হাফেজ নাঈম উদ্দীন :
কাব্য সাহিত্য হচ্ছে একটি মুক্ত দেয়াল। যেখানে কবিরা আলতো করে খোদাই করে দিয়ে যায় আবেগ, আবদার, অভিযোগ ও অনুশোচনার গল্প। এখানে তারা সাহিত্যের মাধুরী মিশিয়ে বলে যায় আটপৌরে জীবনের নানা অসঙ্গতির কথামালা। এই হৃদয়ছোঁয়া কাব্য সাহিত্যে বিচরণ করতে আসে নানা সাহিত্য প্রেমী। মানুষের মননে বোধ জাগিয়ে তোলা এবং সত্য ও সুন্দরের সন্ধান দেয়া সাহিত্যের কাজ। কারণ যা কিছু সত্য, তা-ই সুন্দর। আর সত্য ও সুন্দরের চর্চা এবং অনুসন্ধান করতে গেলে ইসলামী সাহিত্য চর্চার কোনো বিকল্প নেই। কারণ, ইসলাম অর্থ হচ্ছে শান্তি ও সুন্দরের প্রতি আত্মসমর্পণ।
Pauseমহান আল্লাহ তাঁর নবী সা:-কে নবুওয়াতের যে মহান দায়িত্ব দান করেছেন, তা কবিত্ব বা কাব্য থেকে অনেক ঊর্ধ্বে। রাসূল সা: তখনকার কবিদের ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপের নিন্দা করেছেন। তিনি কোনো কবি ছিলেন না। তবুও তাঁর ওপর অবতীর্ণ কোরআনের ভাষাশৈলী দেখে মক্কার কাফেররা তাকে কবি বলে আখ্যায়িত করার অপচেষ্টা করেছেন। এ ব্যাপারে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, আমি তাঁকে কবিতা শিক্ষা দেইনি এবং এরূপ কাজ তাঁর পক্ষে শোভনীয়ও নয়। (সূরা ইয়াসিন, আয়াত : ৬৯)
তবে নবী করিম সা: সত্যবাদী কবিদের প্রশংসা করেছেন। এ কাজে তাদেরকে উৎসাহও প্রদান করেছেন। কাব্যের ব্যাপারে রাসূল সা:-এর বক্তব্য হলো, কবিতা কথার মতোই। ভালো কথা যেমন সুন্দর, ভালো কবিতাও তেমন সুন্দর। মন্দ কবিতা মন্দ কথার মতোই অসুন্দর। (মিশকাত, পৃষ্ঠা : ৪১১)
রাসূল সা: আরো বলেন, নিশ্চয় কোনো কোনো কবিতায় রয়েছে জ্ঞানের কথা। (মিশকাতুল মাসাবিহ, পৃষ্ঠা : ৪০৯)
এছাড়া রাসূল সা:-এর পবিত্র ধমনিতে কাব্য প্রতিভার শোনিতধারা সদা বহমান ছিল। তাঁর মা আমিনা বিনতে ওয়াহহাব ছিলেন একজন স্বভাব কবি। মহানবী সা:-এর শ্রদ্ধেয় পিতার বিয়োগের পর মা আমিনা যে মর্সিয়া বা শোকগাঁথা রচনা করেছিলেন, তা ইতিহাস খ্যাত।
চাচা আবু তালেবের কবিখ্যাতি ছিল সর্বত্র সুবিদিত। রাসূল সা:-এর শৈশবও অতিবাহিত হয়েছিল ভাষা শুদ্ধতার চর্চা ও সাহিত্যের রস স্নিগ্ধ পরিবেশের আবহে। ফলে তিনি নবুওয়াত প্রাপ্তির আগেই আরবি ভাষা ও সাহিত্যে ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে পেরেছিলেন। তাই তিনি বিভিন্ন সময় গর্ব করে বলতেন, আমি আরবের সর্বোত্তম ভাষাশৈলীর অধিকারী।
এ আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে ইসলাম কেবল একটি আচার সর্বস্ব ধর্ম নয়। বরং ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান, যা জীবনের সকল দিক ও বিভাগে বিস্তৃত। এভাবেই ইসলামকে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে ও শেখাতে হবে। কিন্তু বর্তমান সমাজব্যবস্থায় ইসলামকে খণ্ডিতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। ধর্মকে শুধু বিশ্বাস ও আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তাই ইসলামের মৌলিক স্তম্ভসমূহ আকিদা-বিশ্বাস, আর্তসামাজিক ও পারস্পরিক সম্পর্ক, লেনদেন, বিচারব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য, মুসলিমদের অধিকার, রাজনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ইসলামের সুন্দর সংস্কৃতিকে পরিপূর্ণ বিধানরূপে পাঠ্যপুস্তকে উপস্থাপন করা। অপসংস্কৃতির মোহ ও মায়া ত্যাগ করে ইসলামি সংস্কৃতি ও সাহিত্য চর্চার প্রতি উৎসাহিত করা। এতে ভেঙে যাবে অবিশ্বাসের দেয়াল, নির্মিত হবে সত্যের ইমারাত।