এখানে নতজানু হও
শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলী
ছাপান্ন হাজার নয়শত সাতাত্তর বর্গমাইলে,
বিশকোটি জনতা আমরা বাস করছি আয়েশে,
আমাদের দেশে ছড়িয়ে আছে মাত্র নয়শো বিয়াল্লিশটি বদ্ধভুমি।
অথচ আমরা আজ কি সম্মানইনা করছি তাদের?
বিজয়ের মূহুর্তে ওরা নিজেদের জীবন দিয়ে- প্রমাণ রেখে গেছে,
জীবন দিয়ে কি করে ভালোভাসতে হয়।
হায়েনার দল এদেশকে মেধাশূণ্য করতে চেয়েছিলো,
রাতের অন্ধকারে ঘর থেকে তুলে এনে ওদেরকে হত্যা করেছে এখানে।
একটু দাঁড়াও, এখানে আজ নতজানু হও,
এখানে আমার শহীদ ভাইয়েরা শুয়ে আছে।
কথা বলোনা, ওরা জেগে যাবে; ওদের ঘুম ভাঙিওনা।
নির্ঘুম কেটেছে ওদের কতো রাত, কতো দীর্ঘ প্রহর,
কেটেছে অবিশ্রামহীন আর নিদারুন যন্ত্রণায়।
ওদেরকে বাধ্য করেছিলো ঘর ছাড়তে,
ভাসতে আপনজনের রক্তস্নাত লাশের উপর।
অথবা পালিয়ে যেতে বনবাদাড়ের গভীর ঝোপে।
ওদেরকে বাধ্য করেছে বিছানা পেতে নিতে রক্তাপ্লুত সবুজ ঘাসের উপর।
ওদের কারো বুক পকেটের চিঠি পড়বার ছিলো,
কিন্তু সেই চিঠি আর তো পড়া হয়নি।
মায়ের আদর,
বাবার স্বপ্ন,বোনের হাতের মেহেদীর রং মাখা ভালোবাসায় সিক্ত চিঠি।
কারো চিঠিতে প্রেয়সির ভালোবাসা অথবা ছিলো নতুন মুখের সুখবর।
হায়েনাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ডাক এসেছিলো।
নোঙর তোলো তোলো, সময় যে হলো হলো।
ওরা একটি স্বাধীন দেশ আর পতাকার খোঁজে-
দামাল ছেলেরা যুদ্ধে গেলো কিন্তু ফিরে এলোনা।
অতঃপর ওদের রক্ত মিশেছে, এই বাংলার ধুলি কণায়,
এদেশের শত নদীর নরম পলিমাটি চরে- বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশিতে।
ওরা শুয়ে আছে নির্ঘুম চোখে অথবা তন্দ্রাচ্ছন্ন ওরা এদেশের বদ্ধভুমিতে-
ওদেরকে বিশ্রাম নিতে দাও, শব্দ করোনা!
ওরা ক্লান্ত, ওরা জেগে উঠবে,ওদেরকে ঘুমোতে দাও।
শুধু বছর ঘুরে চৌদ্দ ডিসেম্বর এলেই-
মেকি সম্মান দেখিয়ে, শ্রদ্ধায় ন্যুজ বাঙালি।
বছরে একদিন ফুলের তোড়া দিয়ে পালন করি বুদ্ধিজীবী দিবস।
অথচ সারা বছর বদ্ধভুমির প্রতি উদাসীন আমাদের জনগোষ্ঠী।
ঈশান-নৈঋত থেকে বঙ্গোপসাগরের সীমা অবধি দেশ প্রেমিক খুঁজি।
অথচ আত্মকেন্দিকের জোয়ার বইছে বেসামাল।
আসুন ঘরে ঘরে অন্ততঃ একটি সন্তান গড়ে তুলি
যার অন্তরে দেশপ্রেম, চলনে-বসনে ও বচনে প্রকৃত মানুষ।
বদ্ধভুমিতে শুয়ে আছে বহুকাল ধরে, ওরা আমার ভাই,
লাল সবুজের পতাকায়,ওদেরই তো মুখ দেখা যায়।
রচনাকাল : ১৩ ডিসেম্বর ২০২২