বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু পাকিস্তানের কবি ও সাংবাদিক আহমদ সালিমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
‘মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধু’ পদকপ্রাপ্ত কবি আহমেদ সালিম ১০ ডিসেম্বর ইসলামাবাদে ৭৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) এক শোক বিবৃতিতে নির্মূল কমিটি জানায়, কবি আহমদ সালিম একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বাংলাদেশে গণহত্যার প্রতিবাদে লেখালেখির জন্য কারাবরণ ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধু’ পদক দেয়।
‘আমরা তার মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত,’ বিবৃতিতে বলা হয়।
‘কবি আহমদ সালিম প্রখ্যাত পাঞ্জাবি কবি ও পাকিস্তানের মানবাধিকার নেতা ছিলেন’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংসতার শুরু থেকেই প্রতিবাদ করায় পাকিস্তান সরকার কর্তৃক তিনি কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন এবং সেখানে কঠোর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।’
নির্মূল কমিটি জানায়, আহমেদ সালিম শুধু কবি নন, তিনি ছিলেন একাধারে নাট্যকার ও গবেষক। তার বইয়ের সংখ্যা ১৭৫টি। তিনি ছিলেন উর্দু ভাষার আরেক বিখ্যাত কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ এবং পাঞ্জাবি কবি ওস্তাদ দামানের ছাত্র। শেষ জীবনে আহমেদ সালিম পাকিস্তানের টেকসই উন্নয়ন নীতি ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
পাকিস্তানের যেসব সচেতন লেখক ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশের গণহত্যার প্রতিবাদ করছেন এবং গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে বলেছেন তাদের লেখা সংকলন করে ২০১২ সালে আহমদ সালিম প্রকাশ করেছেন ‘We Owe an Apology to Bangladesh’।
২০১৭ সালে পাকিস্তানে সরকারি অপপ্রচারের জবাব দেওয়ার জন্য একাত্তরের ঘাতক নির্মূল কমিটি যে ৩ জন পাকিস্তানি লেখককে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তাদের মধ্যে কবি ও মানবাধিকার নেতা আহমদ সালিমও ছিলেন। সে সময় তিনি বাংলাদেশের গণহত্যার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের বিবেকবান নাগরিকদের প্রতিবাদের বিষয়ে ‘জাহানারা ইমাম স্মারক বক্তৃতা ২০১৭’ দেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, সালিম ১৯৭১ সালের এপ্রিলেই বাংলাদেশের গণহত্যার প্রতিবাদ করে কবিতা লিখে কারা নির্যাতন ভোগ করেছেন। পরে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনেও বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকার ‘স্বাধীনতা মৈত্রী’ সম্মাননা দেয়। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মৃত্যুবার্ষিকীতে নির্মূল কমিটি প্রতি বছর একজন ব্যক্তি এবং একটি সংগঠনকে ‘জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদক’ দেয়। ব্যক্তি হিসেবে ২০১৭ সালে পাকিস্তানের কবি আহমদ সালিমকে ‘জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদক’ দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তিনি লিখেছেন বিখ্যাত বই ‘পাকিস্তানের কারাগারে শেখ মুজিবের বন্দিজীবন’। এ বইটি বাংলায় অনুবাদ করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মুক্তিযুদ্ধ গবেষক মফিদুল হক তার সম্পর্কে লিখেছেন, ‘আহমদ সালিম ছিলেন সেই বিরল পাকিস্তানিদের একজন, উন্মত্ততায় অন্ধ সমাজ বেষ্টনীতে যারা বিবেকের নির্দেশ বিস্মৃত হননি এবং প্রবল বিরুদ্ধতার মধ্যেও সত্য প্রকাশে কুণ্ঠিত ছিলেন না।’
‘আহমদ সালিমের মৃত্যুতে পাকিস্তান হারিয়েছে এক সাহসী বিবেকের কণ্ঠ, আমরা হারিয়েছি বাংলাদেশের এক মহান বন্ধুকে, যিনি বাঙালির চরম দুঃসময়ে আমাদের পাশে থেকে সমূহ নির্যাতন ও নিগ্রহের শিকার হয়েছিলেন। আমরা তার পরিবারের শোকসন্তপ্ত সদস্য, সহযোগী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি,’ বিবৃতিতে বলা হয়।
বিবৃতিতে সই করেন বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অধ্যাপক অনুপম সেন, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, সমাজকর্মী মালেকা খান, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুননবী, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, জননেতা ঊষাতন তালুকদার, চলচ্চিত্রনির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ, অধ্যাপক ডা. কাজী কামরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন (অব.) আলমগীর সাত্তার বীরপ্রতীক, ক্যাপ্টেন (অব.) সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীর উত্তম, মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আবদুর রশীদ, অধ্যাপক ডা. আমজাদ হোসেন, ড. নূরন নবী, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদজায়া সালমা হক, কলামিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, অধ্যাপক শিল্পী আবুল বারক আলভী, মানবাধিকার নেত্রী আরমা দত্ত, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, যাত্রাশিল্পী মিলন কান্তি দে, আবৃত্তিশিল্পী মো. শওকত আলী, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, ডা. ইকবাল কবীর, সমাজকর্মী সুব্রত চক্রবর্ত্তী, ভূতত্ত্ববিদ মকবুল-ই এলাহী চৌধুরী, সমাজকর্মী শফিকুর রহমান শহীদ, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম, অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম, অধ্যাপক আবদুল গাফফার, কবি জয়দুল হোসেন, সমাজকর্মী কাজী লুৎফর রহমান, সমাজকর্মী কামরুননেসা মান্নান, অ্যাডভোকেট আজাহার উল্লাহ্ ভূঁইয়া, অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, সঙ্গীতশিল্পী জান্নাত-ই ফেরদৌসী লাকী, অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব, সাংবাদিক শওকত বাঙালি, অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা, লেখক আলী আকবর টাবী, অ্যাডভোকেট কাজী মানছুরুল হক খসরু, অ্যাডভোকেট দীপক ঘোষ, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ড. কানিজ আকলিমা সুলতানা, ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী, সাংবাদিক মহেন্দ্র নাথ সেন, শহীদসন্তান তৌহিদ রেজা নূর, শহীদসন্তান শমী কায়সার, শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, শহীদসন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন, মানবাধিকারকর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী, লেখক সাংবাদিক সাব্বির খান, মানবাধিকারকর্মী আনসার আহমদ উল্লাহ, মানবাধিকারকর্মী স্বীকৃতি বড়ুয়া, লেখক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট অমি রহমান, সংস্কৃতিকর্মী পিন্টু সাহা, অ্যাডভোকেট আবদুল মালেক, লেখক কলামিস্ট মিথুশিলাক মুর্মু, কলামিস্ট অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লীনা পারভীন, মানবাধিকারকর্মী রহমান খলিলুর, সমাজকর্মী হারুণ অর রশীদ, অ্যাডভোকেট মালেক শেখ, সহকারী অধ্যাপক তপন পালিত, সাংবাদিক দিলীপ মজুমদার, সমাজকর্মী রাশেদুল ইসলাম, সমাজকর্মী ইস্রাফিল খান বাপ্পি, সমাজকর্মী শিমন বাস্কে, সমাজকর্মী শেখ আলী শাহনেওয়াজ পরাগ, সমাজকর্মী সাইফ উদ্দিন রুবেল, লেখক ও চলচ্চিত্রনির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি, সমাজকর্মী ফয়সাল হাসান তানভীর প্রমুখ।