কারুবাক ডেস্ক :
২০১৯ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ জয়ী রাজিয়া খাতুনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন ফুটবলার ইয়াম রহমান। খেলার সূত্রে মাঠেই তাদের পরিচয়, সেখান থেকেই পরিণয়। ৫ বছর পর বুধবার রাতে তাদের ঘর আলো করে এসেছে প্রথম সন্তান। কিন্তু পুত্র সন্তান জন্ম নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেই আনন্দের উপলক্ষ রূপ নিয়েছে শোকে! অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ভোরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন রাজিয়া খাতুন।
সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে লক্ষীনাথপুর গ্রামে রাজিয়ার বাসায় শোকের মাতম চলছে। আজই নিজ গ্রামে দাফন হওয়ার কথা রয়েছে তার। রাজিয়ার মৃত্যুর সময় স্বামী ইয়াম পাশে থাকতে পারেননি। বিয়ের পরই বয়সভিত্তিক ও প্রথম বিভাগে খেলা ছাড়তে হয়েছিল তার। করোনাভাইরাসের দাপটে ক্যারিয়ার আর এগোয়নি। পরবর্তীতে নতুন সংসার এগিয়ে নিতে ফুটবল ছেড়ে গাজীপুরের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছেন। সেখান থেকেই সবকিছু চালিয়ে নিচ্ছিলেন।
ইয়াম খেলা ছাড়লেও রাজিয়া ছাড়েননি। ভুটানে ২০১৮ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়া রাজিয়া গতবছরও নারী লিগে কাচারিপাড়ার হয়ে খেলেছেন। এমনকি সন্তান হওয়ার পরও খেলা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু অকাল মৃত্যু সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। আজ স্ত্রীর মৃত্যুর খবর শুনে সাতক্ষীরায় ছুটে যান ইয়াম। অনেকটাই বাকরুদ্ধ হয়ে বলেছেন, ‘এভাবে রাজিয়া চলে যাবে তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি। রাতেই ছেলে হওয়ার সুসংবাদ পেলাম। আমিও রওনা দেবো। তবে ভোরে অবস্থা খারাপ হবে, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে, তা কে বুঝেছিল। ফুটবল মাঠেই আমাদের পরিচয়। সেখান থেকে দুই হাত এক হয়েছে। চাকরির কারণে দূরে থাকতে হয়েছিল। এখন তো ও নেই।’
মায়ের নিথর দেহের পাশেই এক আত্মীয়র কোলে ছিল সদ্যোজাত সন্তান। ইয়ামদের বাড়ি রাঙামাটি। একদিনের মা ছাড়া শিশু কীভাবে থাকবে এটা নিয়ে বড় দুশ্চিন্তা এখন বাবার, ‘আমার বাবা- মা এসেছে এখানে। তারাই আমার বাচ্চাকে দেখবেন। তবে বাচ্চার মা ছাড়া কীভাবে সবকিছু হবে বুঝতে পারছি না। এভাবে ও চলে যাবে কখনও চিন্তাও করিনি।’
গ্রামের বাড়িতে বাচ্চা জন্ম নেওয়ার সময় রাজিয়া ততটা খারাপ অবস্থায় ছিলেন না। এক পর্যায়ে অবস্থার অবনতি হলে ‘বি’ পজেটিভ রক্তের জন্য খালাতো ভাই রোকনুজ্জামানকে বলে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেই সুযোগও দেননি রাজিয়া। তার আগেই পৃথিবী ছেড়ে অনন্ত লোকে পাড়ি দিয়েছেন।
রাজিয়ার অকাল মৃত্যুর জন্য ইয়াম তার শ্বশুরবাড়ির অবহেলাকে দায়ী করেছেন, ‘ওর পেইন (প্রসব ব্যথা) উঠেছে। আসলে ওর প্রচুর ব্লাড ভেঙেছে (রক্তক্ষরণ)। কিন্তু কেউ বিষয়টা গুরুত্ব দেয়নি। ওরা আমাকে গত রাত ১১টার সময় জানায় ছেলে ও মা সুস্থ আছে। কিন্তু পরে ওর প্রচুর রক্ত ঝরেছে। অচেতন হয়ে ছিল অনেক সময়। পরে ভোর বেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছে। আমি আগেই হাসপাতালে নিতে বলেছিলাম, কিন্তু নেয়নি। প্রয়োজনে সিজার করতে বলেছিলাম তাও শুনেনি।’
এমন আকস্মিক মৃত্যুতে সতীর্থরা সহ সবাই শোকাতুর। ছেলে আর দেখবে না মমতাময়ী মাকে। স্বামী পাচ্ছে না স্ত্রীকে। ক্রীড়াঙ্গনও হারিয়েছে একজন চৌকস নারী ফুটবলারকে।