তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক :
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারকরা। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। আগামী বছর বিশ্বের বেশ কিছু দেশে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশে আগামী জানুয়ারির শুরুতে জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা। সেখানে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশে ২০২৪ সালের শুরুতেই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি (বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না)।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সরকারপন্থী সংবাদমাধ্যম ও ইনফ্লুয়েন্সাররা (প্রভাবক) সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এআই ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন এআই প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের টুলস দিয়ে এগুলো তৈরি করা হচ্ছে। এমন একটি কথিত ‘নিউজ ক্লিপে’ দেখা যায়, এআই ব্যবহার করে তৈরি করা উপস্থাপক যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করছে। নির্বাচন সামনে রেখে শেখ হাসিনার সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে যাচ্ছে।
আরেকটি ডিপফেক ভিডিওতে (প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি ভুয়া ভিডিও) দেখা যায়, একজন বিরোধীদলীয় নেতা গাজায় ইসরায়েলের হামলার শিকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থনের বিষয় নিয়ে ব্যঙ্গ করছেন। যা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে নিজের রাজনীতি ধ্বংসের শামিল। আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ায় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এআই ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো ঠেকানোর জন্য প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর বিভিন্ন দেশের চাপ বাড়ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গুগল ও মেটা সম্প্রতি তাদের নীতিমালাও ঘোষণা করেছে। তবে বাংলাদেশের উদাহরণগুলো বলছে, নির্বাচনের ওপর এআই টুলগুলো কীভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, এটাই শুধু ভাবনার বিষয় নয়। অন্য বিষয়টি হলো এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন। কারণ, বড় বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মতো বিজ্ঞাপনের ছোট বাজার উপেক্ষা করে।
OpenAI-এর ChatGPT এবং AI ভিডিও জেনারেটরের মতো টুলের উত্থান বিভ্রান্তিকর বা মিথ্যা রাজনৈতিক বিষয়বস্তু তৈরির বিষয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশভিত্তিক গণমাধ্যম গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘এআই ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগুলো তৈরি করা হচ্ছে ছবি ও ভিডিও সম্পাদনার সাধারণ প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে। তবে যখন এআই প্রযুক্তি দিয়ে বিপুল পরিমাণ মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হবে, সেটা কত বড় হুমকি হবে, তা কল্পনাও করা যায় না।’
তেল আবিবভিত্তিক এআই ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ডি-আইডি ব্যবহার করে তৈরি একটি ডিপফেক ভিডিওতে দেখা যায়, বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান তার বয়স নিয়ে মিথ্যা বলছেন। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান দ্য টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট বলছে, এই ভুয়া ভিডিও তৈরি করা হয়েছে ওই নেতার সম্মানহানির জন্য। এ ব্যাপারে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ডি-আইডির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও প্রতিষ্ঠানটি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন শাবনাজ রশিদ দিয়া। তিনি বলেন, ‘প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো মিথ্যা তথ্যগুলো ধরার জন্য নির্ভরযোগ্য কোনো এআই শনাক্তকরণ টুল না থাকা। আবার কিছু টুল আছে, যেগুলো ইংরেজি ভাষা ছাড়া অন্য ভাষার কনটেন্টে (আধেয়) অকার্যকর। বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে এআই নিয়ন্ত্রণে যে কাজ করছে, বাংলাদেশের মতো ছোট বিজ্ঞাপনের বাজারে তার প্রভাব হবে সীমিত। কারণ, তারা পশ্চিমা দেশগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছে। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে কী হচ্ছে, সেটা প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না।
সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক