8:33 pm, Sunday, 22 December 2024

নিজেকে মেলে ধরছে সৌদি আরব

  • কারুবাক
  • আপডেটের সময় : ০৬:০৭:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩
  • 60 ভিউ
শেয়ার করুন

পাহাড়, নীল পানি আর সাদা বালুর সমুদ্রসৈকত, মরুভূমি, অপরূপ সৌন্দর্যময় দ্বীপ, ঐতিহাসিক নিদর্শন, বিলাসবহুল রিসোর্ট কিংবা ব্যস্ততম শহর—পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সবকিছুই রয়েছে সৌদি আরবে।

সৌদি আরবকে শুধু ইসলামের পবিত্র ভূমি আর প্রবাসীদের কর্মস্থল হিসেবেই বাংলাদেশের মানুষ দেখে থাকে কিংবা এত দিন দেখে এসেছে। খুব কম মানুষই এই ধারণার বাইরে গিয়ে দেশটিকে সত্যিকার অর্থে আবিষ্কার করেছে। ফলে বেশির ভাগ মানুষ সৌদি আরবকে ভুলবশত শুধু মরুভূমি এবং তেলের দেশ হিসেবে চিনে এসেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সৌদি আরব হতে যাচ্ছে আগামী দশকের বড় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি।

তেল উত্তোলনের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে এনে অর্থনীতির বিকল্প পথ খুঁজতে ভিশন ২০৩০ নামে একটি বড় আকারের প্রকল্প নিয়েছে বর্তমান সৌদি রাজপুত্র মোহাম্মদ বিন সালমান। সেই প্রকল্পেরই অংশ হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি তৈরি। আমি কিছুদিন আগে গাড়ি ভাড়া করে সৌদির বিভিন্ন অংশ ও শহর ঘুরে দেখেছি। প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটারের বেশি গাড়ি চালানোর পর এ কথা বলতে পারি যে সৌদি আরবের সামনে বিশাল সুযোগ আছে পর্যটনে সেরা হওয়ার।

উঁচু উঁচু পাহাড়, নীল পানি আর সাদা বালুর সমুদ্রসৈকত, মরুভূমি, অপরূপ সৌন্দর্যময় দ্বীপ, ঐতিহাসিক নিদর্শন, বিলাসবহুল রিসোর্ট কিংবা ব্যস্ততম শহর—পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সবকিছুই রয়েছে দেশটিতে। এই জায়গাগুলোকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য এবং আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সৌদি আরব সরকার ৮০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিশাল বড় একটি বাজেট নির্ধারণ করেছে। আপনি ঠিকই দেখেছেন, ৮০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার!

সৌদি আরবের প্রথম ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্বীকৃতি পাওয়া জায়গা মাদাইন সালেহ। পৃথিবীর সাতটি আশ্চর্যের একটি সনাতন পেত্রা ছিল নাবাতাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী। আর এই মাদাইন সালেহ ছিল সেই সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর

আল বাহাহ নামের পুরোনো ঐতিহাসিক একটি গ্রাম। ছবি: লেখক

সুতরাং বুঝতেই পারছেন, আগামী এক দশকের মধ্যে সৌদি আরব কোন স্তরের ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশনে পরিণত হতে যাচ্ছে। এ ছাড়া নামীদামি ফুটবলারদের নিয়ে যাওয়া এবং ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের বিষয়গুলোও জড়িত সৌদিকে বিশ্বের কাছে আরও পরিচিত করার জন্য।

তাহলে সৌদি কি পশ্চিমের মতো আধুনিক হয়ে যাচ্ছে? আমি বলব, না। সৌদি আরব বিশ্বের সামনে নিজেকে তুলে ধরছে, এটা ঠিক।

কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তারা পুরোপুরি পশ্চিমা সংস্কৃতিকে অনুসরণ করছে—দুবাই যেমনটা করেছে। দুবাই থেকে সৌদি আরব সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে নিজেদের বিশ্বের সামনে তুলে ধরছে। দেশটি আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে নিজেদের কৃষ্টি ও কালচার এবং ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে ধারণ করে। সেটাকেই বিশ্বের সামনে মেলে ধরছে, বিষয়টি প্রশংসনীয়। তারা তাদের ঐতিহাসিক স্থাপনা ও নিদর্শনগুলোকে ধ্বংস করে সেখানে নতুন কিছু নির্মাণ না করে পুরোনো স্থাপনাগুলোকেই পুনর্নির্মাণ করে বিশ্বের কাছে তুলে ধরছে।

পশ্চিমের একই ধাঁচের অবকাঠামো, একই ধাঁচের শহর, একই ধাঁচের নিদর্শন দেখতে দেখতে অনেকে এখন ক্লান্ত। সত্যিকারের পর্যটকদের চাহিদা নতুন এবং ভিন্ন ধরনের কিছু অভিজ্ঞতা নেওয়া। ঠিক এই চাহিদার কথা চিন্তা করে সৌদি আরব তাদের ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রিকে তৈরি করছে এবং বিশ্বের সামনে মেলে ধরছে। পর্যটকদের বিষয়টি দারুণভাবে আকৃষ্ট করছে।

ইয়াসির আরাফাত

 

#
জনপ্রিয়

নিজেকে মেলে ধরছে সৌদি আরব

আপডেটের সময় : ০৬:০৭:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩
শেয়ার করুন

পাহাড়, নীল পানি আর সাদা বালুর সমুদ্রসৈকত, মরুভূমি, অপরূপ সৌন্দর্যময় দ্বীপ, ঐতিহাসিক নিদর্শন, বিলাসবহুল রিসোর্ট কিংবা ব্যস্ততম শহর—পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সবকিছুই রয়েছে সৌদি আরবে।

সৌদি আরবকে শুধু ইসলামের পবিত্র ভূমি আর প্রবাসীদের কর্মস্থল হিসেবেই বাংলাদেশের মানুষ দেখে থাকে কিংবা এত দিন দেখে এসেছে। খুব কম মানুষই এই ধারণার বাইরে গিয়ে দেশটিকে সত্যিকার অর্থে আবিষ্কার করেছে। ফলে বেশির ভাগ মানুষ সৌদি আরবকে ভুলবশত শুধু মরুভূমি এবং তেলের দেশ হিসেবে চিনে এসেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সৌদি আরব হতে যাচ্ছে আগামী দশকের বড় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি।

তেল উত্তোলনের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে এনে অর্থনীতির বিকল্প পথ খুঁজতে ভিশন ২০৩০ নামে একটি বড় আকারের প্রকল্প নিয়েছে বর্তমান সৌদি রাজপুত্র মোহাম্মদ বিন সালমান। সেই প্রকল্পেরই অংশ হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি তৈরি। আমি কিছুদিন আগে গাড়ি ভাড়া করে সৌদির বিভিন্ন অংশ ও শহর ঘুরে দেখেছি। প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটারের বেশি গাড়ি চালানোর পর এ কথা বলতে পারি যে সৌদি আরবের সামনে বিশাল সুযোগ আছে পর্যটনে সেরা হওয়ার।

উঁচু উঁচু পাহাড়, নীল পানি আর সাদা বালুর সমুদ্রসৈকত, মরুভূমি, অপরূপ সৌন্দর্যময় দ্বীপ, ঐতিহাসিক নিদর্শন, বিলাসবহুল রিসোর্ট কিংবা ব্যস্ততম শহর—পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সবকিছুই রয়েছে দেশটিতে। এই জায়গাগুলোকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য এবং আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সৌদি আরব সরকার ৮০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিশাল বড় একটি বাজেট নির্ধারণ করেছে। আপনি ঠিকই দেখেছেন, ৮০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার!

সৌদি আরবের প্রথম ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্বীকৃতি পাওয়া জায়গা মাদাইন সালেহ। পৃথিবীর সাতটি আশ্চর্যের একটি সনাতন পেত্রা ছিল নাবাতাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী। আর এই মাদাইন সালেহ ছিল সেই সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর

আল বাহাহ নামের পুরোনো ঐতিহাসিক একটি গ্রাম। ছবি: লেখক

সুতরাং বুঝতেই পারছেন, আগামী এক দশকের মধ্যে সৌদি আরব কোন স্তরের ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশনে পরিণত হতে যাচ্ছে। এ ছাড়া নামীদামি ফুটবলারদের নিয়ে যাওয়া এবং ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের বিষয়গুলোও জড়িত সৌদিকে বিশ্বের কাছে আরও পরিচিত করার জন্য।

তাহলে সৌদি কি পশ্চিমের মতো আধুনিক হয়ে যাচ্ছে? আমি বলব, না। সৌদি আরব বিশ্বের সামনে নিজেকে তুলে ধরছে, এটা ঠিক।

কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তারা পুরোপুরি পশ্চিমা সংস্কৃতিকে অনুসরণ করছে—দুবাই যেমনটা করেছে। দুবাই থেকে সৌদি আরব সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে নিজেদের বিশ্বের সামনে তুলে ধরছে। দেশটি আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে নিজেদের কৃষ্টি ও কালচার এবং ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে ধারণ করে। সেটাকেই বিশ্বের সামনে মেলে ধরছে, বিষয়টি প্রশংসনীয়। তারা তাদের ঐতিহাসিক স্থাপনা ও নিদর্শনগুলোকে ধ্বংস করে সেখানে নতুন কিছু নির্মাণ না করে পুরোনো স্থাপনাগুলোকেই পুনর্নির্মাণ করে বিশ্বের কাছে তুলে ধরছে।

পশ্চিমের একই ধাঁচের অবকাঠামো, একই ধাঁচের শহর, একই ধাঁচের নিদর্শন দেখতে দেখতে অনেকে এখন ক্লান্ত। সত্যিকারের পর্যটকদের চাহিদা নতুন এবং ভিন্ন ধরনের কিছু অভিজ্ঞতা নেওয়া। ঠিক এই চাহিদার কথা চিন্তা করে সৌদি আরব তাদের ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রিকে তৈরি করছে এবং বিশ্বের সামনে মেলে ধরছে। পর্যটকদের বিষয়টি দারুণভাবে আকৃষ্ট করছে।

ইয়াসির আরাফাত