9:08 pm, Thursday, 19 September 2024

সোমালিয়ান জলদস্যুদের কাছে জিম্মি ২৩ বাংলাদেশির পরিচয় মিলেছে, ‘তারা কারো গায়ে হাত তোলেনি’

  • কারুবাক
  • আপডেটের সময় : ০৪:৩১:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪
  • 76 ভিউ
শেয়ার করুন

কারুবাক ডেস্ক :

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহতে থাকা ২৩ বাংলাদেশি নাবিকের পরিচয় জানা গেছে। গত ৪ মার্চ তৈরি করা ওই জাহাজের একটি ক্রু লিস্ট থেকে তাদের পরিচয় জানা যায়।

তারা হলেন- এমভি আবদুল্লাহর মাস্টার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের রাশেদ মোহাম্মদ আব্দুর, চিফ অফিসার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের খান মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ, সেকেন্ড অফিসার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের চৌধুরী মাজহারুল ইসলাম, থার্ড অফিসার হিসেবে আছেন ফরিদপুরের ইসলাম মো. তারেকুল, ডেক ক্যাডেট হিসেবে আছেন টাঙ্গাইলের হোসাইন মো. সাব্বির।

এছাড়া চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন নওগাঁর শাহিদুজ্জামান এ এস এম, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন খুলনার ইসলাম মো. তৌফিকুল, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন নেত্রকোণার উদ্দিন মো. রোকন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের আহমেদ তানভীর, ইঞ্জিন ক্যাডেট হিসেবে আছেন লক্ষ্মীপুরের থান আইয়ুব, ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে আছেন উল্লাহ ইব্রাহিম খলিল, এবিল সি-ম্যান (নাবিক) হিসেবে আছেন নোয়াখালীর হক মোহাম্মদ আনোয়ারুল, চট্টগ্রামের রহমান মো. আসিফুর, চট্টগ্রামের হোসাইন মো. সাজ্জাদ, অর্ডিনারি সি-ম্যান (সাধারণ নাবিক) হিসেবে আছেন নাটোরের মোহাম্মদ জয়, সিরাজগঞ্জের হক মো. নাজমুল, ওয়লার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের হক আইনুল, চট্টগ্রামের শামসুদ্দিন মোহাম্মদ, বরিশালের হোসাইন মো. আলী, ফায়ারম্যান হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের শাকিল মোশাররফ হোসেন, চিফ কুক হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের ইসলাম মো. শফিকুল, জেনারেল স্টুয়ার্ড হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের উদ্দিন মোহাম্মদ নূর এবং ফাইটার হিসেবে আছেন নোয়াখালীর আহমেদ মোহাম্মদ সালেহ।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় বেলা ১২টার দিকে এমভি আবদুল্লাহ নামের জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জিম্মি এক নাবিক জানিয়েছেন জাহাজটিকে সোমালিয়ান উপকূলের দিকে নেওয়া হচ্ছে।

২০১৬ সালে তৈরি জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্ত ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। প্রথমে জাহাজটির নাম ছিল ‘গোল্ডেন হক’। বাংলাদেশের কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পর এর নাম হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। এটি একটি বাল্ক কেরিয়ার।

গোলাগুলি করলেও তারা কারো গায়ে হাত তোলেনি

জলদুস্যদের হাতে জিম্মি জাহাজ থেকে গোপনে জাহাজ মালিকের কাছে এক অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন চিফ অফিসার মো. আবদুল্লাহ।

৩ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের ওই অডিও বার্তায় জলদস্যুদের কবলে পড়ার পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে জানিয়েছেন জাহাজ ও তাদের তখনকার পরিস্থিতিও।

জাহাজটির মালিকপক্ষের কাছে পাঠানো ওই অডিও বার্তায় তিনি জলদস্যুদের আক্রমণের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, জলদস্যুদের আক্রমনে কেউ হতাহত না হলেও ভীতি ছড়াতে জলদস্যুরা জাহাজে উঠেই গুলাগুলি করেছে।

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজ থেকে পাঠানো অডিও বার্তায় বলা হয়, সময় তখন সকাল সাড়ে ১০টা। গ্রিনিচ মান সময় ৭টা ৩০ মিনিট (বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টা)। ওই সময় একটা হাই স্পিডবোট আমাদের দিকে আসতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে আল্যার্ম দিই। আমরা সবাই ব্রিজে গেলাম। তখন ক্যাপ্টেন স্যার আর জাহাজের দ্বিতীয় কর্মকর্তা ব্রিজে ছিলেন। আমরা এসওএস (জীবন বাঁচানোর জরুরি বার্তা) করলাম। ইউকে এমটিওতে (যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন) যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তারা ফোন রিসিভ করেনি। এরপর ওরা চলে এল। তারা ক্যাপ্টেন স্যার ও দ্বিতীয় কর্মকর্তাকে ঘিরে ফেলল। আমাদের ডাকল। আমরা সবাই এলাম। এ সময় কিছু গোলাগুলি করল। সবাই ভয় পেয়েছিলাম। সবাই ব্রিজে বসে ছিল। তবে কারও গায়ে হাত দেয়নি।

অডিও বার্তায় মো. আতিক উল্লাহ খান আরও বলেন, এ সময় একটা স্পিডবোটে আরও কয়েকজন চলে এল। এভাবে ১৫ থেকে ২০ জন এল জাহাজটিতে। কতক্ষণ পর একটি বড় ফিশিং ভেসেল এল। ওটা ছিল ইরানের মালিকানাধীন মাছ ধরার জাহাজ, যেটিকে এক মাস আগে তারা জিম্মি করেছিল। মাছ ধরার জাহাজটি দিয়ে তারা সাগরে জাহাজ খুঁজছিল। এখন ওই মাছ ধরার জাহাজ ছেড়ে দেবে। তবে সেটির জ্বালানি ফুরিয়ে গেছে। এখন আমাদের থেকে ডিজেল নিচ্ছে। আমাদের জাহাজটি থামিয়েছে তারা। জাহাজের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমাদেরও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমাদের পরিবারকে একটু দেখবেন। সান্ত্বনা জানাবেন।

অডিও বার্তা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম। তিনি জানান, জাহাজটি গত রোববার (১০ মার্চ) মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছিল।

 

#
জনপ্রিয়

সোমালিয়ান জলদস্যুদের কাছে জিম্মি ২৩ বাংলাদেশির পরিচয় মিলেছে, ‘তারা কারো গায়ে হাত তোলেনি’

আপডেটের সময় : ০৪:৩১:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪
শেয়ার করুন

কারুবাক ডেস্ক :

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহতে থাকা ২৩ বাংলাদেশি নাবিকের পরিচয় জানা গেছে। গত ৪ মার্চ তৈরি করা ওই জাহাজের একটি ক্রু লিস্ট থেকে তাদের পরিচয় জানা যায়।

তারা হলেন- এমভি আবদুল্লাহর মাস্টার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের রাশেদ মোহাম্মদ আব্দুর, চিফ অফিসার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের খান মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ, সেকেন্ড অফিসার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের চৌধুরী মাজহারুল ইসলাম, থার্ড অফিসার হিসেবে আছেন ফরিদপুরের ইসলাম মো. তারেকুল, ডেক ক্যাডেট হিসেবে আছেন টাঙ্গাইলের হোসাইন মো. সাব্বির।

এছাড়া চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন নওগাঁর শাহিদুজ্জামান এ এস এম, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন খুলনার ইসলাম মো. তৌফিকুল, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন নেত্রকোণার উদ্দিন মো. রোকন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের আহমেদ তানভীর, ইঞ্জিন ক্যাডেট হিসেবে আছেন লক্ষ্মীপুরের থান আইয়ুব, ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে আছেন উল্লাহ ইব্রাহিম খলিল, এবিল সি-ম্যান (নাবিক) হিসেবে আছেন নোয়াখালীর হক মোহাম্মদ আনোয়ারুল, চট্টগ্রামের রহমান মো. আসিফুর, চট্টগ্রামের হোসাইন মো. সাজ্জাদ, অর্ডিনারি সি-ম্যান (সাধারণ নাবিক) হিসেবে আছেন নাটোরের মোহাম্মদ জয়, সিরাজগঞ্জের হক মো. নাজমুল, ওয়লার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের হক আইনুল, চট্টগ্রামের শামসুদ্দিন মোহাম্মদ, বরিশালের হোসাইন মো. আলী, ফায়ারম্যান হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের শাকিল মোশাররফ হোসেন, চিফ কুক হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের ইসলাম মো. শফিকুল, জেনারেল স্টুয়ার্ড হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের উদ্দিন মোহাম্মদ নূর এবং ফাইটার হিসেবে আছেন নোয়াখালীর আহমেদ মোহাম্মদ সালেহ।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় বেলা ১২টার দিকে এমভি আবদুল্লাহ নামের জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জিম্মি এক নাবিক জানিয়েছেন জাহাজটিকে সোমালিয়ান উপকূলের দিকে নেওয়া হচ্ছে।

২০১৬ সালে তৈরি জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্ত ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। প্রথমে জাহাজটির নাম ছিল ‘গোল্ডেন হক’। বাংলাদেশের কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পর এর নাম হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। এটি একটি বাল্ক কেরিয়ার।

গোলাগুলি করলেও তারা কারো গায়ে হাত তোলেনি

জলদুস্যদের হাতে জিম্মি জাহাজ থেকে গোপনে জাহাজ মালিকের কাছে এক অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন চিফ অফিসার মো. আবদুল্লাহ।

৩ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের ওই অডিও বার্তায় জলদস্যুদের কবলে পড়ার পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে জানিয়েছেন জাহাজ ও তাদের তখনকার পরিস্থিতিও।

জাহাজটির মালিকপক্ষের কাছে পাঠানো ওই অডিও বার্তায় তিনি জলদস্যুদের আক্রমণের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, জলদস্যুদের আক্রমনে কেউ হতাহত না হলেও ভীতি ছড়াতে জলদস্যুরা জাহাজে উঠেই গুলাগুলি করেছে।

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজ থেকে পাঠানো অডিও বার্তায় বলা হয়, সময় তখন সকাল সাড়ে ১০টা। গ্রিনিচ মান সময় ৭টা ৩০ মিনিট (বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টা)। ওই সময় একটা হাই স্পিডবোট আমাদের দিকে আসতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে আল্যার্ম দিই। আমরা সবাই ব্রিজে গেলাম। তখন ক্যাপ্টেন স্যার আর জাহাজের দ্বিতীয় কর্মকর্তা ব্রিজে ছিলেন। আমরা এসওএস (জীবন বাঁচানোর জরুরি বার্তা) করলাম। ইউকে এমটিওতে (যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন) যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তারা ফোন রিসিভ করেনি। এরপর ওরা চলে এল। তারা ক্যাপ্টেন স্যার ও দ্বিতীয় কর্মকর্তাকে ঘিরে ফেলল। আমাদের ডাকল। আমরা সবাই এলাম। এ সময় কিছু গোলাগুলি করল। সবাই ভয় পেয়েছিলাম। সবাই ব্রিজে বসে ছিল। তবে কারও গায়ে হাত দেয়নি।

অডিও বার্তায় মো. আতিক উল্লাহ খান আরও বলেন, এ সময় একটা স্পিডবোটে আরও কয়েকজন চলে এল। এভাবে ১৫ থেকে ২০ জন এল জাহাজটিতে। কতক্ষণ পর একটি বড় ফিশিং ভেসেল এল। ওটা ছিল ইরানের মালিকানাধীন মাছ ধরার জাহাজ, যেটিকে এক মাস আগে তারা জিম্মি করেছিল। মাছ ধরার জাহাজটি দিয়ে তারা সাগরে জাহাজ খুঁজছিল। এখন ওই মাছ ধরার জাহাজ ছেড়ে দেবে। তবে সেটির জ্বালানি ফুরিয়ে গেছে। এখন আমাদের থেকে ডিজেল নিচ্ছে। আমাদের জাহাজটি থামিয়েছে তারা। জাহাজের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমাদেরও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমাদের পরিবারকে একটু দেখবেন। সান্ত্বনা জানাবেন।

অডিও বার্তা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম। তিনি জানান, জাহাজটি গত রোববার (১০ মার্চ) মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছিল।