9:09 pm, Thursday, 19 September 2024

নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ : বঙ্গ রাখাল

  • কারুবাক
  • আপডেটের সময় : ০৯:০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩
  • 186 ভিউ
শেয়ার করুন

বল বীর
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি, নত
শির ওই শিখর হিমাদ্রীর!
বল বীর
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি
চন্দ্র সূর্র্য গ্রহ তারা ছাড়ি
ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া,
খোদার আসন আরশ ছেদিয়া
উঠিয়াছি চির বিস্ময় আমি
বিশ্ব-বিধাত্রীর!
মম ললাটে রুদ্র-ভগবান
জ্বলে রাজ-রাগটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!
বল বীর
আমি চির-উন্নত শির!…

কাজী নজরুল ইসলাম-এর (১৮৯৯-১৯৭৬) নাম উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথেই আমাদের মনের মধ্যে আরেকটি শব্দ চটজলদি মাথা চারা দিয়ে ওঠে আর সেটি ‘বিদ্রোহী’ কবি। ‘১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসের কোন এক নিঝুম রাতে কবি লেখেছিলেন বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে বেশি আলোচিত-সমালোচিত এই ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি। সেনাবাহিনি থেকে সবে ফিরেছেন এই ২২ বছরের টকবগে তারুণ্যদীপ্ত যুবক। বুকের মধ্যে তুমুল বারুদ, রক্তে তাঁর আগুন জ্বলে। তিনি সৈনিক থাকা অবস্থাতেও অনেক রাজনৈতিক নিষিদ্ধ বইপত্র পড়েছেন বলে জানা যায় তাঁর ‘ব্যথার দান গল্পের ‘লাল ফৌজ’ শব্দের ব্যবহারে সাইফুল মুলক চরিত্রের মধ্যেই বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। এই যে নজরুলের বিদ্রোহীসত্ত্বা একদিনে তৈরি হয়নি বা বানোয়াট কোন সত্ত্বা না। এটি ধীরে ধীরে নিজের মধ্যে কবি লাল করেছেন। কারণ এই যে চোখের সামনের মানুষগুলোর জীবনযাপন দিনকে দিন তাকে ব্যথিত করেছে। তিনি ধর্মান্ধ কিংবা গোঁড়াদের বিরুদ্ধে সর্বদা থেকেছেন সোচ্চার। ঠিক একই প্রশ্নে তা আজও প্রাসঙ্গিক হয়ে আছে। সত্যিই তিনি সেই কবি যিনি বৈষম্যহীন এক অসাম্প্রদায়িক সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য শাসক-শোষক-মোল্লা-পুরুত কিংবা সমাজপতিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের খোড়ক তুলে ধরেছেন। এর বাস্তবচিত্রই আমরা কবির লেখা প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁর কাছে চিঠিতে দেখাতে পাই – ‘বিদ্রোহী’র জয়-তিলক আমার ললাটে অক্ষয় হয়ে গেল আমার তরুণ বন্ধুদের ভালোবাসায়। একে অনেকেই কলঙ্ক তিলক বলে ভুল করেছে, কিন্তু আমি করিনি। বেদনা-সুন্দরের গান গেয়েছি বলেই কি আমি সত্য সুন্দরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছি? আমি বিদ্রোহ করেছি-বিদ্রোহের গান গেয়েছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে- যা মিথ্যা, কলুষিত, পুরাতন-পঁচা সেই মিথ্যা সনাতনের বিরুদ্ধে। হয়তো আমি সব কথা মোলায়েম করে বলতে পারিনি, তলোয়ার লুকিয়ে তার রূপার খাপের ঝক্মকানিটাকেই দেখাইনি- এই তো আমার অপরাধ। এরই জন্য তো আমি বিদ্রোহী। আমি এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছি, সমাজের সকল কিছু কুসংস্কারের বিধি- নিষেধের বেড়া অকুতোভয়ে ডিঙিয়ে গেছি, এর দরকার ছিল মনে করেই।’

কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি কবে কোথায় কিংবা কোন পত্রিকায় তাঁর ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রথম ছাপা হয়েছিল তা নিয়ে বিজ্ঞমহলে এক ধরনের বিতর্ক থাকলেও তা আজ আমাদের কাছে দিবালোকের মত পরিষ্কার। কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ-অগ্নিবীণা’র দ্বিতীয় কবিতা ‘বিদ্রোহী’। তিনি এই গ্রন্থটি উৎসর্গ করেন বিপ্লবী নেতা বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে। এই ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি রচনা নিয়ে নজরুল চরিত মানস গ্রন্থের রচয়িতা সুশীলকুমার সেনগুপ্ত জানান- এই কবিতাটি রচিত হয়েছে ১৯২১ সালের দুর্গাপুজার সময়। এই তথ্য প্রথম দিকে মুজফফর প্রচার করলেও পরবর্তীতে তিনি তাঁর নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা গ্রন্থে- ভুল স্বীকার করে বলছেন- তিনি ‘বিদ্রোহী’ রচনার ভুল তথ্য দিয়ে অন্যায় করেছেন। এই ‘বিদ্রোহী’ রচিত হয়েছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের দিকে। এই প্রসঙ্গে নজরুল গবেষক আহমদ কবির এর ‘বিদ্রোহীর’র নব্বই’ প্রবন্ধটি দেখে নেওয়া যেতে পারে। যেটি ৮ই জুলাই ২০১১ সালে ‘দৈনিক প্রথম আলো’তে প্রকাশিত হয়েছিল-‘মুজফফর আহমদের দেওয়া তথ্যে জানা যাচ্ছে, ‘বিদ্রোহী’ কবিতা কলকাতার ৩/৪ সি তালতলা লেন বাড়িতে রচিত হয়েছিল। ১৯২০ সালে ঊনপঞ্চাশ নম্বর বাঙালি পল্টন ভেঙে গেলে নজরুল প্রথমে তাঁর সতীর্থ কথাসাহিত্যিক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের বাসায় ওঠেন, সেখানে কয়েক দিন থেকে আরেকটি বাসস্থানে, পরে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিটে উঠলেন। সেখানে তাঁর বন্ধু মুজফফর আহমদ থাকেন। তাঁর সঙ্গে নজরুল একত্র বসবাস করেছেন আরও কয়েকটি বাসায়, শেষে ৩/৪ সি তালতলা লেনে।… ‘এই ঘরেই কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘বিদ্রোহী’ কবিতা লিখেছিল। সে কবিতাটি লিখেছিল রাত্রিতে। রাত্রির কোন সময়ে তা আমি জানিনে। রাত ১০টার পরে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলেম। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে আমি বসেছি এমন সময় নজরুল বললÑ সে একটি কবিতা লিখেছে। পুরো কবিতাটি সে তখন আমায় পড়ে শোনাল। ‘বিদ্রোহী’ কবিতার আমিই প্রথম শ্রোতা।’ মুজফফর আহমদ আরো জানাচ্ছেনÑ নিজের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যের কারণেই কবিতাটি শুনে তিনি কোনো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেননি। এতে নজরুল মনে মনে আহত হয়েছেন নিণ্ডয়ই।… ‘আমার মনে হয় নজরুল ইসলাম শেষ রাত্রে ঘুম থেকে উঠে কবিতাটি লিখেছিল। তা না হলে এত সকালে সে আমায় কবিতা পড়ে শোনাতে পারত না। তাঁর ঘুম সাধারণত দেরীতেই ভাঙত, আমার মতো তাড়াতাড়ি তাঁর ঘুম ভাঙত না।’…, নজরুল সম্ভবত প্রথমে কবিতাটি পেনসিলে লিখেছিলেন। আহমদ কবির আরো লিখেন… ‘বিদ্রোহী’ কোন পত্রিকায় প্রথম ছাপা হয়েছিল সে নিয়েও বিতর্ক আছে। নজরুল রচনাবলীর (বাংলা একাডেমি) সম্পাদক আবদুল কাদির প্রথম খণ্ডের গ্রন্থ পরিচয়ে জানিয়েছেন, ‘বিদ্রোহী’ ১৩২৮ কার্তিকে ২য় বর্ষের ৩য় সংখ্যক ‘মোসলেম ভারত’-এ বাহির হইয়াছিল। ১৩২৮ সালের ২২শে পৌষের সাপ্তাহিক বিজলীতে এবং ১৩২৮ মাঘের ‘প্রবাসী’তে উহা সংকলিত হইয়াছিল।’ আবদুল কাদির এ তথ্যও জানিয়েছেন যে ‘মোসলেম ভারতে’ প্রকাশিত ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় আরও কয়েকটি চরণ ছিল, যেগুলো পরে পরিত্যক্ত হয়েছে। কিন্তু মুজফফর আহমদ বলেছেনÑ ‘বিদ্রোহী’ প্রথমে সাপ্তাহিক ‘বিজলী’ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে (১৯২১ সালের ৬ জানুয়ারি, ২২ পৌষ ১৩২৮ বঙ্গাব্দ) তিনি আরো বলেনÑ ‘বিদ্রোহী’ প্রথম ছাপানোর সম্মান বিজলীরই প্রাপ্য।’ এ কথা অবশ্য ঠিক যে ‘মোসলেম ভারতে’ প্রকাশের জন্য নজরুল ‘বিদ্রোহী’ কবিতা সম্পাদক আফজালুল হককে প্রথমে দিয়েছিলেন। কিন্তু ‘মোসলেম ভারতে’র কথিত সংখ্যাটি বের হতে দেরি হয়ে গিয়েছিল।’১

এই ‘বিদ্রোহী’ কবিতার উৎসমূল অনুসন্ধান করতে গিয়ে অনেকেই অনেক মত পোষণ করেছেন তবে কবি কাজী নজরুল ইসলাম নিজেই এর সম্পর্কে বলেছেন- ‘বিদ্রোহী করেছে মোরে আমার যত বেশি অভিমান’। শুধু এটাই শেষ কথা না। তিনি ১৯২৯ সনে কলকাতার এলবার্ট হলে এক অভিভাষণে বলেন- ‘তাঁকে ‘বিদ্রোহী’ বলে যারা লোকের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে তারা হাফেজ কিংবা ওমর খৈয়ামকে পড়েননি। পড়লে তাঁকে ‘বিদ্রোহী’ বলে লজ্জা দিতো না।’ কিন্তু এই কবিতাটা প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে একদিকে কাজী নজরুল ইসলাম যেমন আলোচিত হয়েছিলেন ঠিক অন্য দিকে তেমনি সমালোচিতও হয়েছিলেন। লেখক মুন্সি মোহাম্মদ রেজাউদ্দিন আহম্মদ তাঁকে ‘খোদাদ্রোহী নরাধম’ বলে আখ্যা দেন। কবি গোলাম মোস্তফা এই ‘বিদ্রোহী’ কবিতার প্রতিক্রিয়াস্বরুপ লেখেন তার ‘নিয়ন্ত্রিত’ কবিতাটি-
সংযত কর, সংহত কর উন্নত তব শির।
বিদ্রোহীÑ শুনে হাসি পায়।
বাঁধন-কারার কাঁদন কাঁদিয়া বিদ্রোহী হতে সাধ যায়?
সে কি সাজেরে পাগল সাজে তোর?

‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি প্রকাশের পর শনিবারের চিঠির সম্পাদক সজনীকান্ত দাস ১৩৩১ সালের ১৮ আশ্বিন সংখ্যায় ভাবকুমার প্রধান ছদ্মনামে ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটির প্যারোডি লিখেন ‘ব্যাঙ’ নামে।
আমি ব্যাঙ
লম্বা আমার ঠ্যাং
ভৈরব রভসে বরষা আসিলে ডাকি যে গ্যাঙোর গ্যাং।

এই প্যারোডি লিখেই তিনি ক্ষ্যান্তি দেননিÑ তিনি নজরুলকে ‘গাজী আব্বাস বিটকেল’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেন।
উপরে উল্লেখিত কবিতাটি প্রকাশিত হওয়ার পরে কাজী নজরুল ইসলাম ধরেই নিয়েছিলেন এই কাজটি করেছেন মোহিতলাল মজুমদার। কেননা মোহিতলালের সাথে নজরুলের ভাল বন্ধুত্বও ছিল। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশের পরে তাদের দুজনের বন্ধুত্বে ভাঙন ধরে। মোহিতবাবু দাবী তোলেন ‘মানসী’র ১৩২১-এর পৌষ সংখ্যায় তাঁর রচিত ‘আমি’ গদ্যের ভাব চুরি করে নজরুল এই কবিতাটি লেখেছেন। এখানে মুজফফর আহমদ-এর মতামত খুবই যুক্তিযুক্ত বলে মনে করছিÑ ‘মোহিতলাল নজরুলকে তাঁর লেখাটি এক বছর আগে শুনিয়েছিলেন। ‘আমি’ ও ‘বিদ্রোহী’ পাশাপাশি পড়লে কিছু সাদৃশ্য হয়তো পাওয়া যায়। কিন্তু ‘আমি’ একটি দার্শনিক গদ্যরচনা, আর ‘বিদ্রোহী’ ব্যক্তি আমি উন্মাদনাপূর্ণ এক অনবদ্য রচনা, যার রাজনৈতিক ও মানবিক দিকটি খুবই উল্লেখযোগ্য।’ নজরুল ‘ব্যাঙ’ প্যারোডি’র জবাবে লেখেন ‘সর্বনাশা ঘন্টা’ যা পরবর্তীতে তার ‘ফডু-মনসা’ কাব্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর উত্তরে আবার মোহিতলাল মজুমদার লেখলেন-‘দ্রোণ গুরু’ (৮ কার্তিক ১৩৩১)। এভাবেই সেসময় কবিতাটি লেখার জন্য চারিদিক থেকে নজরুলের উপর নিক্ষেপ করা হয় বাণ। কিন্তু নজরুল তো নুয়ে পড়ার পাত্র নয়। তিনি নিজের আপন কাজ চালিয়ে গেছেন আপন মনে। যে কারণে কেউ তাঁর পথকে ম্লান করতে পারেননি।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম যে সময় পর্বে এসে এই কবিতাটি রচনা করছেন সেই বিশ^যুদ্ধোত্তর সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি রাজনৈতিক আন্দোলনের চারিদিকে জয়জয়কার। এই সময় সুভাষচন্দ্র বসু রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন আবার গান্ধীর নেতৃত্বে শুরু হয়েছে ব্রিটিশবিরোধী অসহযোগ আন্দোলন। এই সময়পর্বেই সৃষ্টি কালোর্ত্তীন কবিতা ‘বিদ্রোহী’। এই বিষয়টি আরো একটু বোঝার জন্য সৈয়দ আজিজুল হক-এর ‘বিদ্রোহী’র শতবর্ষ, জাগরণের শতবর্ষ’ লেখাটি প্রডুধানযোগ্য- ‘আশ্রয়হীন এই কবির একমাত্র সঙ্গী সমাজতন্ত্রী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ মুজফফর আহমদ (১৮৮৯-১৯৭৩)। মুজফফর আহমদ-এর তখন ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা প্রবল। ১৯২০-এর সেপ্টেম্বরে কলকাতায় ভারতীয় কংগ্রেসের যে অধিবেশনে অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব গৃহীত হয়, তাতে সাংবাদিক হিসেবে এই দুজনই ছিলেন উপস্থিত। অতঃপর অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনের যৌথতায় স্বরাজের দাবিতে যখন প্রকম্পিত হয়ে ওঠে সারা ভারত, তখন কবিও তার সঙ্গে একান্তভাবে একাত্ম, মিছিলে সক্রিয়। ‘বিদ্রোহী’ রচনার মাসটিতেই গ্রেপ্তার হন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ; তাঁর পত্রিকার জন্য পরের মাসেই এক বৈঠকে লিখে ফেলেন সাড়া জাগানো সংগীত ‘ভাঙার গান’ [কারার ঐ লৌহ কপাট]। অন্যদিকে প্রথম বিশ^যুদ্ধ চলাকালেই সাম্রাজ্যগ্রাসী ইউরোপের ধনলোভী উন্মাদনার বিপরীতে সংঘটিত হয় রুশ বিপ্লবের মতো শোষণ মুক্তির দুনিয়া কাঁপানো ঘটনা। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনার সমসময়ে মস্কো থেকে প্রেরিত এম এন রায়ের দূতের সঙ্গে মুজফফর আহমদ ও তাঁর একান্ত সাক্ষাৎ ঘটে। ‘বিদ্রোহী’ রচনার মাসটিতেই মুজফফর আহমদ ও তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীরা নজরুলকে সঙ্গে নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ার কথা ভাবেন। নজরুল অবশ্য পার্টিতে সক্রিয় হননি; তবে বৈপ্লবিক সমাজ রূপান্তরের চেতনায় ছিলেন দারুণভাবে আন্দোলিত ও উজ্জীবিত।’২ এই যে নানাবিধ ঘটনার পরম্পরাও নজরুলকে এই বিদ্রোহী কবিতা রচনায় নানাভাবে তাড়িত করেছে।

এই সময় ছিল সামাজিক-রাজনৈতিক অর্থনৈতিকের বেপরোয়া অবস্থা। আর এসবের সাথেই মিলিত হয়েছিল কবির ব্যক্তিগতবোধ যা তাকে করে তুলেছিল প্রতিবাদী এবং নিজের মধ্যে জন্ম দিয়েছিলেন এক প্রতিবাদ প্রতিরোধী সত্ত্বা। প্রতিবাদে তিনি ছিলেন দুঃসাহসী, ভয়শূন্য। এই উপনিবেশবাদী শাসন-শোষণ আর অত্যাচার এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে নজরুলের কবিতার ভাষার এই ঝাঝাল উচ্চারণ ছিল সবচেয়ে সাহসিকতার পরিচয়।

এই সময় ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ছিল মুক্তিকামী মানুষের কাছে মুক্তির সনদ। যে কারণে প্রচুর জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তিনি এখানে যেভাবে বিদ্রোহী সুরে কথা বলছেন অনুরুপভাবেই প্রেমের কথারও প্রচার করেছেন। তিনি জানেন মানুষকে যেভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদী হতে হয় ঠিক সেভাবেই মানুষকে ভালোবাসতে হয়। যে কারণে তিনি বললেনÑ ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি, অন্য হাতে রণ-তূর্য!’ তিনি একদিকে প্রেমিক পুরুষ অন্য দিকে মুক্তিকামী বিদ্রোহী বীর। কোন বাঁধায় আজ তার কাছে বাঁধা বলে মনে হয় না। তিনি আজ সব বাধাকে অতিক্রম করে শুধু এগিয়ে যাবেন। আসলে সমাজে যারা তোষামোদে বা আপোষকামী তাদের ভয় Ñ কবিকে তো সেই ভয় পেতে হচ্ছে না। সে তো মুক্ত জীবনানন্দ। কিন্তু বুদ্ধদেব বসু যখন বলেনÑ নজরুলের ‘রচনায় সামাজিক ও রাজনৈতিক বিদ্রোহ আছে, কিন্তু সাহিত্যিক বিদ্রোহ নেই’।৩ তখন বলতেই হয় তাহলে কি এই বিদ্রোহের জন্যই এই কবিতাটা এতজন প্রিয়তা পেয়েছে? এর সাহিত্যিক কি কোন মূল্য নেয়? সাহিত্যিক মূল্য তো ঠিকই আছে যার মধ্যে আমরা দেখেছি এই কবিতায় সাহিত্যের সব গুণই বিদ্যমান। যে কারণে আমরা একজন রোমান্টিক প্রেমিক নজরুলের সন্ধান পাই যিনি শুধু প্রতিবাদীই না, প্রেমিকও বটে। একদিকে তিনি যেমন করে এই অন্যায় আর কপটাকে নিণ্ডিহ্ন করতে চান অপর দিকে সুন্দর পৃথিবী বিনির্মাণের প্রত্যাশাও করেন। তিনি সেই দিনই শান্ত হবেনÑ যেদিন ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না। নজরুল এই কবিতায় ছন্দের দিক থেকে তাঁর স্বাতন্ত্যতার পরিচয় দিয়েছেন। যা একেবারেই নতুন এবং এর প্রবর্তক তিনি নিজেই। এই ছন্দকে গবেষকগণ বলছেনÑ সমিল মুক্তক মাত্রাবৃত্ত। ছান্দসিক প্রবোধচন্দ্র সেন, আবদুল কাদির, কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ এই ‘বিদ্রোহী’ কবিতাকে প্রথম মুক্তক মাত্রাবৃত্ত কবিতা বলেও উল্লেখ করেছেন।

আরবি ফরসি শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত এবং দেশী শব্দের মিশেলে কাজী নজরুল ইসলাম হিন্দুু পুরাণ এবং মুসলিম মিথ ব্যবহারের যে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন, যা সত্যিই এক বিষ্ময়কর ব্যাপার। তিনি সব ধর্মের মানুষকে তো একই কাতারে দেখতে চেয়েছেন। যে কারণে কবির ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কেন্দ্রীয় চরিত্র শিব হয়েও তিনি বিশ্ব মানবমুক্তির কথা বলছেন। এই শিবকে কেন্দ্র করেই কবিতাটির ডালপালা বিস্তার লাভ করেছে। বারবার কবি সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক মুক্তির কথায় উল্লেখ করেছেনÑ তাঁর এই কবিতায় যেখানে ‘আমি’র’ আত্মঘোষণা। এই কবিতায় ‘আমি’র ব্যবহার সম্পর্কে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেছেনÑ ‘আসলে এই সৃষ্টিবিশ^¦ অসংখ্য ‘আমি’-র যোগফল হয়ে একটি সামষ্টিক আমি। তাই ‘আমি’-র মৌলার্থ যে কোনো সচেতন সত্তা। এই সচেতনতা আমার সঙ্গে তোমার বা তার সঙ্গে আমার দূরত্ব বিলীন করে সকল ব্যক্তিসত্তাকে একটি ভারসাম্যময় সূত্রে গ্রথিত করে। সকল সচেতন শক্তিসত্তার মধ্যে ‘আমি’-র এই সর্বব্যাপী একরৈখিকতা আপাত-অদৃশ্য; যা দৃশ্যমান তা হলো এই ‘আমি’-র বহুরূপতা, যা নানা রূপকে বিভাজিত ও উদ্ভাসিত।’৪

‘বিদ্রোহী’র এই শতবর্ষে এসে আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করি ‘বিদ্রোহী’ কবিতার প্রাসঙ্গিকতা। কারণ আজ চারিদিকে অসাম্যের দেয়াল তৈরি হয়েছে, মানুষ দিকে দিকে অত্যাচারিত-নিপীড়িত। ধনবানদের শোষণের শিকার এদেশের হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। নারী আজ পণ্যে রুপান্তিতÑ ধর্মান্ধতা আর ধর্মের গোঁড়ামীর দামামা চারিদিকে ধ্বনিত হচ্ছেÑ এই ধরাধামে-শুধু শোষিতের আহাজারি। এখানে মেরুদণ্ডহীনভাবে বাঁচাটা দুষ্কর। বাঁচতে হলে মেরুদণ্ড টান টান রাখাটা খুবই জরুরী। যে শিক্ষা নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা আমাদের দেয়। তাই আমাদের সময় এসেছে আজ নিজের মধ্যে আমিত্বকে জাগ্রত করে আরেকবার বলিÑ আমি মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত/আমি সেই দিন হব শান্ত,/যবে উৎপীড়নের/ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে/ধ্বনিবে নাÑ আমাদের এই প্রতিবাদ হোক অনিয়ম, অত্যাচার, বৈষম্য, কুসংস্কার আর শোষণ-বঞ্চণার বিরুদ্ধে যা ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সারাৎসার। আমরা যদি সত্য- ন্যায় আর সাম্যের পথ ধরে চলি তাহলে এই কবিতা যোগাবে আমাদের রসদ।

উল্লেখপঞ্জি :
১. আহমদ কবির বিদ্রোহীর’র নব্বই (প্রবন্ধ) ৮ জুলাই ২০১১ দৈনিক প্রথম আলো
২. সৈয়দ আজিজুল হক বিদ্রোহীর’র শতবর্ষ, জাগরণের শতবর্ষ (প্রবন্ধ) ২ শে মে ২০২১ দৈনিক প্রথম আলো
৩. যতীন সরকার নজরুলের বিদ্রোহ: সদর্থকতা ও সমগ্রতা (প্রবন্ধ) ৩জুন ২০১৪ বহুমাত্রিক.কম (অনলাইন)
৪. মুহম্মদ নূরুল হুদা নজরুল বিদ্রোহের স্বরুপ ও বিদ্রোহী কবিতা (প্রবন্ধ) ১৯জুন ২০১২ আর্টস বিডিনিউজ২৪.কম (অনলাইন)

ঋণ স্বীকার:
১. মোহীত উল আলম কবি নজরুলের বিদ্রোহীসত্তার স্বরুপ (প্রবন্ধ) ২৩ আগষ্ট ২০১৯ দৈনিক কালের কণ্ঠ
২. মজিদ মাহমুদ নজরুল তৃতীয় বিশে^র মুখপাত্র (গ্রন্থ)

 

 

#
জনপ্রিয়

নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ : বঙ্গ রাখাল

আপডেটের সময় : ০৯:০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩
শেয়ার করুন

বল বীর
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি, নত
শির ওই শিখর হিমাদ্রীর!
বল বীর
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি
চন্দ্র সূর্র্য গ্রহ তারা ছাড়ি
ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া,
খোদার আসন আরশ ছেদিয়া
উঠিয়াছি চির বিস্ময় আমি
বিশ্ব-বিধাত্রীর!
মম ললাটে রুদ্র-ভগবান
জ্বলে রাজ-রাগটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!
বল বীর
আমি চির-উন্নত শির!…

কাজী নজরুল ইসলাম-এর (১৮৯৯-১৯৭৬) নাম উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথেই আমাদের মনের মধ্যে আরেকটি শব্দ চটজলদি মাথা চারা দিয়ে ওঠে আর সেটি ‘বিদ্রোহী’ কবি। ‘১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসের কোন এক নিঝুম রাতে কবি লেখেছিলেন বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে বেশি আলোচিত-সমালোচিত এই ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি। সেনাবাহিনি থেকে সবে ফিরেছেন এই ২২ বছরের টকবগে তারুণ্যদীপ্ত যুবক। বুকের মধ্যে তুমুল বারুদ, রক্তে তাঁর আগুন জ্বলে। তিনি সৈনিক থাকা অবস্থাতেও অনেক রাজনৈতিক নিষিদ্ধ বইপত্র পড়েছেন বলে জানা যায় তাঁর ‘ব্যথার দান গল্পের ‘লাল ফৌজ’ শব্দের ব্যবহারে সাইফুল মুলক চরিত্রের মধ্যেই বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। এই যে নজরুলের বিদ্রোহীসত্ত্বা একদিনে তৈরি হয়নি বা বানোয়াট কোন সত্ত্বা না। এটি ধীরে ধীরে নিজের মধ্যে কবি লাল করেছেন। কারণ এই যে চোখের সামনের মানুষগুলোর জীবনযাপন দিনকে দিন তাকে ব্যথিত করেছে। তিনি ধর্মান্ধ কিংবা গোঁড়াদের বিরুদ্ধে সর্বদা থেকেছেন সোচ্চার। ঠিক একই প্রশ্নে তা আজও প্রাসঙ্গিক হয়ে আছে। সত্যিই তিনি সেই কবি যিনি বৈষম্যহীন এক অসাম্প্রদায়িক সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য শাসক-শোষক-মোল্লা-পুরুত কিংবা সমাজপতিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের খোড়ক তুলে ধরেছেন। এর বাস্তবচিত্রই আমরা কবির লেখা প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁর কাছে চিঠিতে দেখাতে পাই – ‘বিদ্রোহী’র জয়-তিলক আমার ললাটে অক্ষয় হয়ে গেল আমার তরুণ বন্ধুদের ভালোবাসায়। একে অনেকেই কলঙ্ক তিলক বলে ভুল করেছে, কিন্তু আমি করিনি। বেদনা-সুন্দরের গান গেয়েছি বলেই কি আমি সত্য সুন্দরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছি? আমি বিদ্রোহ করেছি-বিদ্রোহের গান গেয়েছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে- যা মিথ্যা, কলুষিত, পুরাতন-পঁচা সেই মিথ্যা সনাতনের বিরুদ্ধে। হয়তো আমি সব কথা মোলায়েম করে বলতে পারিনি, তলোয়ার লুকিয়ে তার রূপার খাপের ঝক্মকানিটাকেই দেখাইনি- এই তো আমার অপরাধ। এরই জন্য তো আমি বিদ্রোহী। আমি এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছি, সমাজের সকল কিছু কুসংস্কারের বিধি- নিষেধের বেড়া অকুতোভয়ে ডিঙিয়ে গেছি, এর দরকার ছিল মনে করেই।’

কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি কবে কোথায় কিংবা কোন পত্রিকায় তাঁর ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রথম ছাপা হয়েছিল তা নিয়ে বিজ্ঞমহলে এক ধরনের বিতর্ক থাকলেও তা আজ আমাদের কাছে দিবালোকের মত পরিষ্কার। কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ-অগ্নিবীণা’র দ্বিতীয় কবিতা ‘বিদ্রোহী’। তিনি এই গ্রন্থটি উৎসর্গ করেন বিপ্লবী নেতা বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে। এই ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি রচনা নিয়ে নজরুল চরিত মানস গ্রন্থের রচয়িতা সুশীলকুমার সেনগুপ্ত জানান- এই কবিতাটি রচিত হয়েছে ১৯২১ সালের দুর্গাপুজার সময়। এই তথ্য প্রথম দিকে মুজফফর প্রচার করলেও পরবর্তীতে তিনি তাঁর নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা গ্রন্থে- ভুল স্বীকার করে বলছেন- তিনি ‘বিদ্রোহী’ রচনার ভুল তথ্য দিয়ে অন্যায় করেছেন। এই ‘বিদ্রোহী’ রচিত হয়েছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের দিকে। এই প্রসঙ্গে নজরুল গবেষক আহমদ কবির এর ‘বিদ্রোহীর’র নব্বই’ প্রবন্ধটি দেখে নেওয়া যেতে পারে। যেটি ৮ই জুলাই ২০১১ সালে ‘দৈনিক প্রথম আলো’তে প্রকাশিত হয়েছিল-‘মুজফফর আহমদের দেওয়া তথ্যে জানা যাচ্ছে, ‘বিদ্রোহী’ কবিতা কলকাতার ৩/৪ সি তালতলা লেন বাড়িতে রচিত হয়েছিল। ১৯২০ সালে ঊনপঞ্চাশ নম্বর বাঙালি পল্টন ভেঙে গেলে নজরুল প্রথমে তাঁর সতীর্থ কথাসাহিত্যিক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের বাসায় ওঠেন, সেখানে কয়েক দিন থেকে আরেকটি বাসস্থানে, পরে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিটে উঠলেন। সেখানে তাঁর বন্ধু মুজফফর আহমদ থাকেন। তাঁর সঙ্গে নজরুল একত্র বসবাস করেছেন আরও কয়েকটি বাসায়, শেষে ৩/৪ সি তালতলা লেনে।… ‘এই ঘরেই কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘বিদ্রোহী’ কবিতা লিখেছিল। সে কবিতাটি লিখেছিল রাত্রিতে। রাত্রির কোন সময়ে তা আমি জানিনে। রাত ১০টার পরে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলেম। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে আমি বসেছি এমন সময় নজরুল বললÑ সে একটি কবিতা লিখেছে। পুরো কবিতাটি সে তখন আমায় পড়ে শোনাল। ‘বিদ্রোহী’ কবিতার আমিই প্রথম শ্রোতা।’ মুজফফর আহমদ আরো জানাচ্ছেনÑ নিজের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যের কারণেই কবিতাটি শুনে তিনি কোনো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেননি। এতে নজরুল মনে মনে আহত হয়েছেন নিণ্ডয়ই।… ‘আমার মনে হয় নজরুল ইসলাম শেষ রাত্রে ঘুম থেকে উঠে কবিতাটি লিখেছিল। তা না হলে এত সকালে সে আমায় কবিতা পড়ে শোনাতে পারত না। তাঁর ঘুম সাধারণত দেরীতেই ভাঙত, আমার মতো তাড়াতাড়ি তাঁর ঘুম ভাঙত না।’…, নজরুল সম্ভবত প্রথমে কবিতাটি পেনসিলে লিখেছিলেন। আহমদ কবির আরো লিখেন… ‘বিদ্রোহী’ কোন পত্রিকায় প্রথম ছাপা হয়েছিল সে নিয়েও বিতর্ক আছে। নজরুল রচনাবলীর (বাংলা একাডেমি) সম্পাদক আবদুল কাদির প্রথম খণ্ডের গ্রন্থ পরিচয়ে জানিয়েছেন, ‘বিদ্রোহী’ ১৩২৮ কার্তিকে ২য় বর্ষের ৩য় সংখ্যক ‘মোসলেম ভারত’-এ বাহির হইয়াছিল। ১৩২৮ সালের ২২শে পৌষের সাপ্তাহিক বিজলীতে এবং ১৩২৮ মাঘের ‘প্রবাসী’তে উহা সংকলিত হইয়াছিল।’ আবদুল কাদির এ তথ্যও জানিয়েছেন যে ‘মোসলেম ভারতে’ প্রকাশিত ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় আরও কয়েকটি চরণ ছিল, যেগুলো পরে পরিত্যক্ত হয়েছে। কিন্তু মুজফফর আহমদ বলেছেনÑ ‘বিদ্রোহী’ প্রথমে সাপ্তাহিক ‘বিজলী’ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে (১৯২১ সালের ৬ জানুয়ারি, ২২ পৌষ ১৩২৮ বঙ্গাব্দ) তিনি আরো বলেনÑ ‘বিদ্রোহী’ প্রথম ছাপানোর সম্মান বিজলীরই প্রাপ্য।’ এ কথা অবশ্য ঠিক যে ‘মোসলেম ভারতে’ প্রকাশের জন্য নজরুল ‘বিদ্রোহী’ কবিতা সম্পাদক আফজালুল হককে প্রথমে দিয়েছিলেন। কিন্তু ‘মোসলেম ভারতে’র কথিত সংখ্যাটি বের হতে দেরি হয়ে গিয়েছিল।’১

এই ‘বিদ্রোহী’ কবিতার উৎসমূল অনুসন্ধান করতে গিয়ে অনেকেই অনেক মত পোষণ করেছেন তবে কবি কাজী নজরুল ইসলাম নিজেই এর সম্পর্কে বলেছেন- ‘বিদ্রোহী করেছে মোরে আমার যত বেশি অভিমান’। শুধু এটাই শেষ কথা না। তিনি ১৯২৯ সনে কলকাতার এলবার্ট হলে এক অভিভাষণে বলেন- ‘তাঁকে ‘বিদ্রোহী’ বলে যারা লোকের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে তারা হাফেজ কিংবা ওমর খৈয়ামকে পড়েননি। পড়লে তাঁকে ‘বিদ্রোহী’ বলে লজ্জা দিতো না।’ কিন্তু এই কবিতাটা প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে একদিকে কাজী নজরুল ইসলাম যেমন আলোচিত হয়েছিলেন ঠিক অন্য দিকে তেমনি সমালোচিতও হয়েছিলেন। লেখক মুন্সি মোহাম্মদ রেজাউদ্দিন আহম্মদ তাঁকে ‘খোদাদ্রোহী নরাধম’ বলে আখ্যা দেন। কবি গোলাম মোস্তফা এই ‘বিদ্রোহী’ কবিতার প্রতিক্রিয়াস্বরুপ লেখেন তার ‘নিয়ন্ত্রিত’ কবিতাটি-
সংযত কর, সংহত কর উন্নত তব শির।
বিদ্রোহীÑ শুনে হাসি পায়।
বাঁধন-কারার কাঁদন কাঁদিয়া বিদ্রোহী হতে সাধ যায়?
সে কি সাজেরে পাগল সাজে তোর?

‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি প্রকাশের পর শনিবারের চিঠির সম্পাদক সজনীকান্ত দাস ১৩৩১ সালের ১৮ আশ্বিন সংখ্যায় ভাবকুমার প্রধান ছদ্মনামে ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটির প্যারোডি লিখেন ‘ব্যাঙ’ নামে।
আমি ব্যাঙ
লম্বা আমার ঠ্যাং
ভৈরব রভসে বরষা আসিলে ডাকি যে গ্যাঙোর গ্যাং।

এই প্যারোডি লিখেই তিনি ক্ষ্যান্তি দেননিÑ তিনি নজরুলকে ‘গাজী আব্বাস বিটকেল’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেন।
উপরে উল্লেখিত কবিতাটি প্রকাশিত হওয়ার পরে কাজী নজরুল ইসলাম ধরেই নিয়েছিলেন এই কাজটি করেছেন মোহিতলাল মজুমদার। কেননা মোহিতলালের সাথে নজরুলের ভাল বন্ধুত্বও ছিল। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশের পরে তাদের দুজনের বন্ধুত্বে ভাঙন ধরে। মোহিতবাবু দাবী তোলেন ‘মানসী’র ১৩২১-এর পৌষ সংখ্যায় তাঁর রচিত ‘আমি’ গদ্যের ভাব চুরি করে নজরুল এই কবিতাটি লেখেছেন। এখানে মুজফফর আহমদ-এর মতামত খুবই যুক্তিযুক্ত বলে মনে করছিÑ ‘মোহিতলাল নজরুলকে তাঁর লেখাটি এক বছর আগে শুনিয়েছিলেন। ‘আমি’ ও ‘বিদ্রোহী’ পাশাপাশি পড়লে কিছু সাদৃশ্য হয়তো পাওয়া যায়। কিন্তু ‘আমি’ একটি দার্শনিক গদ্যরচনা, আর ‘বিদ্রোহী’ ব্যক্তি আমি উন্মাদনাপূর্ণ এক অনবদ্য রচনা, যার রাজনৈতিক ও মানবিক দিকটি খুবই উল্লেখযোগ্য।’ নজরুল ‘ব্যাঙ’ প্যারোডি’র জবাবে লেখেন ‘সর্বনাশা ঘন্টা’ যা পরবর্তীতে তার ‘ফডু-মনসা’ কাব্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর উত্তরে আবার মোহিতলাল মজুমদার লেখলেন-‘দ্রোণ গুরু’ (৮ কার্তিক ১৩৩১)। এভাবেই সেসময় কবিতাটি লেখার জন্য চারিদিক থেকে নজরুলের উপর নিক্ষেপ করা হয় বাণ। কিন্তু নজরুল তো নুয়ে পড়ার পাত্র নয়। তিনি নিজের আপন কাজ চালিয়ে গেছেন আপন মনে। যে কারণে কেউ তাঁর পথকে ম্লান করতে পারেননি।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম যে সময় পর্বে এসে এই কবিতাটি রচনা করছেন সেই বিশ^যুদ্ধোত্তর সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি রাজনৈতিক আন্দোলনের চারিদিকে জয়জয়কার। এই সময় সুভাষচন্দ্র বসু রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন আবার গান্ধীর নেতৃত্বে শুরু হয়েছে ব্রিটিশবিরোধী অসহযোগ আন্দোলন। এই সময়পর্বেই সৃষ্টি কালোর্ত্তীন কবিতা ‘বিদ্রোহী’। এই বিষয়টি আরো একটু বোঝার জন্য সৈয়দ আজিজুল হক-এর ‘বিদ্রোহী’র শতবর্ষ, জাগরণের শতবর্ষ’ লেখাটি প্রডুধানযোগ্য- ‘আশ্রয়হীন এই কবির একমাত্র সঙ্গী সমাজতন্ত্রী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ মুজফফর আহমদ (১৮৮৯-১৯৭৩)। মুজফফর আহমদ-এর তখন ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা প্রবল। ১৯২০-এর সেপ্টেম্বরে কলকাতায় ভারতীয় কংগ্রেসের যে অধিবেশনে অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব গৃহীত হয়, তাতে সাংবাদিক হিসেবে এই দুজনই ছিলেন উপস্থিত। অতঃপর অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনের যৌথতায় স্বরাজের দাবিতে যখন প্রকম্পিত হয়ে ওঠে সারা ভারত, তখন কবিও তার সঙ্গে একান্তভাবে একাত্ম, মিছিলে সক্রিয়। ‘বিদ্রোহী’ রচনার মাসটিতেই গ্রেপ্তার হন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ; তাঁর পত্রিকার জন্য পরের মাসেই এক বৈঠকে লিখে ফেলেন সাড়া জাগানো সংগীত ‘ভাঙার গান’ [কারার ঐ লৌহ কপাট]। অন্যদিকে প্রথম বিশ^যুদ্ধ চলাকালেই সাম্রাজ্যগ্রাসী ইউরোপের ধনলোভী উন্মাদনার বিপরীতে সংঘটিত হয় রুশ বিপ্লবের মতো শোষণ মুক্তির দুনিয়া কাঁপানো ঘটনা। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনার সমসময়ে মস্কো থেকে প্রেরিত এম এন রায়ের দূতের সঙ্গে মুজফফর আহমদ ও তাঁর একান্ত সাক্ষাৎ ঘটে। ‘বিদ্রোহী’ রচনার মাসটিতেই মুজফফর আহমদ ও তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীরা নজরুলকে সঙ্গে নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ার কথা ভাবেন। নজরুল অবশ্য পার্টিতে সক্রিয় হননি; তবে বৈপ্লবিক সমাজ রূপান্তরের চেতনায় ছিলেন দারুণভাবে আন্দোলিত ও উজ্জীবিত।’২ এই যে নানাবিধ ঘটনার পরম্পরাও নজরুলকে এই বিদ্রোহী কবিতা রচনায় নানাভাবে তাড়িত করেছে।

এই সময় ছিল সামাজিক-রাজনৈতিক অর্থনৈতিকের বেপরোয়া অবস্থা। আর এসবের সাথেই মিলিত হয়েছিল কবির ব্যক্তিগতবোধ যা তাকে করে তুলেছিল প্রতিবাদী এবং নিজের মধ্যে জন্ম দিয়েছিলেন এক প্রতিবাদ প্রতিরোধী সত্ত্বা। প্রতিবাদে তিনি ছিলেন দুঃসাহসী, ভয়শূন্য। এই উপনিবেশবাদী শাসন-শোষণ আর অত্যাচার এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে নজরুলের কবিতার ভাষার এই ঝাঝাল উচ্চারণ ছিল সবচেয়ে সাহসিকতার পরিচয়।

এই সময় ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ছিল মুক্তিকামী মানুষের কাছে মুক্তির সনদ। যে কারণে প্রচুর জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তিনি এখানে যেভাবে বিদ্রোহী সুরে কথা বলছেন অনুরুপভাবেই প্রেমের কথারও প্রচার করেছেন। তিনি জানেন মানুষকে যেভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদী হতে হয় ঠিক সেভাবেই মানুষকে ভালোবাসতে হয়। যে কারণে তিনি বললেনÑ ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি, অন্য হাতে রণ-তূর্য!’ তিনি একদিকে প্রেমিক পুরুষ অন্য দিকে মুক্তিকামী বিদ্রোহী বীর। কোন বাঁধায় আজ তার কাছে বাঁধা বলে মনে হয় না। তিনি আজ সব বাধাকে অতিক্রম করে শুধু এগিয়ে যাবেন। আসলে সমাজে যারা তোষামোদে বা আপোষকামী তাদের ভয় Ñ কবিকে তো সেই ভয় পেতে হচ্ছে না। সে তো মুক্ত জীবনানন্দ। কিন্তু বুদ্ধদেব বসু যখন বলেনÑ নজরুলের ‘রচনায় সামাজিক ও রাজনৈতিক বিদ্রোহ আছে, কিন্তু সাহিত্যিক বিদ্রোহ নেই’।৩ তখন বলতেই হয় তাহলে কি এই বিদ্রোহের জন্যই এই কবিতাটা এতজন প্রিয়তা পেয়েছে? এর সাহিত্যিক কি কোন মূল্য নেয়? সাহিত্যিক মূল্য তো ঠিকই আছে যার মধ্যে আমরা দেখেছি এই কবিতায় সাহিত্যের সব গুণই বিদ্যমান। যে কারণে আমরা একজন রোমান্টিক প্রেমিক নজরুলের সন্ধান পাই যিনি শুধু প্রতিবাদীই না, প্রেমিকও বটে। একদিকে তিনি যেমন করে এই অন্যায় আর কপটাকে নিণ্ডিহ্ন করতে চান অপর দিকে সুন্দর পৃথিবী বিনির্মাণের প্রত্যাশাও করেন। তিনি সেই দিনই শান্ত হবেনÑ যেদিন ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না। নজরুল এই কবিতায় ছন্দের দিক থেকে তাঁর স্বাতন্ত্যতার পরিচয় দিয়েছেন। যা একেবারেই নতুন এবং এর প্রবর্তক তিনি নিজেই। এই ছন্দকে গবেষকগণ বলছেনÑ সমিল মুক্তক মাত্রাবৃত্ত। ছান্দসিক প্রবোধচন্দ্র সেন, আবদুল কাদির, কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ এই ‘বিদ্রোহী’ কবিতাকে প্রথম মুক্তক মাত্রাবৃত্ত কবিতা বলেও উল্লেখ করেছেন।

আরবি ফরসি শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত এবং দেশী শব্দের মিশেলে কাজী নজরুল ইসলাম হিন্দুু পুরাণ এবং মুসলিম মিথ ব্যবহারের যে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন, যা সত্যিই এক বিষ্ময়কর ব্যাপার। তিনি সব ধর্মের মানুষকে তো একই কাতারে দেখতে চেয়েছেন। যে কারণে কবির ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কেন্দ্রীয় চরিত্র শিব হয়েও তিনি বিশ্ব মানবমুক্তির কথা বলছেন। এই শিবকে কেন্দ্র করেই কবিতাটির ডালপালা বিস্তার লাভ করেছে। বারবার কবি সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক মুক্তির কথায় উল্লেখ করেছেনÑ তাঁর এই কবিতায় যেখানে ‘আমি’র’ আত্মঘোষণা। এই কবিতায় ‘আমি’র ব্যবহার সম্পর্কে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেছেনÑ ‘আসলে এই সৃষ্টিবিশ^¦ অসংখ্য ‘আমি’-র যোগফল হয়ে একটি সামষ্টিক আমি। তাই ‘আমি’-র মৌলার্থ যে কোনো সচেতন সত্তা। এই সচেতনতা আমার সঙ্গে তোমার বা তার সঙ্গে আমার দূরত্ব বিলীন করে সকল ব্যক্তিসত্তাকে একটি ভারসাম্যময় সূত্রে গ্রথিত করে। সকল সচেতন শক্তিসত্তার মধ্যে ‘আমি’-র এই সর্বব্যাপী একরৈখিকতা আপাত-অদৃশ্য; যা দৃশ্যমান তা হলো এই ‘আমি’-র বহুরূপতা, যা নানা রূপকে বিভাজিত ও উদ্ভাসিত।’৪

‘বিদ্রোহী’র এই শতবর্ষে এসে আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করি ‘বিদ্রোহী’ কবিতার প্রাসঙ্গিকতা। কারণ আজ চারিদিকে অসাম্যের দেয়াল তৈরি হয়েছে, মানুষ দিকে দিকে অত্যাচারিত-নিপীড়িত। ধনবানদের শোষণের শিকার এদেশের হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। নারী আজ পণ্যে রুপান্তিতÑ ধর্মান্ধতা আর ধর্মের গোঁড়ামীর দামামা চারিদিকে ধ্বনিত হচ্ছেÑ এই ধরাধামে-শুধু শোষিতের আহাজারি। এখানে মেরুদণ্ডহীনভাবে বাঁচাটা দুষ্কর। বাঁচতে হলে মেরুদণ্ড টান টান রাখাটা খুবই জরুরী। যে শিক্ষা নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা আমাদের দেয়। তাই আমাদের সময় এসেছে আজ নিজের মধ্যে আমিত্বকে জাগ্রত করে আরেকবার বলিÑ আমি মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত/আমি সেই দিন হব শান্ত,/যবে উৎপীড়নের/ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে/ধ্বনিবে নাÑ আমাদের এই প্রতিবাদ হোক অনিয়ম, অত্যাচার, বৈষম্য, কুসংস্কার আর শোষণ-বঞ্চণার বিরুদ্ধে যা ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সারাৎসার। আমরা যদি সত্য- ন্যায় আর সাম্যের পথ ধরে চলি তাহলে এই কবিতা যোগাবে আমাদের রসদ।

উল্লেখপঞ্জি :
১. আহমদ কবির বিদ্রোহীর’র নব্বই (প্রবন্ধ) ৮ জুলাই ২০১১ দৈনিক প্রথম আলো
২. সৈয়দ আজিজুল হক বিদ্রোহীর’র শতবর্ষ, জাগরণের শতবর্ষ (প্রবন্ধ) ২ শে মে ২০২১ দৈনিক প্রথম আলো
৩. যতীন সরকার নজরুলের বিদ্রোহ: সদর্থকতা ও সমগ্রতা (প্রবন্ধ) ৩জুন ২০১৪ বহুমাত্রিক.কম (অনলাইন)
৪. মুহম্মদ নূরুল হুদা নজরুল বিদ্রোহের স্বরুপ ও বিদ্রোহী কবিতা (প্রবন্ধ) ১৯জুন ২০১২ আর্টস বিডিনিউজ২৪.কম (অনলাইন)

ঋণ স্বীকার:
১. মোহীত উল আলম কবি নজরুলের বিদ্রোহীসত্তার স্বরুপ (প্রবন্ধ) ২৩ আগষ্ট ২০১৯ দৈনিক কালের কণ্ঠ
২. মজিদ মাহমুদ নজরুল তৃতীয় বিশে^র মুখপাত্র (গ্রন্থ)