কারুবাক ডেস্ক :
তিনি শুধু বাঙালির নন, বিশ্বের কবি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে ‘গুরুদেব’, ‘কবিগুরু’ ও ‘বিশ্বকবি’ অভিধায় ভূষিত করা হয়।
কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দ জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতা ব্রাহ্ম ধর্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাতা সারদাসুন্দরী দেবী। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন পিতামাতার চতুর্দশ সন্তান। ১৮৭৫ সালে মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের মাতৃবিয়োগ ঘটে।
কিন্তু জানেন কি? রবীন্দ্রনাথ যে ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তাদের আসল পদবি আসলে ‘ঠাকুর’ ছিল না। এবার মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন আসবে, তাহলে কী ছিল ঠাকুর বংশের আসল পদবি? ঠাকুর বংশের আসল পদবি হলো ‘কুশারি’। নিশ্চয়ই ভাবছেন কুশারি থেকে কীভাবে ঠাকুর হয়ে উঠলেন তারা? কেনইবা পদবি পরিবর্তন করতে হয়েছিল?
প্রায় দেড় শতকের ধর্মীয় গঞ্জনা, অপমান সহ্য করে, বছরের পর বছর দরিদ্র মানুষের সেবা নিয়োজিত থেকে কুশারি বংশধরেরা, হয়ে ওঠেন ঠাকুর। শোনা যায়, এক বিশেষ মাংসের গন্ধ শোঁকার অপরাধে সমাজে কলঙ্কিত হতে হয় সুন্দরবন অঞ্চলের চার ব্রাহ্মণ জমিদার ভাই রতিদেব কুশারি, কামদেব কুশারি, শুকদেব কুশারি, জয়দেব কুশারি। এদেরই পরবর্তী বংশধর হলেন জগন্নাথ কুশারি।
জগন্নাথ কুশারির বংশধর রামানন্দের মহেশ্বর আর শুকদেব নামে দুই ছেলে ছিল। তারা গোবিন্দপুরে দরিদ্রদের সেবা করা থেকে শুরু করে প্রচুর দান-ধ্যান করে সেখানকার মানুষের মনে জায়গা করে নেন। তারা হয়ে ওঠেন দরিদ্রের ঈশ্বর বা ‘ঠাকুর’। এইভাবেই তারা ‘কুশারি’ পদবি ত্যাগ করে গোবিন্দপুরে এসে ওখানকার মানুষদের ভালোবেসে দেওয়া নাম ঠাকুর-কেই নিজেদের পদবি হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন। প্রথমে অবশ্য শুকদেব ঠাকুর পদবি ব্যবহার করতেন। পরে তার ভাই মহেশ্বরের ছেলে পঞ্চাননও কাকা শুকদেবকে অনুসরণ করে ‘ঠাকুর’ পদবি ব্যবহার করতে শুরু করেন।
পরে এই বংশেরই এক বংশধর নীলমণি তৎকালীন সময়ের জোড়াবাগান অঞ্চলের বিখ্যাত ধনী ব্যবসায়ী বৈষ্ণবচরণ শেঠের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে ওঠেন। বৈষ্ণবচরণ শেঠ নীলমণিকে বর্তমানের জোড়াসাঁকোয় দেড় বিঘা জমি বন্ধুত্বের উপহার হিসেবে দেন। তিনি চান যাতে তার পরম মিত্র সেখানেই বাড়ি করে থাকেন। আর এর পর সেখানেই গড়ে ওঠে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। যা বর্তমানে রবির আলোয় উদ্ভাসিত। কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতেই ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ মৃত্যুবরণ করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।