ‘দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন’-এর দুই প্রযোজক ৮৩ বছর বয়সী হায়াও মিয়াজাকি এবং ৭৫ বছর বয়সী তোশিও সুজুকি।

অস্কারে ছবিটিরকে প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে ডিজনির ‘এলেমেন্টাল’, সনি পিকচার্সের ‘স্পাইডার-ম্যান : অ্যাক্রস দ্য স্পাইডার-ভার্স’, নেটফ্লিক্সের ‘নিমোনা’ ও ৭৬তম কান উৎসবে প্রদর্শিত স্প্যানিশ-ফরাসি অ্যানিমেটেড ছবি ‘রোবট ড্রিমস’-এর সঙ্গে। ছবিটির নির্মাণ শেষে দুই জনই অবসরের ঘোষণা দেন। কোনও উত্তরসূরি না পেয়ে গত বছর নিপ্পন টিভির কাছে স্টুডিও গিবলি বিক্রি করে দেন তারা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে আধা-আত্মজীবনীমূলক ছবিটির গল্প মাহিতো মাকি নামের ১২ বছরের এক বালককে ঘিরে। টোকিওর একটি হাসপাতালে আগুনে প্রাণ হারায় তার মা। মাহিতোর বাবা পেশায় যুদ্ধবিমান কারখানার মালিক। তিনি শ্যালিকাকে বিয়ে করে গ্রামে চলে যান। এরপর শুরু হয় মাহিতোর নতুন জীবন। একদিন তার সঙ্গে একটি অতিপ্রাকৃত ধূসর হেরনের দেখা হয়। তাকে একটি বদ্ধ টাওয়ারের দিকে নিয়ে যায় এই প্রাণী। সেখানে অনেক চমৎকার প্রাণী আবিষ্কার করে মাহিতো। তারা তাকে বিভিন্ন উপায়ে মাকে হারানোর শোক কাটাতে সহায়তা করে।

পর্দার মাহিতোর মতোই বাস্তবে যুদ্ধের কারণে হায়াও মিয়াজাকির পরিবার ঘরছাড়া হয়েছিলো। তার ছবিগুলোর বলিষ্ঠ নারী চরিত্র দেখলে বোঝা যায়, এই নির্মাতার কাজের ওপর মায়ের প্রভাব আছে।

বেশিরভাগ অ্যানিমেটেড ছবি তৈরিতে ব্যবহার হয়ে থাকে কম্পিউটার দিয়ে বানানো চিত্র। তবে ‘দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন’-এর অ্যানিমেশনগুলো হায়াও মিয়াজাকির হাতে আঁকা। যার  ফলে ছবিটি তৈরি করতে প্রায় এক দশক লেগেছে। ছবিটি ২০২৩ সালে মুক্তির পর উত্তর আমেরিকার বক্স অফিসে এক নম্বরে স্থান করে নেয়। প্রথম সপ্তাহে ছবিটি আয় করে ১ কোটি ৩০ লাখ ডলার (১৪৩ কোটি টাকা)।

হায়াও মিয়াজাকিকে বলা হয়ে থাকে ‘অ্যানিমেশনের গডফাদার’। ইসাও তাকাহাতা ও তোশিও সুজুকির সঙ্গে ১৯৮৫ সালে জাপানিজ অ্যানিমেশন প্রতিষ্ঠান স্টুডিও গিবলি প্রতিষ্ঠার পর অনেক ছবি প্রযোজনা করেছেন এই গুণী নির্মাতা।

হায়াও মিয়াজাকি পরিচালিত ‘স্পিরিটেড অ্যাওয়ে’ ২০০৩ সালে প্রথম অ-ইংরেজি ছবি হিসেবে সেরা অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র বিভাগে অস্কার জিতে রেকর্ড গড়েছে। এর গল্প একটি মেয়েকে ঘিরে যে তার বাবা-মাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে যারা শূকর হয়ে গেছে। ‘স্পিরিটেড অ্যাওয়ে’ জাপানের সর্বকালের সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র হয়েছে। ১৯ বছর ছবিটির দখলে ছিল এই রেকর্ড।

এরপর আরও দুইবার অস্কারে মনোনয়ন পান হায়াও মিয়াজাকি। তার পরিচালিত ‘দ্য উইন্ড রোজেস’ ২০০৪ সালে ও “হাউল’স মুভিং ক্যাসেল” ২০০৬ সালে সেরা অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে। ২০১৪ সালে সম্মানসূচক অস্কার পান তিনি।

হায়াও মিয়াজাকির আরেকটি দর্শকনন্দিত অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র ‘মাই নেইবার তোতোরো’ (১৯৮৮)। এর গল্প দুই বোন ও তাদের রহস্যময় প্রাণী বন্ধুকে ঘিরে।

এবারের অস্কারে এশিয়ার দেশ জাপানের আরও চার জন পুরস্কার জিতেছেন। কম বাজেটে নির্মিত ‘গডজিলা মাইনাস ওয়ান’ সেরা ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস বিভাগে জিতেছে। এর সুবাদে অস্কারের সোনালি ট্রফি পেয়েছেন ছবিটির পরিচালক তাকাশি ইয়ামাজাকি, ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস নির্দেশক কিয়োকো শিবুয়া, থ্রিডি কম্পিউটার গ্রাফিক্স নির্দেশক মাসাকি তাকাহাশি এবং মহাসাগর ইফেক্টস উদ্ভাবক ও কম্পোজিটর তাতসুজি নোজিমা। অনুষ্ঠানে চার জনই খেলনা গডজিলা নিয়ে এসেছেন।

১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ প্রান্তের পটভূমিতে নির্মিত ‘গডজিলা মাইনাস ওয়ান’ ছবির গল্পে দেখা যায়, যুদ্ধবিধ্বস্ত জাপানে নতুন সংকট হয়ে আসে গডজিলার সঙ্গে লড়াই। সরকার সাহায্য করতে অস্বীকৃতি জানানোর পরও সাধারণ নাগরিকেরা ভয়ঙ্কর প্রাণীর সঙ্গে লড়াই করে যায়।

অস্কার মঞ্চের পেছনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ভিজ্যুয়াল ইফেক্টসে সেরা চার জাপানি বলেন, ‘আমরা অনেক গডজিলা দেখেছি। আমরা গডজিলার অন্তঃসার দেখতে চেয়েছিলাম। এর উৎসের দিকে ফিরে গেলে বোঝা যায়, গডজিলা যুদ্ধের প্রতীক। তাই আমরা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম, দর্শকরা ছবিটি দেখলে যেন তাদের মনে ভয় জাগে।’

 

#
জনপ্রিয়

জাপান অস্কারে বাজিমাত

আপডেটের সময় : ০৬:১২:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪
শেয়ার করুন

কারুবাক ডেস্ক :

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় লস অ্যাঞ্জেলেসের হলিউড অ্যান্ড হাইল্যান্ড সেন্টারের ডলবি থিয়েটারে গত ১১ মার্চ ৯৬তম অস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

দুই দশকের বেশি সময় পর আবারও অস্কার জিতলেন জাপানের খ্যাতিমান অ্যানিমেটর হায়াও মিয়াজাকি। তার পরিচালিত ‘দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন’ সেরা অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। এই ছবিটি গত জানুয়ারিতে হায়াও মিয়াজাকিকে গোল্ডেন গ্লোব এনে দিয়েছে। এরপর বাফটা অ্যাওয়ার্ডস জিতেছেন তিনি।

তবে কোন পুরস্কারই সশরীরে উপস্থিত থেকে নিতে পারেননি ‘দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন’-এর দুই প্রযোজক ৮৩ বছর বয়সী হায়াও মিয়াজাকি এবং ৭৫ বছর বয়সী তোশিও সুজুকি।

অস্কারে ছবিটিরকে প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে ডিজনির ‘এলেমেন্টাল’, সনি পিকচার্সের ‘স্পাইডার-ম্যান : অ্যাক্রস দ্য স্পাইডার-ভার্স’, নেটফ্লিক্সের ‘নিমোনা’ ও ৭৬তম কান উৎসবে প্রদর্শিত স্প্যানিশ-ফরাসি অ্যানিমেটেড ছবি ‘রোবট ড্রিমস’-এর সঙ্গে। ছবিটির নির্মাণ শেষে দুই জনই অবসরের ঘোষণা দেন। কোনও উত্তরসূরি না পেয়ে গত বছর নিপ্পন টিভির কাছে স্টুডিও গিবলি বিক্রি করে দেন তারা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে আধা-আত্মজীবনীমূলক ছবিটির গল্প মাহিতো মাকি নামের ১২ বছরের এক বালককে ঘিরে। টোকিওর একটি হাসপাতালে আগুনে প্রাণ হারায় তার মা। মাহিতোর বাবা পেশায় যুদ্ধবিমান কারখানার মালিক। তিনি শ্যালিকাকে বিয়ে করে গ্রামে চলে যান। এরপর শুরু হয় মাহিতোর নতুন জীবন। একদিন তার সঙ্গে একটি অতিপ্রাকৃত ধূসর হেরনের দেখা হয়। তাকে একটি বদ্ধ টাওয়ারের দিকে নিয়ে যায় এই প্রাণী। সেখানে অনেক চমৎকার প্রাণী আবিষ্কার করে মাহিতো। তারা তাকে বিভিন্ন উপায়ে মাকে হারানোর শোক কাটাতে সহায়তা করে।

পর্দার মাহিতোর মতোই বাস্তবে যুদ্ধের কারণে হায়াও মিয়াজাকির পরিবার ঘরছাড়া হয়েছিলো। তার ছবিগুলোর বলিষ্ঠ নারী চরিত্র দেখলে বোঝা যায়, এই নির্মাতার কাজের ওপর মায়ের প্রভাব আছে।

বেশিরভাগ অ্যানিমেটেড ছবি তৈরিতে ব্যবহার হয়ে থাকে কম্পিউটার দিয়ে বানানো চিত্র। তবে ‘দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন’-এর অ্যানিমেশনগুলো হায়াও মিয়াজাকির হাতে আঁকা। যার  ফলে ছবিটি তৈরি করতে প্রায় এক দশক লেগেছে। ছবিটি ২০২৩ সালে মুক্তির পর উত্তর আমেরিকার বক্স অফিসে এক নম্বরে স্থান করে নেয়। প্রথম সপ্তাহে ছবিটি আয় করে ১ কোটি ৩০ লাখ ডলার (১৪৩ কোটি টাকা)।

হায়াও মিয়াজাকিকে বলা হয়ে থাকে ‘অ্যানিমেশনের গডফাদার’। ইসাও তাকাহাতা ও তোশিও সুজুকির সঙ্গে ১৯৮৫ সালে জাপানিজ অ্যানিমেশন প্রতিষ্ঠান স্টুডিও গিবলি প্রতিষ্ঠার পর অনেক ছবি প্রযোজনা করেছেন এই গুণী নির্মাতা।

হায়াও মিয়াজাকি পরিচালিত ‘স্পিরিটেড অ্যাওয়ে’ ২০০৩ সালে প্রথম অ-ইংরেজি ছবি হিসেবে সেরা অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র বিভাগে অস্কার জিতে রেকর্ড গড়েছে। এর গল্প একটি মেয়েকে ঘিরে যে তার বাবা-মাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে যারা শূকর হয়ে গেছে। ‘স্পিরিটেড অ্যাওয়ে’ জাপানের সর্বকালের সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র হয়েছে। ১৯ বছর ছবিটির দখলে ছিল এই রেকর্ড।

এরপর আরও দুইবার অস্কারে মনোনয়ন পান হায়াও মিয়াজাকি। তার পরিচালিত ‘দ্য উইন্ড রোজেস’ ২০০৪ সালে ও “হাউল’স মুভিং ক্যাসেল” ২০০৬ সালে সেরা অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে। ২০১৪ সালে সম্মানসূচক অস্কার পান তিনি।

হায়াও মিয়াজাকির আরেকটি দর্শকনন্দিত অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র ‘মাই নেইবার তোতোরো’ (১৯৮৮)। এর গল্প দুই বোন ও তাদের রহস্যময় প্রাণী বন্ধুকে ঘিরে।

এবারের অস্কারে এশিয়ার দেশ জাপানের আরও চার জন পুরস্কার জিতেছেন। কম বাজেটে নির্মিত ‘গডজিলা মাইনাস ওয়ান’ সেরা ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস বিভাগে জিতেছে। এর সুবাদে অস্কারের সোনালি ট্রফি পেয়েছেন ছবিটির পরিচালক তাকাশি ইয়ামাজাকি, ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস নির্দেশক কিয়োকো শিবুয়া, থ্রিডি কম্পিউটার গ্রাফিক্স নির্দেশক মাসাকি তাকাহাশি এবং মহাসাগর ইফেক্টস উদ্ভাবক ও কম্পোজিটর তাতসুজি নোজিমা। অনুষ্ঠানে চার জনই খেলনা গডজিলা নিয়ে এসেছেন।

১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ প্রান্তের পটভূমিতে নির্মিত ‘গডজিলা মাইনাস ওয়ান’ ছবির গল্পে দেখা যায়, যুদ্ধবিধ্বস্ত জাপানে নতুন সংকট হয়ে আসে গডজিলার সঙ্গে লড়াই। সরকার সাহায্য করতে অস্বীকৃতি জানানোর পরও সাধারণ নাগরিকেরা ভয়ঙ্কর প্রাণীর সঙ্গে লড়াই করে যায়।

অস্কার মঞ্চের পেছনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ভিজ্যুয়াল ইফেক্টসে সেরা চার জাপানি বলেন, ‘আমরা অনেক গডজিলা দেখেছি। আমরা গডজিলার অন্তঃসার দেখতে চেয়েছিলাম। এর উৎসের দিকে ফিরে গেলে বোঝা যায়, গডজিলা যুদ্ধের প্রতীক। তাই আমরা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম, দর্শকরা ছবিটি দেখলে যেন তাদের মনে ভয় জাগে।’