8:50 pm, Sunday, 22 December 2024

বিশ্ব মানবাধিকার দিবস : ন্যায়বিচার ও অধিকারের মাঠ হোক সমতল

  • কারুবাক
  • আপডেটের সময় : ০৯:৩৩:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩
  • 71 ভিউ
শেয়ার করুন

এলিনা খান

সবার জন্য স্বাধীনতা, সমঅধিকার ন্যায়বিচার’Ñ প্রতিপাদ্য ধারণ করে আজ বাংলাদেশসহ বিশ্বের দেশে দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। চলতি বছর মানবাধিকার দিবস অন্যরকম গুরুত্ববাহী। কারণ রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধ ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের অমানবিক হামলা এবং বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশে সংঘাতসহিংসতা বিশ্ব মানবাধিকারের বিষয়টিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নির্বিকার অবস্থানও প্রশ্নবিদ্ধ। রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের ক্রমাগত হামলা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনই নয়, অমানবিকনিষ্ঠুর এবং মর্মন্তুদও বটে। রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধের বেলায় যে কথা খাটে, ইসরায়েলফিলিস্তিন যুদ্ধে আমরা তা বলতে পারছি না। গোটা বিশ্ব দেখছে গাজায় নৃশংসতা এবং সহিংসতার বীভৎস রূপ।

মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ও লঙ্ঘনের ফলে একদিকে বৈষম্য বাড়ছে আর এর উপজাত হিসেবে বাড়ছে অপরাধ ও জীবনের সংকট। মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে আমাদের দেশেও। ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শ্রমনীতি ঘোষণা করেছে, যা নানা মহলে শঙ্কার ছায়া ফেলেছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক সংকটে বিঘ্নিত হচ্ছে জননিরাপত্তা। মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ জীবনযাপনের ধরনে বাধ্য হচ্ছে সমন্বয়ের মাধ্যমে নানা পরিবর্তন আনতে। চলমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটের জেরে বাড়ছে সামাজিক অপরাধ। রাজনৈতিক সহিংসতায় সম্পদহানির পাশাপাশি জনজীবনও পড়েছে ঝুঁকির মুখে। রাজনৈতিক দলগুলো মানবাধিকারের কথা বললেও তাদের অনেকের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এর প্রতিফলনের দেখা মিলছে খুবই কম। রাজনৈতিক দল কর্মসূচি পালন করবে এটি তাদের অধিকার। কিন্তু কর্মসূচি পালনের নামে সংঘাত-সহিংসতার সুযোগ নেই। অথচ দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দলীয় স্বার্থে সংঘাত-সহিংসতা উস্কে দেওয়া হয়। দলীয় স্বার্থ আদায়ের এ অপপ্রক্রিয়া মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের পথে বড় প্রতিবন্ধকতা।

যেকোনো রাষ্ট্রে মানবাধিকার পরিস্থিতি সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হয় সরকারকে। এ ক্ষেত্রে আইন প্রণয়ন এবং প্রয়োগের বিষয়েও সহনশীল ও সমন্বয়পূর্ণ অবস্থান জরুরি। পরমতসহিষ্ণুতা এবং অন্যকে হেয় কিংবা হীনজ্ঞান না করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে না পারলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটি পক্ষ সহিংসতার পথ বেছে নিতে পারে। এজন্য সরকারকে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে সুবিবেচনার পরিচয় দিতে হয়। কোনো অবস্থায়ই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এমন রাজনৈতিক কর্মসূচি সমর্থন পেতে পারে না। আবার আইনের মানবিক দিক প্রতিষ্ঠা করতে না পারাকেও সমর্থন করা যায় না। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা, আদর্শিক রাজনীতি এবং বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা গেলে মানবাধিকারের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার পথও মসৃণ হয়ে ওঠে।

দেখা যাচ্ছে, যেকোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান কিছুটা কঠোর। অবশ্য জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপরই বর্তায়। কিন্তু তাও করতে হবে মানবাধিকার রক্ষা করেই। তবে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাদের কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাষ্ট্রের তরফে দায়িত্ব পালন করে। তাই পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে তারা কখনও কখনও অনমনীয় হয়ে উঠলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মনেও নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। তারা মনে করে এভাবে তাদের দমিয়ে রাখা হচ্ছে এবং এর প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও মানবিক, সহনশীল ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।

অন্যায়-নিপীড়ন দমন এবং সমঅধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য দেশে মানবাধিকার কমিশন ও নানা সংস্থা রয়েছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অনেকের ধারণাই ইতিবাচক নয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এখনও এ প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাগুলোকে আমরা শক্তিশালী করতে পারিনি। আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারত কিংবা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানবাধিকার কমিশনের অবস্থান পর্যালোচনা করলেই আমাদের মানবাধিকার কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা বোঝা সহজ হবে। মানবাধিকার সুরক্ষার কাজ সরকারনির্ভর হলে হবে না। মানবাধিকার নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ অবস্থান জরুরি। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো আপস করা যাবে না। অন্যায়কারী যে-ই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় এনে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আইনের প্রতি জনগণের আস্থা নিশ্চিত করাও মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আইনের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়লে তারা আইন-প্রতিষ্ঠানের কাছে বিচারের প্রত্যাশায় আসবে। তখন আইনি কাঠামোও সুষ্ঠুভাবে বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ আস্থা সৃষ্টির দায়িত্ব মানবাধিকার কমিশনের। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে দেশে অন্যায় ও সামাজিক অপরাধ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

অবকাঠামো ও অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে আমাদের উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে সামাজিক নিরাপত্তা ও বৈষম্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে আমরা এখনও অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছি। ফলে অর্থনীতিতে দ্রুত উন্নতি করলেও দেশের মানুষ অনেকটা অসচ্ছল জীবনযাপন করে। মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিনিময়ে টাকার কম মূল্যমান, পণ্যের সংকট, বাজারের অব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক সংকট জীবনযাত্রার মান ক্রমেই নিম্নমুখী করছে। মানুষের স্থিতিশীল জীবনের জন্য খাদ্য ও নিরাপদ আশ্রয়ের চাহিদাই প্রাধান্য পায় বেশি। আমাদের আর্থসামাজিক কাঠামোও খাদ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টিকেই জোর দিতে বাধ্য করে। এ দুটি মৌলিক চাহিদাই এখন প্রতিবন্ধকতার মুখে। জীবনযাত্রার মান নিম্নমুখী হলে এবং মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো সঠিকভাবে পূরণ না হলে মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা অনেকাংশে কঠিন হয়ে পড়ে। দেখা যায়, এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী নারী। মৌলিক চাহিদা পূরণ না হলে মানুষ অবদমিত হতে শুরু করে। ফলে বাড়ে নানা অপরাধ, নারীর প্রতি সহিংসতা-নির্যাতন। তাই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের মৌলিক সংকটগুলো সমাধান করতে হবে। আমাদের মূল সংকট অচিহ্নিত নয়। চিহ্নিত এ বিষয়গুলোর সমাধানে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের নীতি-নির্ধারকদেরও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। মানবাধিকারের সুরক্ষার দায় কমবেশি সবারই রয়েছে। মানবাধিকারের সুরক্ষায় কথা নয়, কাজের কাজ দৃশ্যমান হোক।

সূত্র : প্রতিদিনের বাংলাদেশ

#
জনপ্রিয়

বিশ্ব মানবাধিকার দিবস : ন্যায়বিচার ও অধিকারের মাঠ হোক সমতল

আপডেটের সময় : ০৯:৩৩:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩
শেয়ার করুন

এলিনা খান

সবার জন্য স্বাধীনতা, সমঅধিকার ন্যায়বিচার’Ñ প্রতিপাদ্য ধারণ করে আজ বাংলাদেশসহ বিশ্বের দেশে দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। চলতি বছর মানবাধিকার দিবস অন্যরকম গুরুত্ববাহী। কারণ রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধ ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের অমানবিক হামলা এবং বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশে সংঘাতসহিংসতা বিশ্ব মানবাধিকারের বিষয়টিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নির্বিকার অবস্থানও প্রশ্নবিদ্ধ। রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের ক্রমাগত হামলা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনই নয়, অমানবিকনিষ্ঠুর এবং মর্মন্তুদও বটে। রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধের বেলায় যে কথা খাটে, ইসরায়েলফিলিস্তিন যুদ্ধে আমরা তা বলতে পারছি না। গোটা বিশ্ব দেখছে গাজায় নৃশংসতা এবং সহিংসতার বীভৎস রূপ।

মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ও লঙ্ঘনের ফলে একদিকে বৈষম্য বাড়ছে আর এর উপজাত হিসেবে বাড়ছে অপরাধ ও জীবনের সংকট। মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে আমাদের দেশেও। ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শ্রমনীতি ঘোষণা করেছে, যা নানা মহলে শঙ্কার ছায়া ফেলেছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক সংকটে বিঘ্নিত হচ্ছে জননিরাপত্তা। মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ জীবনযাপনের ধরনে বাধ্য হচ্ছে সমন্বয়ের মাধ্যমে নানা পরিবর্তন আনতে। চলমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটের জেরে বাড়ছে সামাজিক অপরাধ। রাজনৈতিক সহিংসতায় সম্পদহানির পাশাপাশি জনজীবনও পড়েছে ঝুঁকির মুখে। রাজনৈতিক দলগুলো মানবাধিকারের কথা বললেও তাদের অনেকের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এর প্রতিফলনের দেখা মিলছে খুবই কম। রাজনৈতিক দল কর্মসূচি পালন করবে এটি তাদের অধিকার। কিন্তু কর্মসূচি পালনের নামে সংঘাত-সহিংসতার সুযোগ নেই। অথচ দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দলীয় স্বার্থে সংঘাত-সহিংসতা উস্কে দেওয়া হয়। দলীয় স্বার্থ আদায়ের এ অপপ্রক্রিয়া মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের পথে বড় প্রতিবন্ধকতা।

যেকোনো রাষ্ট্রে মানবাধিকার পরিস্থিতি সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হয় সরকারকে। এ ক্ষেত্রে আইন প্রণয়ন এবং প্রয়োগের বিষয়েও সহনশীল ও সমন্বয়পূর্ণ অবস্থান জরুরি। পরমতসহিষ্ণুতা এবং অন্যকে হেয় কিংবা হীনজ্ঞান না করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে না পারলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটি পক্ষ সহিংসতার পথ বেছে নিতে পারে। এজন্য সরকারকে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে সুবিবেচনার পরিচয় দিতে হয়। কোনো অবস্থায়ই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এমন রাজনৈতিক কর্মসূচি সমর্থন পেতে পারে না। আবার আইনের মানবিক দিক প্রতিষ্ঠা করতে না পারাকেও সমর্থন করা যায় না। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা, আদর্শিক রাজনীতি এবং বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা গেলে মানবাধিকারের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার পথও মসৃণ হয়ে ওঠে।

দেখা যাচ্ছে, যেকোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান কিছুটা কঠোর। অবশ্য জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপরই বর্তায়। কিন্তু তাও করতে হবে মানবাধিকার রক্ষা করেই। তবে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাদের কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাষ্ট্রের তরফে দায়িত্ব পালন করে। তাই পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে তারা কখনও কখনও অনমনীয় হয়ে উঠলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মনেও নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। তারা মনে করে এভাবে তাদের দমিয়ে রাখা হচ্ছে এবং এর প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও মানবিক, সহনশীল ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।

অন্যায়-নিপীড়ন দমন এবং সমঅধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য দেশে মানবাধিকার কমিশন ও নানা সংস্থা রয়েছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অনেকের ধারণাই ইতিবাচক নয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এখনও এ প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাগুলোকে আমরা শক্তিশালী করতে পারিনি। আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারত কিংবা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানবাধিকার কমিশনের অবস্থান পর্যালোচনা করলেই আমাদের মানবাধিকার কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা বোঝা সহজ হবে। মানবাধিকার সুরক্ষার কাজ সরকারনির্ভর হলে হবে না। মানবাধিকার নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ অবস্থান জরুরি। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো আপস করা যাবে না। অন্যায়কারী যে-ই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় এনে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আইনের প্রতি জনগণের আস্থা নিশ্চিত করাও মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আইনের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়লে তারা আইন-প্রতিষ্ঠানের কাছে বিচারের প্রত্যাশায় আসবে। তখন আইনি কাঠামোও সুষ্ঠুভাবে বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ আস্থা সৃষ্টির দায়িত্ব মানবাধিকার কমিশনের। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে দেশে অন্যায় ও সামাজিক অপরাধ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

অবকাঠামো ও অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে আমাদের উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে সামাজিক নিরাপত্তা ও বৈষম্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে আমরা এখনও অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছি। ফলে অর্থনীতিতে দ্রুত উন্নতি করলেও দেশের মানুষ অনেকটা অসচ্ছল জীবনযাপন করে। মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিনিময়ে টাকার কম মূল্যমান, পণ্যের সংকট, বাজারের অব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক সংকট জীবনযাত্রার মান ক্রমেই নিম্নমুখী করছে। মানুষের স্থিতিশীল জীবনের জন্য খাদ্য ও নিরাপদ আশ্রয়ের চাহিদাই প্রাধান্য পায় বেশি। আমাদের আর্থসামাজিক কাঠামোও খাদ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টিকেই জোর দিতে বাধ্য করে। এ দুটি মৌলিক চাহিদাই এখন প্রতিবন্ধকতার মুখে। জীবনযাত্রার মান নিম্নমুখী হলে এবং মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো সঠিকভাবে পূরণ না হলে মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা অনেকাংশে কঠিন হয়ে পড়ে। দেখা যায়, এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী নারী। মৌলিক চাহিদা পূরণ না হলে মানুষ অবদমিত হতে শুরু করে। ফলে বাড়ে নানা অপরাধ, নারীর প্রতি সহিংসতা-নির্যাতন। তাই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের মৌলিক সংকটগুলো সমাধান করতে হবে। আমাদের মূল সংকট অচিহ্নিত নয়। চিহ্নিত এ বিষয়গুলোর সমাধানে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের নীতি-নির্ধারকদেরও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। মানবাধিকারের সুরক্ষার দায় কমবেশি সবারই রয়েছে। মানবাধিকারের সুরক্ষায় কথা নয়, কাজের কাজ দৃশ্যমান হোক।

সূত্র : প্রতিদিনের বাংলাদেশ