কারুবাক ডেস্ক :
প্রতি বছরই দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত পুরস্কার হলো— একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার, ম্যান বুকার এবং পুলিৎজার পুরস্কার। সেসব নিয়েই আজকের বিশেষ আয়োজন। আসুন জেনে নিই, কারা পেয়েছেন এসব গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার—
সাহিত্যে জাতীয় পুরস্কার
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কারের মধ্যে একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার এবং বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার অন্যতম। ২০২৩ সালে ‘ভাষা ও সাহিত্য’ ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় ড. মনিরুজ্জামান ‘একুশে পদক’ পেয়েছেন। অপরদিকে ‘সাহিত্য’ ক্যাটাগরিতে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ পেয়েছেন মরহুম ড. মুহাম্মদ মঈনুদ্দিন আহমেদ (সেলিম আল দীন)।
এ ছাড়া ২০২২ সালের জন্য কবিতায় ফারুক মাহমুদ ও তারিক সুজাত, কথাসাহিত্যে তাপস মজুমদার ও পারভেজ হোসেন, প্রবন্ধ বা গবেষণায় মাসুদুজ্জামান, অনুবাদে আলম খোরশেদ, নাটকে মিলন কান্তি দে ও ফরিদ আহমদ দুলাল, শিশুসাহিত্যে ধ্রুব এষ, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় মুহাম্মদ শামসুল হক, বঙ্গবন্ধুবিষয়ক গবেষণায় সুভাষ সিংহ রায়, বিজ্ঞান বা কল্পবিজ্ঞান বা পরিবেশবিজ্ঞানে মোকারম হোসেন, আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথা বা ভ্রমণকাহিনিতে ইকতিয়ার চৌধুরী এবং ফোকলোরে আবদুল খালেক ও মুহম্মদ আবদুল জলিল বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান।
সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন জন ফসে
২০২৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন নরওয়ের লেখক ও নাট্যকার জন ওলাভ ফসে (জন ফসে)। ১৯৫৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নরওয়ের হাউজসুন্ডে তার জন্ম। রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি ৫ অক্টোবর পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম ঘোষণা করে। সাত বছর বয়সে একটি গুরুতর দুর্ঘটনা তাকে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যায়; সেই অভিজ্ঞতা তাকে লেখালেখিতে প্রভাবিত করেছে। তিনি বার্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘তুলনামূলক সাহিত্য’ বিষয়ে পড়াশোনা করেন।
তার প্রথম উপন্যাস ‘Raudt, svart’ (রেড, ব্ল্যাক) ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত হয়। তার প্রথম নাটক ‘ওগ অলড্রি স্কাল ভি স্কিলজাস্ট’ (এন্ড উইল নেভার বি বিভার্ট) ১৯৯৪ সালে অভিনীত হয়। জন ফসে একাধারে উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা, শিশুতোষ বই, প্রবন্ধ এবং নাটক লিখেছেন। তার লেখা চল্লিশটিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি সংগীতে বংশীবাদক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি শিশুদের জন্য গানও লিখেছেন।
দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফের সেরা ১০০ জীবন্ত মেধাবীর তালিকায় তাকে ৮৩ নম্বরে স্থান দেওয়া হয়। তিনি আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রী স্লোভাকের সঙ্গে অস্ট্রিয়ার হেইনবার্গে কিছু সময় অতিবাহিত করেন। তবে বার্গেনে তার একটি বাড়ি এবং পশ্চিম নরওয়েতে দুটি বাড়ি আছে।
ম্যান বুকার পেয়েছেন আইরিশ লেখক লিঞ্চ
২০২৩ সালের ‘ম্যান বুকার পুরস্কার’ জিতেছেন আইরিশ লেখক পল লিঞ্চ। আয়ারল্যান্ডের ওপর নেমে আসা অত্যাচার নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘প্রফেট গান’র জন্য তিনি ২০২৩ সালে বুকার জয় করেন। সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা আরও পাঁচজনকে পেছনে ফেলে লিঞ্চ মর্যাদাবান পুরস্কারটি জিতেছেন।
উপন্যাসে আয়ারল্যান্ডকে একটি নব্য ফ্যাসিবাদী জাতীয়তাবাদী সরকারের শাসনের অধীনে কল্পনা করা হয়েছে। অস্থির সময়কালের প্রেক্ষাপটের এ গল্পে ইউনিয়ন নেতা ও শাসনের অনুভূত শত্রুদের রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখা যায়। এর ফলে গৃহযুদ্ধ সৃষ্টি হয়। সঙ্গে অর্থনৈতিক পতন। এর মূল অংশে ডাবলিনে চার সন্তানের এক মা কীভাবে তার পরিবারকে এ রকম অস্থির সময়কালে সর্বগ্রাসীবাদ থেকে রক্ষা করে তা-ই তুলে ধরা হয়েছে।
পুলিৎজার পুরস্কার
২০২৩ সালের পুলিৎজার সাহিত্যের কথাসাহিত্য শাখায় পুরস্কার পেয়েছেন দুজন—কথাসাহিত্যিক বারবারা কিংসোলভার ও হারমান ডিয়াজ। কিংসোলভার কথাসাহিত্যের পাশাপাশি কবিতা এবং প্রবন্ধও লেখেন। তার পুলিৎজার পাওয়া উপন্যাসের নাম ‘ডেমন কপারহেড’। আরেকজন পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী কথাসাহিত্যিক হলেন আর্জেন্টিনায় জন্ম নেওয়া ঔপন্যাসিক হারমান ডিয়াজ। তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘ট্রাস্ট’র জন্য পেলেন পুলিৎজার পুরস্কার।
ভার্জিনিয়ার আটলান্টিক থিয়েটার কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছেন ক্যালিফোর্নিয়ার ইরানি-আমেরিকান নাট্যকার সানাজ তুসি। এবারের পুলিৎজার সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছে তার নাটক ‘ইংলিশ’। ২০২৩ সালের পুলিৎজার সাহিত্যের কবিতা শাখায় পুরস্কার পেয়েছেন সেন্ট লুইয়ে অবস্থিত ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কবি কার্ল ফিলিপস। তার কাব্যগ্রন্থের নাম ‘দেন দ্য ওয়ার: অ্যান্ড সিলেক্টেড পোয়েমস ২০০৭-২০২০’।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, লেখক ও সাংবাদিক