9:54 am, Monday, 23 December 2024

আহমদ ছফার লেখায় জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক এবং সলিমুল্লাহ খান

  • কারুবাক
  • আপডেটের সময় : ০৭:৫১:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪
  • 242 ভিউ
শেয়ার করুন
আহমেদ জহুর :
সলিমুল্লাহ খানের বয়স আমার চাইতে অন্তত পনের বছর কম। সে রাজ্জাক সাহেবকে নির্জলা বকাঝকা করে আস্ত একটা বই লিখে ফেলছিল। বইটা পড়ে শুধু আমি নই, রাজ্জাক স্যারের ঘনিষ্ঠদের অনেকেই অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। সলিমুল্লাহ খান পুস্তক রচনা করে বসে থাকেনি। এক কপি নিজের হাতে লিখে বাড়িতে গিয়ে উপহার দিয়ে এসেছিল। সাহস করে স্যারের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করিনি।
একবার সলিমুল্লাহর ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিল। দু’জন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির সার্টিফিকেট খুবই প্রয়োজন। তারমধ্যে একজন প্রফেসর রাজ্জাক, অন্যজন ড. কামাল হোসেন।
সলিমুল্লাহ বারবার আমাকে অনুরোধ করতে লাগল আমি যেন তাকে স্যারের কাছে নিয়ে যাই। স্যারকেতো তাকে প্রশংসাপত্র দিতে হবে। অধিকন্তু ড. কামালের প্রশংসাপত্রও সংগ্রহ করে দিতে হবে। আমি বারবার এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সলিমুল্লাহ নাছোড়বান্দা।
অগত্য একদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে স্যারকে গিয়ে বললাম, কাল সকালে আপনার ওখানে নাস্তা করতে যাবো। স্যার বললেন, ঠিক আছে আয়েন। একথা বলে স্যার দাবাখেলায় মন দিলেন। আমি আবার স্যারের দৃষ্টি আর্কষণ করে বললাম, স্যার সলিমুল্লাহ খানও আমার সঙ্গে আসার বায়না ধরছে। স্যার বললেন, ঠিক আছে লইয়া আয়েন।
স্যার তখন একা থাকতেন। পরিবারের অন্য সদস্যরা গুলশানের বাড়িতে চলে গেছেন। সলিমুল্লাহ খানের সঙ্গে যথারীতি কথা বললেন। কোন্ বিষয়ের উপর গবেষণা করতে চায়, তা নিয়েও আলাপ করলেন। চলে আসার সময় সলিমুল্লাহ খানকে বললেন, ঠিক আছে দুইদিন বাদে আয়েন। কাইল আমি কামাল হোসেনের কাছে যামুনে। সেবার সলিমুল্লাহর ক্যামব্রিজ যাওয়া হয়নি। কিন্তু রাজ্জাক স্যার নিজে প্রশংসাপত্র লিখে দিয়েছিলেন এবং ড. কামাল হোসেনের কাছ থেকেও প্রশংসাপত্র সংগ্রহ এনে দিয়েছিলেন।
কিছুদিন পর আমি স্যারের কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলাম, সলিমুল্লাহর বইটি তিনি পড়েছেন কি না।
স্যার বললেন, হ পড়ছি। তাতে কী অইছে। ছেলেটার ত ট্যালেন্ট আছে। কী লিখছে না লিখছে হেইডা মনে কইরা কি লাভ। হের ত কিছু করার ক্ষমতা আছে। হামিদাও আমারে একই কথা কইল। আমি যখন কামালরে কইলাম দুই লাইন লেইখ্যা দাও, হামিদা কয় হেই ছেলেটা না যে আপনের ওপর বই লেখছে? হেরে আমি ঘরে ঢুকবার দিমু না। আমি কইলাম, হেইডা কি একটা কথা অইল! একটা প্রমিসিং ছেলে, এমন কজন পাওয়া যায়, দাও দুই কলম লেইখ্যা।
সলিমুল্লাহ খান যখন আমেরিকা গেলো, প্লেনভাড়ার টাকার এক অংশ রাজ্জাক স্যার দিয়েছিলেন। এখনো সলিমুল্লাহর খবরাখবর জানতে চান।
আহমদ ছফা
যদ্যাপি আমার গুরু (১৯৯৮)
 সূত্র : আহমেদ জহুরের ফেসবুক থেকে
#
জনপ্রিয়

আহমদ ছফার লেখায় জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক এবং সলিমুল্লাহ খান

আপডেটের সময় : ০৭:৫১:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪
শেয়ার করুন
আহমেদ জহুর :
সলিমুল্লাহ খানের বয়স আমার চাইতে অন্তত পনের বছর কম। সে রাজ্জাক সাহেবকে নির্জলা বকাঝকা করে আস্ত একটা বই লিখে ফেলছিল। বইটা পড়ে শুধু আমি নই, রাজ্জাক স্যারের ঘনিষ্ঠদের অনেকেই অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। সলিমুল্লাহ খান পুস্তক রচনা করে বসে থাকেনি। এক কপি নিজের হাতে লিখে বাড়িতে গিয়ে উপহার দিয়ে এসেছিল। সাহস করে স্যারের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করিনি।
একবার সলিমুল্লাহর ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিল। দু’জন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির সার্টিফিকেট খুবই প্রয়োজন। তারমধ্যে একজন প্রফেসর রাজ্জাক, অন্যজন ড. কামাল হোসেন।
সলিমুল্লাহ বারবার আমাকে অনুরোধ করতে লাগল আমি যেন তাকে স্যারের কাছে নিয়ে যাই। স্যারকেতো তাকে প্রশংসাপত্র দিতে হবে। অধিকন্তু ড. কামালের প্রশংসাপত্রও সংগ্রহ করে দিতে হবে। আমি বারবার এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সলিমুল্লাহ নাছোড়বান্দা।
অগত্য একদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে স্যারকে গিয়ে বললাম, কাল সকালে আপনার ওখানে নাস্তা করতে যাবো। স্যার বললেন, ঠিক আছে আয়েন। একথা বলে স্যার দাবাখেলায় মন দিলেন। আমি আবার স্যারের দৃষ্টি আর্কষণ করে বললাম, স্যার সলিমুল্লাহ খানও আমার সঙ্গে আসার বায়না ধরছে। স্যার বললেন, ঠিক আছে লইয়া আয়েন।
স্যার তখন একা থাকতেন। পরিবারের অন্য সদস্যরা গুলশানের বাড়িতে চলে গেছেন। সলিমুল্লাহ খানের সঙ্গে যথারীতি কথা বললেন। কোন্ বিষয়ের উপর গবেষণা করতে চায়, তা নিয়েও আলাপ করলেন। চলে আসার সময় সলিমুল্লাহ খানকে বললেন, ঠিক আছে দুইদিন বাদে আয়েন। কাইল আমি কামাল হোসেনের কাছে যামুনে। সেবার সলিমুল্লাহর ক্যামব্রিজ যাওয়া হয়নি। কিন্তু রাজ্জাক স্যার নিজে প্রশংসাপত্র লিখে দিয়েছিলেন এবং ড. কামাল হোসেনের কাছ থেকেও প্রশংসাপত্র সংগ্রহ এনে দিয়েছিলেন।
কিছুদিন পর আমি স্যারের কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলাম, সলিমুল্লাহর বইটি তিনি পড়েছেন কি না।
স্যার বললেন, হ পড়ছি। তাতে কী অইছে। ছেলেটার ত ট্যালেন্ট আছে। কী লিখছে না লিখছে হেইডা মনে কইরা কি লাভ। হের ত কিছু করার ক্ষমতা আছে। হামিদাও আমারে একই কথা কইল। আমি যখন কামালরে কইলাম দুই লাইন লেইখ্যা দাও, হামিদা কয় হেই ছেলেটা না যে আপনের ওপর বই লেখছে? হেরে আমি ঘরে ঢুকবার দিমু না। আমি কইলাম, হেইডা কি একটা কথা অইল! একটা প্রমিসিং ছেলে, এমন কজন পাওয়া যায়, দাও দুই কলম লেইখ্যা।
সলিমুল্লাহ খান যখন আমেরিকা গেলো, প্লেনভাড়ার টাকার এক অংশ রাজ্জাক স্যার দিয়েছিলেন। এখনো সলিমুল্লাহর খবরাখবর জানতে চান।
আহমদ ছফা
যদ্যাপি আমার গুরু (১৯৯৮)
 সূত্র : আহমেদ জহুরের ফেসবুক থেকে