গভীর রাতে ঘুমে অচেতন গৃহস্থ বাড়ির লোকজন। হঠাৎ কুকুরের গগনবিদারী চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল গৃহস্থের। তিনি ভাবলেন, কোনো চোর নয়তো শিয়াল কিংবা বনবিড়াল চুপিচুপি বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেছিল। গৃহস্থ টর্চ লাইট জ্বেলে বাড়ির চারপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখে এলেন।
কোথাও কেউ নেই, কিছুই নেই! তিনি নিশ্চিন্ত ঘুমিয়ে পড়লেন। তারপর ঘণ্টাখানেক পর আবার কুকুরে চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল। চোখেমুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললেন, ‘ধুরো! কুকুরটা খামোখা চিল্লায়।’ এবার আর বিছানা ছেড়ে উঠলেন না।
সকাল উঠে দেখা গেল, তার হালের গরুটা চোরে নিয়ে গেছে। কিংবা বড় মোরগটা হাতিয়ে নিয়েছে শিয়াল বাবাজি। এ ধরনের ঘটনা গ্রামে অহরহ ঘটে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে চোর কিংবা শিয়ালের অস্তিত্ব কুকুরে টের পেল কিন্তু গৃহস্থ টের পায়নি কেন?
এ প্রশ্নের সাধারণ উত্তরটা হতে পারে, গৃহস্থ ঘুমিয়ে ছিলেন? পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে যদি বলি, কুকুরও তো ঘুমিয়েছিল। এবার জবাব আসতে পারে, গৃহস্থ ঘুমায় ঘরের ভেতরে আর কুকুর বাইরে। অতএব কুকুর টের পাবে, সেটাই স্বাভাবিক। আসলে ব্যাপারটা এতো সরল নয়।
শিয়াল বা চোর যখন কোনো গৃহস্থ বাড়িতে ঢোকে, তখন তারা এমনভাবে পা ফেলে যেন এতটুকুও শব্দ না হয়। আর সে শব্দের ২০ হার্জের কম।
অর্থাৎ সেটা ইনফ্রাসনিক শব্দ। অন্যদিকে কুকুরে শ্রবণ সীমা ১৫০০০ হার্জ থেকে ২৫০০০ হার্জ পর্যন্ত। তাই কুকুর ২০ হার্জের কম কিন্তু ১৫ হার্জের বেশি কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পায়। অতএব চোরের আর শেয়ালের আগমনের খবর মানুষের আগে কুকুরে টের পাবে সেটাই স্বাভাবিক।
কুকুরের ঘ্রাণ শক্তি অত্যন্ত প্রখর এবং প্রত্যেকটা মানুষের গায়ের গন্ধ আলাদা করে মনে রাখতে পারে। তাই গভীর রাতে অপরিচিত লোক বাড়িতে ঢুকলে কুকুর টের পাবেই। তেমনি শিয়ালের গায়ের গন্ধ কুকুর বহুদূর থেকেই টের পায়।
গন্ধের এ ব্যাখ্যাটাও ঠিক, তবে সেটা শুধু কুকুর জেগে থাকলেই সম্ভব। ঘুমন্ত কুকুর শুধুমাত্র গন্ধের কারণেই চোর আর শিয়ালের অস্তিত্ব টের পেয়ে যাবে- এটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। শব্দ তরঙ্গের কম্পনই আসল ব্যাপার।
পৃথিবীতে যত প্রাণী রয়েছে, তার মধ্যে কীটপতঙ্গের সংখ্যাটাই বেশি। দিনের বেলা সেটা অত বোঝা যায় না। মানুষের কর্মব্যস্ত জীবনের কোলাহলের শব্দে কীটপতঙ্গের ডাক চাপা পড়ে যায়। কিন্তু রাত হলেই ভেসে আসে হাজারো কীটপতঙ্গের শব্দ। কিন্তু সব কীটপতঙ্গের ডাক কি আমরা শুনতে পাই?
অবশ্যই না।
পৃথিবীর শতকরা দশভাগ কীটপতঙ্গের ডাক আমাদের কানে পৌঁছায় না। কারণ কীটপতঙ্গ পরস্পরের সাথে ভাব করে ইনফ্রাসনিক অথবা আল্ট্রাসনিক কম্পাঙ্কের শব্দের সাহায্যে।
ইনফ্রাসনিক! অনেকে অবাক হতে পারে, মানুষের সর্বোচ্চ শ্রবণ সীমার চেয়েও বেশি জোরে শব্দ করতে পারে কীটপতঙ্গ?
আগেই বলেছি কম্পাঙ্ক দিয়ে শব্দের তীব্রতা বোঝায় না, কম্পনের পরিমাপ বোঝায়। তাই ইনফ্রাসনিক শব্দ মানেই জোরালো আওয়াজ হতে হবে, তার মানে নেই।
সূত্র: হাউ ইট ওয়ার্কস