5:19 am, Monday, 23 December 2024

কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলায় পালিত হলো ‘মৈত্রী দিবস’

  • কারুবাক
  • আপডেটের সময় : ০৮:৪৮:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩
  • 297 ভিউ
শেয়ার করুন
কারুবাক ডেস্ক

কলকাতার কলেজ স্কোয়ার প্রাঙ্গণে চলছে ১১তম বাংলাদেশ বইমেলা। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) ছিল মেলার তৃতীয় দিন। দিনটি ‘মৈত্রী দিবস’ হিসেবে পালিত হয়েছে। দিনটি ভারত এবং বাংলাদেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ।

এইদিনে বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর, প্রথম বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল ভারত। সেই দিনটিকে কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলায় স্মরণ করা হয়েছে।

কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস দিনটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, আমাদের কাছে এই দিনটি অতন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ। ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এদিন বাংলাদেশ বইমেলার মঞ্চে ‘ভাষা আন্দোলন: বাঙালির জাতিরাষ্ট্র বিশ্ব বাঙালির ঐক্যসূত্র’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত সংস্কৃতির জোট সভাপতি গোলাম কুদ্দুস; যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমন কল্যাণ লাহিড়ি; প্রাবন্ধিক ও গবেষক ইমানুল হক ও কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের কাউন্সেলর (কনস্যুলার) আলমাস হোসেনসহ বিশিষ্টরা।

ইমন লাহিড়ি বলেন, কলকাতায় বাঙালিরা বিপন্ন। সার্বিকভাবে এই চিত্রই ফুটে উঠছে বাঙালির শহরে। এ শহরে অন্যভাষার মানুষ এখন বেড়ে যাচ্ছে। মানুষ হিন্দি বলতেই পছন্দ করছে। এরকম চলতে থাকলে বাঙিলে দূরে চলে যাবে বাঙালির শহর থেকে।

তিনি আরও বলেন, বাংলা ভাষাকে টিকেয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। আমার মনে হয় বাঙালিকে কাঁটাতার ভুলে ঢাকা এবং কলকাতায় একসাথে থাকার সময় এসেছে।

এছাড়া ভারতের নিরিখে কলকাতা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সিলেবাসে বঙ্গবন্ধু বিষয় পাঠ্যসূচিতে রাখা হবে। এ বিষয়ে ইমন বলেন, বঙ্গবন্ধুর যে তথ্য, মুজিবের যে ধারনা, শেখ মুজিবের যে ভাবনা, সেটা অন্তত দক্ষিণ এশিয়ার পাঠ্যপুস্তকে থাকা প্রয়োজন। সেই হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তা এবং ভাষার ওপর যে রাষ্ট্র গঠন করার ডাক, যাদবপুর রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে তা থাকবে।

অধ্যাপক ইমানুল হক বলেন, ৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিনে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ভারত। অপরদিকে, ভারতের সংবিধান রচয়িতা আম্বেদকারের মৃত্যু দিন, যা আমাদের কাছে শোকের। তৃতীয়ত, ভারতবর্ষের কাছে দুখের দিন। এদির একটি ঐতিহাসিক সৌধকে ভেঙে ফেলা হয়েছে।

আমি মনে করি, দুই দেশেই দুই ধরনের মানুষ আছে। এক ধরনের মানুষ ফুল ফোটান। আরেক ধরনের মানুষ ভুল পথে হাঁটতে চান। তবে ভুল পথে হাঁটার মানুষরা কোনো দেশেই চিরকাল স্থায়ী হয় না। হিটলার তার প্রমাণ। খুন করা বা ধ্বংস করা সত্য। কিন্তু ফুল ফুটানোটাই বাস্তব। মৈত্রীরসুর, মিলনের সুর এবং ঐক্যের সুর দুই দেশকে বেঁধে রেখেছে। ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক অটুট স্বাধীন চিন্তার সব সময় জয় হবে।

এছাড়া বাঙালি জাতির লড়াই, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ গঠন, বাংলা ভাষা স্বীকৃতি বিষয় বক্তব্য রাখেন গোলাম কুদ্দুস।

গত সোমবার (৪ ডিসেম্বর) ১১তম বাংলাদেশ বইমেলার সূচনা হয়। উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টির সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিদুল হক এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, কলকতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনা আন্দালিব ইলিয়াসসহ বিশিষ্টরা।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি ঢাকার সম্মিলিত উদ্যোগে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে কলকাতার বইপাড়া বলে পরিচিত কলেজ স্ট্রিটের কলেজ স্কোয়ার প্রাঙ্গণে। স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাংলাদেশ বইমেলা চলবে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

প্রতিবারের মতো এ বছরও বাংলাদেশের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা, প্রতিষ্ঠান এই মেলায় অংশ নিয়েছে। মোট ৬৫ বাংলাদেশি প্রকাশনার বই কলকাতার পাঠকদের কাছে হাজির করা হয়েছে। বইমেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তা করছে কলকাতার ভাষা ও চেতনা সমিতি।

একসময় পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি বইয়ের প্রাপ্তিস্থান ছিল কলকাতা বইমেলায়। পরে পাঠক সমাবেশ ও পত্রভারতীর যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশি বইয়ের স্থায়ী ঠিকানা হয় কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে। তারই মাঝামাঝি বাংলাদেশি বইয়ের পসরা নিয়ে ২০১১ সালে কলকাতায় পথচলা শুরু করে ‘বাংলাদেশ বইমেলা’।

 

#
জনপ্রিয়

কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলায় পালিত হলো ‘মৈত্রী দিবস’

আপডেটের সময় : ০৮:৪৮:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩
শেয়ার করুন
কারুবাক ডেস্ক

কলকাতার কলেজ স্কোয়ার প্রাঙ্গণে চলছে ১১তম বাংলাদেশ বইমেলা। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) ছিল মেলার তৃতীয় দিন। দিনটি ‘মৈত্রী দিবস’ হিসেবে পালিত হয়েছে। দিনটি ভারত এবং বাংলাদেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ।

এইদিনে বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর, প্রথম বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল ভারত। সেই দিনটিকে কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলায় স্মরণ করা হয়েছে।

কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস দিনটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, আমাদের কাছে এই দিনটি অতন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ। ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এদিন বাংলাদেশ বইমেলার মঞ্চে ‘ভাষা আন্দোলন: বাঙালির জাতিরাষ্ট্র বিশ্ব বাঙালির ঐক্যসূত্র’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত সংস্কৃতির জোট সভাপতি গোলাম কুদ্দুস; যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমন কল্যাণ লাহিড়ি; প্রাবন্ধিক ও গবেষক ইমানুল হক ও কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের কাউন্সেলর (কনস্যুলার) আলমাস হোসেনসহ বিশিষ্টরা।

ইমন লাহিড়ি বলেন, কলকাতায় বাঙালিরা বিপন্ন। সার্বিকভাবে এই চিত্রই ফুটে উঠছে বাঙালির শহরে। এ শহরে অন্যভাষার মানুষ এখন বেড়ে যাচ্ছে। মানুষ হিন্দি বলতেই পছন্দ করছে। এরকম চলতে থাকলে বাঙিলে দূরে চলে যাবে বাঙালির শহর থেকে।

তিনি আরও বলেন, বাংলা ভাষাকে টিকেয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। আমার মনে হয় বাঙালিকে কাঁটাতার ভুলে ঢাকা এবং কলকাতায় একসাথে থাকার সময় এসেছে।

এছাড়া ভারতের নিরিখে কলকাতা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সিলেবাসে বঙ্গবন্ধু বিষয় পাঠ্যসূচিতে রাখা হবে। এ বিষয়ে ইমন বলেন, বঙ্গবন্ধুর যে তথ্য, মুজিবের যে ধারনা, শেখ মুজিবের যে ভাবনা, সেটা অন্তত দক্ষিণ এশিয়ার পাঠ্যপুস্তকে থাকা প্রয়োজন। সেই হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তা এবং ভাষার ওপর যে রাষ্ট্র গঠন করার ডাক, যাদবপুর রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে তা থাকবে।

অধ্যাপক ইমানুল হক বলেন, ৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিনে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ভারত। অপরদিকে, ভারতের সংবিধান রচয়িতা আম্বেদকারের মৃত্যু দিন, যা আমাদের কাছে শোকের। তৃতীয়ত, ভারতবর্ষের কাছে দুখের দিন। এদির একটি ঐতিহাসিক সৌধকে ভেঙে ফেলা হয়েছে।

আমি মনে করি, দুই দেশেই দুই ধরনের মানুষ আছে। এক ধরনের মানুষ ফুল ফোটান। আরেক ধরনের মানুষ ভুল পথে হাঁটতে চান। তবে ভুল পথে হাঁটার মানুষরা কোনো দেশেই চিরকাল স্থায়ী হয় না। হিটলার তার প্রমাণ। খুন করা বা ধ্বংস করা সত্য। কিন্তু ফুল ফুটানোটাই বাস্তব। মৈত্রীরসুর, মিলনের সুর এবং ঐক্যের সুর দুই দেশকে বেঁধে রেখেছে। ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক অটুট স্বাধীন চিন্তার সব সময় জয় হবে।

এছাড়া বাঙালি জাতির লড়াই, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ গঠন, বাংলা ভাষা স্বীকৃতি বিষয় বক্তব্য রাখেন গোলাম কুদ্দুস।

গত সোমবার (৪ ডিসেম্বর) ১১তম বাংলাদেশ বইমেলার সূচনা হয়। উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টির সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিদুল হক এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, কলকতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনা আন্দালিব ইলিয়াসসহ বিশিষ্টরা।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি ঢাকার সম্মিলিত উদ্যোগে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে কলকাতার বইপাড়া বলে পরিচিত কলেজ স্ট্রিটের কলেজ স্কোয়ার প্রাঙ্গণে। স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাংলাদেশ বইমেলা চলবে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

প্রতিবারের মতো এ বছরও বাংলাদেশের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা, প্রতিষ্ঠান এই মেলায় অংশ নিয়েছে। মোট ৬৫ বাংলাদেশি প্রকাশনার বই কলকাতার পাঠকদের কাছে হাজির করা হয়েছে। বইমেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তা করছে কলকাতার ভাষা ও চেতনা সমিতি।

একসময় পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি বইয়ের প্রাপ্তিস্থান ছিল কলকাতা বইমেলায়। পরে পাঠক সমাবেশ ও পত্রভারতীর যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশি বইয়ের স্থায়ী ঠিকানা হয় কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে। তারই মাঝামাঝি বাংলাদেশি বইয়ের পসরা নিয়ে ২০১১ সালে কলকাতায় পথচলা শুরু করে ‘বাংলাদেশ বইমেলা’।