10:40 am, Monday, 23 December 2024

 শিল্পকলা চর্চায় ব্যাকরণ জানা খুবই জরুরি : মোহাম্মদ ইউনুস

  • কারুবাক
  • আপডেটের সময় : ০৬:১৩:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩
  • 151 ভিউ
শেয়ার করুন

আমার শিল্প ভাবনা বলতে গেলে আমি মূলত বিমূর্ত অভিব্যক্তিবাদী একজন শিল্পী। আমি মনে করি, শিল্পকলা চর্চা গবেষণাধর্মী একটি বিষয়। এবং প্রত্যেক শিল্পীকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। এ-ও বিশ্বাস করি, প্রত্যেক শিল্পীরই তাঁর শিল্পকর্মে নিজস্ব একটি ভাষা থাকে; যা একজন শিল্পী থেকে অন্য শিল্পীকে আলাদা করা যায়। বিষয়টি আমি বিগত ৫০ বছরে আমার শিল্পকলা যাত্রায় পালন করে আসছি। আমি প্রতিনিয়তই প্রকৃতিকে অবগাহন করি। আমি মনে করি, একজন শিল্পীর সবচেয়ে বড় শিক্ষক প্রকৃতি।

বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মাঝে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন অনুষঙ্গ, ঘটনা, দুর্ঘটনা ইত্যাদি আমাকে আকৃষ্ট করে। এসব বিষয়ের অভ্যন্তরের অনুভূতিগুলো রং, রেখা, টেক্সচারের মাধ্যমে ধারণ করে একটি শিল্পভাষা দেওয়ার চেষ্টা করি। একই সঙ্গে বিভিন্ন ম্যাটারিয়াল এবং টেকনিকের সঙ্গে খেলা করি। ক্যানভাসে প্রয়োগ করা রংকে অনুশাসন করি, আবার কখনও নিজগতিতে চলতে সাহায্য করি। প্রকৃতির বিভিন্ন রঙের অর্থ খোঁজার চেষ্টা করি। ছবিতে কখনওবা ইচ্ছাকৃতভাবে সমস্যার সৃষ্টি করে সমাধানের পথ খুঁজি। আসলে ছবি আঁকার পুরো বিষয়টি মনে করি একটি অনির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা এবং যাত্রাপথে অনুসন্ধানী চোখে কিছু খোঁজা। সে কারণেই আমার ছবিতে বিভিন্ন লেয়ারের আবির্ভাব ঘটে। প্রতিটি পরতে যে রং থাকে তার কোনো না কোনো অংশ অতি সন্তর্পণে ধীরে ধীরে ট্রান্সপারেন্ট হয়ে চিত্রপটের উপরিভাগে উঠতে থাকে। যাকে শিল্পের ভাষায় বলা হয় আন্ডারপেইন্টিং বা সারফেস।

তৈলচিত্র সাধারণত ওপেক হয়ে থাকে কিন্তু বিভিন্ন লেয়ারের উপস্থিতিতে আমার ক্যানভাসের সারফেস হয়ে ওঠে জলরঙের মতো স্বচ্ছ। এটিও আমার শিল্পশৈলীর একটি বিশেষ দিক। এ ক্ষেত্রে আমার আঁকা ওয়াল সিরিজের বর্ণনা দেওয়া যেতে পারে। নতুন অবস্থায় একটি দেয়াল পরিষ্কার থাকে, বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে এর পরিবর্তন ঘটে। এই রূপের পরিবর্তনগুলো লেয়ার আকারে আমার ক্যানভাসে ধরা দেয়। এরপর কল্পনায় ধরে রাখা বিষয়গুলো আস্তে আস্তে উঠে আসে ক্যানভাসে। একটি ছবি কখনও শেষ হয় না। তবে কোথাও না কোথাও থামতে হয়। আমি এর ব্যতিক্রম নই। ক্যানভাসে কখনও বাণিজ্যে কিছু সমস্যার সৃষ্টি করে, আবার তা সমাধানের চেষ্টা করি। সে সময় ক্যানভাসের সঙ্গে আমার কথোপকথন হয়, ক্যানভাস কখনও কখনও বলে দেয় কোথায় থামতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, একজন শিল্পী কখনও তৃপ্ত হন না। কিন্তু কোথাও তাঁকে থামতে হবেই হবে। আমি মনে করি, একজন শিল্পীর শিল্পকলা চর্চার ক্ষেত্রে ব্যাকরণ জানা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, ব্যাকরণ না জানলে ব্যাকরণ ভাঙা যায় না, আর এটিই হচ্ছে একজন সৎশিল্পীর দায়িত্ব।

জাগতিক জীবনের ঊর্ধ্বে উঠে আধ্যাত্মিকতার আশ্রয়ে থেকে ছবির মধ্যে দর্শন প্রদান আমার ছবির অন্যতম প্রধান একটি বৈশিষ্ট্য। আমি মনে করি, প্রত্যেক শিল্পীর সেই ধ্যানের জায়গাটি ছোট কিংবা বড় সেটি থাকা উচিত। আমি স্টুডিওতে কাজের সময় কাউকে প্রবেশাধিকার দিই না। আমার ছবি আঁকার কিংবা সাধনার প্রেরণা আমার সহধর্মিণী রিফফাত ইউনুস। তাঁর এই অনুপ্রেরণা আমার ছবি আঁকার ক্ষেত্রে এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে। তাঁর সমালোচনা আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে সাহস জোগায়।

আমি মনে করি, এই প্রজন্মের শিল্পীরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সারা বিশ্বের বিভিন্ন মিউজিয়াম, গ্যালারি কিংবা শিল্পীর স্টুডিও দেখার সুযোগ পাচ্ছে। এ ছাড়া আর্ট সামিট, এশিয়ান আর্ট বিয়েনালে বিদেশি শিল্পীদের কাজ দেখার সুযোগ তাদের চিন্তাশক্তি আরও উর্বর করছে।

সূত্র : দৈনিক সমকাল

#
জনপ্রিয়

 শিল্পকলা চর্চায় ব্যাকরণ জানা খুবই জরুরি : মোহাম্মদ ইউনুস

আপডেটের সময় : ০৬:১৩:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩
শেয়ার করুন

আমার শিল্প ভাবনা বলতে গেলে আমি মূলত বিমূর্ত অভিব্যক্তিবাদী একজন শিল্পী। আমি মনে করি, শিল্পকলা চর্চা গবেষণাধর্মী একটি বিষয়। এবং প্রত্যেক শিল্পীকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। এ-ও বিশ্বাস করি, প্রত্যেক শিল্পীরই তাঁর শিল্পকর্মে নিজস্ব একটি ভাষা থাকে; যা একজন শিল্পী থেকে অন্য শিল্পীকে আলাদা করা যায়। বিষয়টি আমি বিগত ৫০ বছরে আমার শিল্পকলা যাত্রায় পালন করে আসছি। আমি প্রতিনিয়তই প্রকৃতিকে অবগাহন করি। আমি মনে করি, একজন শিল্পীর সবচেয়ে বড় শিক্ষক প্রকৃতি।

বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মাঝে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন অনুষঙ্গ, ঘটনা, দুর্ঘটনা ইত্যাদি আমাকে আকৃষ্ট করে। এসব বিষয়ের অভ্যন্তরের অনুভূতিগুলো রং, রেখা, টেক্সচারের মাধ্যমে ধারণ করে একটি শিল্পভাষা দেওয়ার চেষ্টা করি। একই সঙ্গে বিভিন্ন ম্যাটারিয়াল এবং টেকনিকের সঙ্গে খেলা করি। ক্যানভাসে প্রয়োগ করা রংকে অনুশাসন করি, আবার কখনও নিজগতিতে চলতে সাহায্য করি। প্রকৃতির বিভিন্ন রঙের অর্থ খোঁজার চেষ্টা করি। ছবিতে কখনওবা ইচ্ছাকৃতভাবে সমস্যার সৃষ্টি করে সমাধানের পথ খুঁজি। আসলে ছবি আঁকার পুরো বিষয়টি মনে করি একটি অনির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা এবং যাত্রাপথে অনুসন্ধানী চোখে কিছু খোঁজা। সে কারণেই আমার ছবিতে বিভিন্ন লেয়ারের আবির্ভাব ঘটে। প্রতিটি পরতে যে রং থাকে তার কোনো না কোনো অংশ অতি সন্তর্পণে ধীরে ধীরে ট্রান্সপারেন্ট হয়ে চিত্রপটের উপরিভাগে উঠতে থাকে। যাকে শিল্পের ভাষায় বলা হয় আন্ডারপেইন্টিং বা সারফেস।

তৈলচিত্র সাধারণত ওপেক হয়ে থাকে কিন্তু বিভিন্ন লেয়ারের উপস্থিতিতে আমার ক্যানভাসের সারফেস হয়ে ওঠে জলরঙের মতো স্বচ্ছ। এটিও আমার শিল্পশৈলীর একটি বিশেষ দিক। এ ক্ষেত্রে আমার আঁকা ওয়াল সিরিজের বর্ণনা দেওয়া যেতে পারে। নতুন অবস্থায় একটি দেয়াল পরিষ্কার থাকে, বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে এর পরিবর্তন ঘটে। এই রূপের পরিবর্তনগুলো লেয়ার আকারে আমার ক্যানভাসে ধরা দেয়। এরপর কল্পনায় ধরে রাখা বিষয়গুলো আস্তে আস্তে উঠে আসে ক্যানভাসে। একটি ছবি কখনও শেষ হয় না। তবে কোথাও না কোথাও থামতে হয়। আমি এর ব্যতিক্রম নই। ক্যানভাসে কখনও বাণিজ্যে কিছু সমস্যার সৃষ্টি করে, আবার তা সমাধানের চেষ্টা করি। সে সময় ক্যানভাসের সঙ্গে আমার কথোপকথন হয়, ক্যানভাস কখনও কখনও বলে দেয় কোথায় থামতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, একজন শিল্পী কখনও তৃপ্ত হন না। কিন্তু কোথাও তাঁকে থামতে হবেই হবে। আমি মনে করি, একজন শিল্পীর শিল্পকলা চর্চার ক্ষেত্রে ব্যাকরণ জানা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, ব্যাকরণ না জানলে ব্যাকরণ ভাঙা যায় না, আর এটিই হচ্ছে একজন সৎশিল্পীর দায়িত্ব।

জাগতিক জীবনের ঊর্ধ্বে উঠে আধ্যাত্মিকতার আশ্রয়ে থেকে ছবির মধ্যে দর্শন প্রদান আমার ছবির অন্যতম প্রধান একটি বৈশিষ্ট্য। আমি মনে করি, প্রত্যেক শিল্পীর সেই ধ্যানের জায়গাটি ছোট কিংবা বড় সেটি থাকা উচিত। আমি স্টুডিওতে কাজের সময় কাউকে প্রবেশাধিকার দিই না। আমার ছবি আঁকার কিংবা সাধনার প্রেরণা আমার সহধর্মিণী রিফফাত ইউনুস। তাঁর এই অনুপ্রেরণা আমার ছবি আঁকার ক্ষেত্রে এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে। তাঁর সমালোচনা আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে সাহস জোগায়।

আমি মনে করি, এই প্রজন্মের শিল্পীরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সারা বিশ্বের বিভিন্ন মিউজিয়াম, গ্যালারি কিংবা শিল্পীর স্টুডিও দেখার সুযোগ পাচ্ছে। এ ছাড়া আর্ট সামিট, এশিয়ান আর্ট বিয়েনালে বিদেশি শিল্পীদের কাজ দেখার সুযোগ তাদের চিন্তাশক্তি আরও উর্বর করছে।

সূত্র : দৈনিক সমকাল