কারুবাক ডেস্ক
আপাতত আগ্নেয়গিরিটিকে ডাকা হচ্ছে ‘নকটিস ভলকানো’ নামে। এর উচ্চতা প্রায় ২৯ হাজার ছয়শ ফুট, যা মঙ্গলপৃষ্ঠের ২৮০ মাইল (৪৫০ কিলোমিটার) এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।
টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ‘উডল্যান্ডস’ এলাকায় আয়োজিত ৫৫তম ‘লুনার অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স কনফারেন্স’-এ এই চমকপ্রদ অনুসন্ধানটি তুলে ধরা হয়, যেখানে মঙ্গল গ্রহেরর নিরক্ষরেখার কাছাকাছি অবস্থিত আগ্নেয়গিরি অঞ্চল ‘থারসিস’র পূর্বাংশে একটি বিশাল আগ্নেয়গিরির পাশাপাশি একটি লুকানো বরফের গ্লেসিয়ার থাকার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে।
অনুসন্ধানটি রোমাঞ্চকর কারণ, ১৯৭১ সালে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা পরিচালিত ‘মেরিনার ৯’ মিশনের পর থেকে বিভিন্ন প্রদক্ষিণকারী নভোযান মঙ্গলের ওই এলাকার ছবি তুললেও এ বিশাল আকৃতির আগ্নেয়গিরির আসল রূপ ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ায় এটি উপেক্ষিতই থেকে গিয়েছিল।
আর এ আগ্নেয়গিরিটি মঙ্গলের ‘নকটিস ল্যাবিরিন্থাস’ অঞ্চল ও গ্রহটির বিশাল গিরিখাত ‘ভ্যালেস মেরিনারিস’-এর সঙ্গে ক্রমশই মিশে যাচ্ছে।
আপাতত আগ্নেয়গিরিটিকে ডাকা হচ্ছে ‘নকটিস ভলকানো’ নামে। এর উচ্চতা পৃথিবীর উচ্চতম চূড়া এভারেস্টের কাছাকাছি, প্রায় ২৯ হাজার ছয়শ ফুট, যা মঙ্গলপৃষ্ঠের সাড়ে চারশ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।
আগ্নেয়গিরির বিশাল আকার ও ক্ষয়প্রাপ্ত জটিল নিদর্শন থেকে ইঙ্গিত মেলে, এটি সম্ভবত দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় ছিল, যা মঙ্গলের ভূতাত্ত্বিক গঠনের রোমাঞ্চকর এক অধ্যায়কে চিহ্নিত করে।
এ আগ্নেয়গিরির দক্ষিণ-পূর্বাংশ বিশেষভাবে আকর্ষণীয় কারণ এর একটি স্তরে হিমায়িত বরফ থাকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
অনুসন্ধানটি বিজ্ঞানীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে, যার মাধ্যমে তারা মঙ্গলের ভূতাত্ত্বিক বিবর্তন ও এতে প্রাণের সন্ধান নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি ভবিষ্যতে রোবোটিক বা মানব মিশন পরিচালনার সুযোগ পেতে পারেন।
এর আগে মঙ্গলে খুঁজে পাওয়া হিমবাহের অবশিষ্টাংশ নিয়ে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে হোঁচট খান অলাভজনক সংস্থা ‘সেটি ইনস্টিটিউট’ ও ‘নাসা অ্যামস রিসার্চ সেন্টার’ অধীনস্থ ‘মার্স ইনস্টিটিউট’-এর গ্রহ বিজ্ঞানী ও এ গবেষণার প্রধান লেখক ড. প্যাসকেল লি। গবেষণা দলটি তখন বুঝতে পারে, এটি আসলে একটি বিশাল আকারের গভীর ক্ষয়প্রাপ্ত আগ্নেয়গিরি।
আগ্নেয়গিরির ল্যান্ডস্কেপ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বেশ কয়েকটি উঁচু মালভূমি, আগ্নেয়গিরিটির কেন্দ্র থেকে নেমে আসা কয়েকটি ঢালু অঞ্চল ও অগভীর এক জ্বালামুখ চিহ্নিত করেছেন।
আগ্নেয়গিরিটির কার্যকলাপের বিভিন্ন লক্ষণও চিহ্নিত করা গেছে এ অনুসন্ধানে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, আগ্নেয়গিরির লাভা প্রবাহ ও এর ছাই থেকে বেরিয়ে আসা খনিজ পদার্থ। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, এলাকাটি আসলে একটি বিশাল ‘ভলকানিক সাইট’।
এ ছাড়া, আগ্নেয়গিরির মধ্যে ১৯৩০ বর্গমাইল (প্রায় পাঁচ হাজার বর্গকিলোমিটার) আয়তনের একটি এলাকার খোঁজ মিলেছে এ গবেষণায়। ধারণা করা হয়, এগুলো একেকটি ‘রুটলেস কোন’ বা শেকড়বিহীন গম্বুজ, যেগুলো গঠিত হয়েছে এদের ভেতর লুকিয়ে থাকা পানি বা বরফের সঙ্গে বিস্ফোরণের মিথস্ক্রিয়ায়।