কারুবাক ডেস্ক :
অমর একুশে বইমেলা গড়িয়েছে ষষ্ঠ দিনে। আজ নতুন বই এসেছে ১০৮টি। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ ও প্রশিক্ষণ বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মেলায় কবিতার বই এসেছে ৪৫টি, গল্প ১০টি, উপন্যাস ১৪টি, প্রবন্ধ ৫টি, গবেষণা ৪টি, ছড়া ১টি, শিশু সাহিত্য ১টি, জীবনি ৪টি, রচনা ১টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ৩টি, বিজ্ঞান ১টি, ইতিহাস ১টি, রাজনীতি ১টি, বঙ্গবন্ধু ১টি, ধর্মীয় ১টি, অনুবাদ ১টি, অভিধান ১টি অন্যান্য ৮টিসহ মোট ১০৮টি নতুন বই।
আগামীকালের মেলার সময়সূচি ও কার্যক্রম:
আগামীকাল বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলার সপ্তম দিন শুরু। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়। চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।তবে রাত সাড়ে আটটার পর মেলায় প্রবেশের সুযোগ থাকবে না। আর বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ: গোবিন্দ চন্দ্র দেব শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক প্রদীপ কুমার রায়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন জয়দুল হোসেন এবং সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক।
আজ যা হয়েছে বইমেলায়:
অমর একুশে বইমেলার ষষ্ঠ দিন মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ: মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জফির সেতু। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শাহিদা খাতুন এবং সৌমিত্র শেখর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আবদুল খালেক।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলা লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম পথিকৃৎ মুহম্মদ মনসুর উদ্দীনের জন্য ও কর্মপরিসর বিশ শতকে। তিরাশি বছরের জীবনে তিনি সংস্কৃতিসাধনায় মগ্ন ছিলেন তেষট্টি বছর। জীবনের এই দীর্ঘ পরিসরে বাংলা লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চায় যে-অবদান তিনি রেখে গেছেন তা তুলনারহিত।
তিনি ছিলেন মূলত লোকসাহিত্য ও লোকসংস্কৃতির সংগ্রাহক, সংরক্ষক, সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়া লোকসাহিত্যের পাঠবিশ্লেষণ, লোককবিদের জীবন অন্বেষণ, লোকসাহিত্যের তাত্ত্বিক বিষয় ও বিভিন্ন ধারার শ্রেণিবিচারসহ নানাবিধ আলোচনার মাধ্যমে বাংলা লোকসাহিত্যের বিশ্লেষণেও মনোযোগী ছিলেন।
আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশের লোকসাহিত্যের পরিমণ্ডলে মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন গুরুত্বপূর্ণ এক নাম। আমাদের গ্রামবাংলার লুপ্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তিনি আলোয় তুলে ধরেছেন। বাংলা লোকসাহিত্য-গবেষণায় আধুনিকতা ও আন্তর্জাতিকতার অগ্রপথিক তিনি। অসাধারণ মেধা ও প্রজ্ঞার অধিকারী মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন লোকসাহিত্যের উপাদান সংগ্রহের পাশাপাশি সেগুলো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণেও আধুনিকতার স্বাক্ষর রেখেছেন।
সভাপতির বক্তব্যে আবদুল খালেক বলেন, লোকসাহিত্য সংগ্রাহক ও গবেষক মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন লোকসাহিত্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ জাল্লাত করার জন্য কাজ করেছেন। লোকসাহিত্যের এটা গ্রামের সাধারণ মানুষের সঙ্গে তিনি সহজেই মিশে যেতে পারতেন। লোকসাহিত্য পরিমণ্ডলে তিনি যে অসাধারণ কীর্তি রেখে গেছেন, তা বাঙালি সংস্কৃতিকে আলোকিত করেছে।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন প্রাবন্ধিক খান মাহবুব, শিশুসাহিত্যিক শেলী সেনগুপ্তা, গবেষক নিগার চৌধুরী এবং কবি আহমেদ শিপলু।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি সাজ্জাদ আরেফিন, ফারহান ইশরাক এবং সৌম্য সালেক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, ঝর্ণ সরকার এবং মো. কামাল হোসেন। দলগত আবৃত্তি পরিবেশন করেন জাহাঙ্গীর চৌধুরীর পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘উদ্ভাস আবৃত্তি সংগঠন’।
এছাড়াও ছিল কাঙাল মজিবরের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কাঙাল হরিনাথ সাংস্কৃতিক সংগঠন’ এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী নারায়ণ চন্দ্র শীল, বিমল বিশ্বাদ, সাধিকা সৃজনী তানিয়া, শান্তা সরকার প্রমুখ।
কর্মদিবসেও প্রাণবন্ত বইমেলা
অমর একুশে বইমেলার আজ ষষ্ঠদিন। শুরু থেকে জমে উঠেছে এবারের বইমেলা। ছুটির দিনের পাশাপাশি কর্মদিবসেও প্রাণবন্ত মেলা। তবে এখন পর্যন্ত বই বেচাকেনা কম হলেও লেখক-পাঠক-দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণ।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায় এমন দৃশ্য। এদিন বিকেল সাড়ে ৪টার পর থেকে মেলায় দর্শনার্থীদের সমাগম বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার পর থেকে মেলা চত্বর হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। নতুন বই ছুঁয়ে, বইয়ের পাতা উল্টেপাল্টে দেখছেন পাঠকরা।
প্রকাশকরা বলছেন, কোভিডের পর দুই বছর কিছুটা নিষ্প্রভ ছিল মেলা। এবার শুরু থেকেই দর্শনার্থীদের ভিড়। ছুটির দিন ছাড়া কর্মদিবসেও মুখরিত মেলা। প্রত্যাশা অনুযায়ী বেচাকেনা না হলেও সামনে বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।
প্রতীক ও অবসর প্রকাশনীর প্রকাশক নূর-ই মুনতাকিম আলমগীর জাগো নিউজকে বলেন, ‘মেলায় দর্শনার্থী-পাঠক ঠিকই আছে, কিন্তু বেচাকেনা কম। যেভাবে দর্শকের ছড়াছড়ি সেভাবে বই বিক্রি হলে তো বেশ হতো। করোনার আগের সময়গুলোতে শুরুর দিকেই বেচাকেনা হতো। মেলা জমে উঠেছে, প্রত্যাশা রাখছি বেচাকেনাও বাড়বে।’
অন্যপ্রকাশ স্টলের সামনে কথা হয় টঙ্গী কলেজের শিক্ষার্থী নোমানের সঙ্গে। নোমান বলেন, ‘মেলায় মূলত শিক্ষার্থীদের আনন্দ বেশি। কারণ আমরা রানিং স্টুডেন্ট, বই পড়ার সময় এখনই। মেলায় জনপ্রিয় লেখকদের সঙ্গে দেখা হওয়াটা আনন্দের। সাদাত হোসাইনের বইসহ আরও কিছু বই সিলেক্ট করে নিয়েছি, সেগুলো কিনবো।’
মেলা প্রাঙ্গণের পাশেই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন মো. আরাফাত নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘কোন বই আলোচিত হবে সেটা লক্ষ্য রাখছি। ফেসবুক গ্রুপে চোখ রাখছি, বইয়ের রিভিউ পড়ছি। আগামী সপ্তাহে বই কেনার ইচ্ছা আছে।’
পেনবুকস প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী তাপস বলেন, ‘আজ তো ছয়দিন শেষ হলো। তবে এখনো আশানুরূপ বেচাকেনা হয়নি। যদিও মেলায় এখন অনেক দর্শনার্থী। অনেকেই আসেন আড্ডা দিতে, মেলা প্রাঙ্গণে বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করে চলে যান। বই কেনায় আগ্রহ কম।’
এবার বইমেলায় ৫৭৩ প্রতিষ্ঠানকে ৮৯৫টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৭৮৬টি সাধারণ স্টল এবং ১০৯টি স্টল লিটল ম্যাগাজিন চত্বরকে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এ বছর ৩৭টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে মেলা ঘিরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মাসব্যাপী সেমিনারের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্য ছবি আঁকা, সংগীত ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা রয়েছে। শিশুপ্রহরে থাকছে আকর্ষণীয় সিসিমপুরের প্রদর্শনী।