8:54 pm, Sunday, 22 December 2024

আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়

  • কারুবাক
  • আপডেটের সময় : ০৯:৪৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩
  • 225 ভিউ
শেয়ার করুন

আব্দুল কাদের রুহানী

মানুষকে আল্লাহ তায়ালা অগণিত অসংখ্য হেকমত শিক্ষা দিয়েছেন। যাতে আল্লাহর প্রিয় সৃষ্টি মানুষ কোন ভাবেই বিপথগামী না হয়। পরকালিন জিন্দেগিতে সহজেই আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে ধন্য হয়। জাহান্নামের ভয়াবহতা ও আজাব হতে রক্ষা পায়। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-
হে ঈমানদারগণ আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর দরবারে নৈকট্য লাভের উপায় অনুসন্ধান করো। এবং তার পথে প্রচেষ্টা ও সাধনা করো। সম্ভবত তোমরা সফলকাম হতে পারবে। (সুরা মায়িদা, আয়াত নং ৩৫)
অর্থ্যাৎ আপনি এমন প্রত্যেকটি উপায় অনুসন্ধান করবেন যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে এবং তার সন্তুষ্টি অজনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন। আল্লাহ নৈকট্য অজনের পথে যেসব শক্তি প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে যারা আল্লাহর মর্জি অনুসারে চলতে বাঁধা দেয় এবং তার পথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যারা আল্লাহর বান্দা হিসাবে জীবন-যাপন করতে দেয় না। এবং নিজের বা আল্লাহ ছাড়া আর কারোও বান্দাহ হওয়ার জন্য বাধ্য করে তাদের বিরুদ্ধে নিজেদের সম্ভাব্য সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। এপ্রচেষ্টা ও সংগ্রামের উপর আপনার সাফল্য এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ নিভর করছে।
আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথে আপনার বাধা হতে পারে অভিশপ্ত ইবলিস এবং তার শয়তানি সেনাদল। অন্যদিকে আছে মানুষের নিজের নফস ও তাঁর বিদ্রোহী প্রবৃত্তি এছাড়াও আছে এমন এক আল্লাহ বিমুখ মানবগোষ্ঠী যাদের সাথে মানুষ সব ধরনের সামাজিক তামাদ্দুনিক ও অথনৈতিক সম্পক। সবশেষ যে দিকটি আছে এমন ভ্রান্তধর্মীয় তামাদ্দুনিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা যার ভিত্তিকে গড়ে উঠেছে আল্লাহ বিরুদ্ধে বিদ্রোহের উপর তা সত্যের আনুগত্য করার পরিবর্তে মিথ্যার আনুগত্য করতে মানুষকে বাধ্য করে এসকল শয়তানী বাঁধা উপেক্ষা করে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে তার হুকুমকে প্রাধন্য দেওয়া।
মানুষের ভালোবাসার মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া যায়। আর মানুষকে ভালোবাসতে হলে নিজ নিজ আচার ব্যবহার কথাবার্তা ও চালচলনে কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে হয়। যেমন- সবদা হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় মানুষের সাথে কথা বলা এবং দেখা সাক্ষাৎ করা। আমাদের প্রিয় নবী (সা:) সবদা হাস্যোজ্জ্বল থাকতেন। হাসিমুখে মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা, বন্ধুন্ত্ব সৃষ্টির একটি বিশ্বজনীন পদ্ধতি। এ বিষয়ে হাদিসে রাসুল (সা:) বলেন, তোমার ভাইয়ের সম্মুখে তোমার মুচকি হাসি একটি সদকা। (তিরমিযী)
মানুষের কল্যাণে, অভাবে, অনাটনে এগিয়ে আসা। মানুষের হৃদয় জয় করার বড় একটি মাধ্যম। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন- যারা সচ্ছ্বল ও অসচ্ছ্বল সব অবস্থায় অথসম্পদ ব্যয় করে এবং যাঁরা ক্রোধ দমন করে ও অন্যের দোষত্রুটি মাফ করে দেয় এ ধরনের সৎ লোকদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন। (সুরা আল-ইমরান, আয়াত ১৩৪)
আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য ফরজ ইবাদত পালনের পাশাপাশি বেশি বেশি নফল ইবাদত পালন অন্যতম মাধ্যম। বিশেষ করে নফল সিয়াম, দান সদকা, ইলেম অজন ইত্যাদি ইবাদত পালনের চেষ্টা করা। নফল সিয়াম মুমিনের জীবনে অন্যতম ইবাদত। রাসুল (সা:) ও তাঁর সাহাবীগণ নফল সিয়াম পালনের বিষয়ে খুবই গুরুত্ব আরোপ করতেন। তারা নিয়মিত ও অনিয়মিত নফল সিয়াম পালন করতেন। প্রতি দু’দিন পর একদিন বা একদিন পর একদিন বা প্রতি সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার প্রতি আরবী মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ প্রতি মাসের প্রথমে ও শেষে সিয়াম পালনের বিশেষ উৎসাহ প্রদান করেছেন।
মানুষের অভাব চিরন্তর। মনের অভাব থেকেই কেউ মুক্ত নয়। নফল দান, সদকা, সাহায্য অত্যন্ত গুরুত্বপূণ ইবাদত। এ জন্য প্রত্যেক মুমিনের নিয়মিত ও অনিয়মিত দানের অভ্যাস রাখা প্রয়োজন। আর মুমিন সবদা চেষ্টা করবেন গরীব দুঃখী, এতিম বিধবা অসহায় বা অভাবী মানুষকে সাহায্য করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে প্রিয় হবার জন্য সবদা সাধ্যমত দান করার অভ্যাস গড়ে তোলা।

আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত কারা
সারা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক মহান আল্লাহ তায়ালা তার নৈকট্য প্রাপ্ত বান্দাদের পরিচয় পবিত্র কুরআনুল কারিমে তুলে ধরেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-
আর অগ্রগামীরা তো অগ্রগামীই। তারাই তো নৈকট্য লাভকারী। তারা নিয়ামতে ভরা জান্নাতে থাকবে। (সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত ১০, ১১, ১২)
উক্ত আয়াতের শুরুতে সাবেকুন (অগ্রগামীগণ) অথ যারা সৎ কাজ ও ন্যায়পরায়ণতায় সবাইকে অতিক্রম করেছে, প্রতিটি কল্যাণের কাজে সবাই আগে থেকেছে, আল্লাহ ও রাসুলের আহবানের ব্যাপারে সবার আগে সাড়া দিয়েছে, জনসেবার ব্যাপারে হোক কিংবা কল্যাণের পথে হোক কিংবা জিহাদের ব্যাপারে হোক কিংবা আল্লাহর পথে খরচের ব্যাপারে হোক কিংবা আল্লাহর পথে দাওয়াত কিংবা সত্যের পথে দাওয়াতের কাজে হোক মোট কথা পৃথিবীতে কল্যাণের প্রসার এবং অকল্যাণের উচ্ছেদের জন্য ত্যাগ ও কুরবাণী এবং শ্রমদান জীবনপনের যে সুযোগই এসেছে তাতে সে-ই অগ্রগামী হয়ে কাজ করেছে।
এ কারণে আখিরাতেও তাদেরকে সবার আগে রাখা হবে। অর্থাৎ আখিরাতে আল্লাহ তায়ালার দরবারের চিত্র হবে এই যে, ডানে সলেহীন বা নেককারগণ বাঁয়ে থাকবে ফাসেক বা পাপীরা। এবং সবার আগে আল্লাহ তায়ালার দরবারের নিকটে থাকবেন অগ্রগামীগণ।
এ সম্পর্কে হাদিসে হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত, যে রাসুল (সা:) লোকদের জিঞ্জাসা করলেন, তোমরা কি জান কিয়ামতের দিন কারা সবপ্রথম পৌছাবে এবং আল্লাহর ছায়ায় স্থান লাভ করবে? সবাই বললেন আল্লাহ এবং আল্লাহ রাসুলই ভাল জানেন। তখন রাসুল (সা:) বললেন যাদের অবস্থা ছিল এই যে, তাদের সামনে যখনই সত্য পেশ করা হয়েছে, তা গ্রহণ করেছে যখনই তাদের কাছে প্রাপ্য চাওয়া হয়েছে তখনই তা দিয়ে দিয়েছে। আর তারা নিজেদের ব্যাপারে যে ফয়সালা করেছে অন্যদের ব্যাপারেও সেই ফয়সালা করেছে। (মুসনাদে আহমদ)
একজন মুমিন সবদা আল্লাহকে ভালোবাসে তার নৈকট্য লাভের আশায়। আল্লাহর ভালোবাসাই ফুটে উঠেছে মুমিনদের জীবন। যারা আল্লাহকে রব হিসাবে মেনে নিয়েছে জীবনের প্রতিটি মূহুর্তে মুমিন তার রবেরে সান্নিধ্য অনুভব করে। সে জানে আল্লাহর রহমত তাকে সবদা ঘিরে রাখে। আল্লাহ তায়ালা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং রিজিক দিচ্ছেন। সব ধরনের বালা-মুসিবত থেকে তাকে হিফাজত করছেন। নেয়ামতের সাগরে তাকে ডুবিয়ে রেখেছেন। মুমিন যখন আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ করে এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষণে সে চিন্তা করে মহান আল্লাহ তাকে দেখছেন তাই সে বড় আদব ও বিনয়ের সঙ্গে দিন যাবন করে। মহান আল্লাহ ওকে প্রাণভরে ভালোবাসেন। রবের নাফরমানি থেকে যত সম্ভব দূরে থাকে আল্লাহর সব হুকুম আহকাম মেনে চলে, সব সময় আল্লাহর যিকিরে মাশগুল থাকে। আল্লাহ বলেন-

যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের হৃদয় পরিতৃপ্ত হয় যেনে রেখ আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্ত হয়। (সুরা রাদ, আয়াত ২৮)
প্রিয় নবী (সা:) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার ব্যাপারে বান্দা যেরুপ ধারণা রাখে আমিও তার সাথে সেরূপ আচরণ করি। সে যখন আমার যিকির করে আমি তার সাথে থাকি, সে যখন একাকি মনে মনে আমাকে স্মরণ করে আমিও তাকে মনে মনে স্মরণ করি। সে যখন কোন মজলিসে আমাকে স্মরণ করে, আমি তার চেয়ে উত্তম মজলিসে তাকে স্মরণ করি। সে যদি আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হয়। সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হলে আমি তার দিকে দুই হাত অগ্রসর হয়। সে আমার দিকে হেঁটে আসলে আমি তার দিকে দৌঁড়ে যায়। (বুখারী, ৭৪০৫)
সুতরাং একজন মুমিন যে অবস্থায় থাকুক না কেন, সবদা আল্লাহর ভালোবাসার তার তাসবীহ পাঠ করবেন, তার প্রতি ভরসা করবেন। আল্লাহর সকল ফয়সালাকে সে মেনে নেয় বিনিময়ে সে আল্লাহর নৈকট্য অজন করতে চাই, আর আল্লাহর ভালোবাসাই জুড়িয়ে ওঠে প্রতিটি মুমিনের হৃদয়।

আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্তদের জন্য রয়েছে শান্তি
প্রতিটি মুমিনের একমাত্র চাওয়া আল্লাহর নৈকট্য লাভ। যার বিনিময়ে মহান আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন চিরস্থায়ী সুখের স্থান তথা জান্নাত। কিন্তু অপরদিকে যারা তাগুতকে বিশ্বাস করে বিপদগামী তার দিকে ছুটছে। আল্লাহ তাদের জন্য রেখেছেন শাস্তি ও আযাবের স্থান তথা জাহান্নাম। আল্লাহ বলেন-
সুতরাং যদি যে নৈকট্য প্রাপ্তদের একজন হয়, তার জন্য রয়েছে আরাম আয়েশ, উত্তম রিজিক এবং নেয়ামতে ভরা জান্নাত। আর সে যদি ডানদিকের লোক হয়ে থাকে, তাহলে তাকে সাদর অভিনন্দন জানানো হয় এভাবে যে, তোমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আর সে যদি অস্বিকারকারী পথভ্রষ্টদের কেউ হয়ে থাকে, তাহলে সমাদরের জন্য রয়েছে ফুটন্ত গরম পানি। এবং জাহান্নামে ঠেলে দেওয়ার ব্যবস্থা, এসব কিছুই অকাট্য সত্য। (সুরা ওয়াকিয়াহ, আয়াত ৮৮-৯৫)
সুতরাং মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন কোন পথে শান্তি আর কোন পথে শাস্তি। আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কোন পথকে অবলম্বন করলে পথভ্রষ্টদের কাতারে চলে যেতে হবে আর কিয়ামতের দিন আমাদের কোন নেক আমল গ্রহণ যোগ্য হবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
এ আনুগত্য (ইসলাম) ছাড়া যে ব্যক্তি অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করতে চাই তার সে পদ্ধতি কখনই গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ব্যথ, আশাহত ও বঞ্চিত। (সুরা আল-ইমরান, আয়াত ৮৫)
অতএব, আল্লাহর বিধান মোতাবেক জীবন পরিচালিত করতে পারলেই মিলবে পরকালীন মুক্তি। নৈকট্য প্রাপ্তদের চির সুখের স্থান জান্নাতের নেয়ামতের বণনা আল্লাহ তায়ালা তুলে ধরেছেন পবিত্র কুরআনুল কারিমে। আল্লাহ বলেন-
তারা নেয়ামতে ভরা জান্নাতে থাকবে, তারা মনি-মুক্তা খচিত আসন সমুহে হেলান দিয়ে সামনা সামনি বসবে, তাদের মজলিসের চির কিশোররা অর্থাৎ এমন সব বালক যারা চিরদিনই বালক থাকবে তাদের বয়স সবসময় একই রকম অবস্থায় থাকবে।
হযরত আলী (রা:) ও হযরত হাসান বসরী (রা:) বলেন, এরা দুনিয়ার মানুষের সেসব শিশু সন্তান, যারা বয়োপ্রাপ্ত হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেছিল। সুতরাং তাদের এমন কোন নেকি থাকবে না যার প্রতিদান দেওয়া যেতে পারে এবং এমন কোন বদ কাজও থাকবে না যার শাস্তি দেওয়া যেতে পারে তবে একথা সুস্পষ্ট যে, তারা হবে পৃথিবীর এমন লোকদের সন্তান যাদের ভাগ্যে জান্নাত জোটেনি।
অন্যথায় নেককার মুমিনদের মৃত অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারিমে ঘোষণা দিয়েছেন। যে তাদের সন্তানদের কেও জান্নাতে তাদের সাথে একত্রিত করে দেয়া হবে। (সুরা আত-তুর, আয়াত ২১)
জান্নাতে বহমান ঝণার সুরায় ভরা পানপাত্র হাতোল বিশিষ্ট সুরা পাত্র এবং হাতোল বিহীন বড় সুরা নিয়ে সদা ব্যস্ত থাকবে। যা পান করে মাথা ঘুরবে না কিংবা বুদ্ধি বিবেক লোপ পাবে না। তারা তাদের সামনে নানা রকমের সুস্বাদু ফল পরিবেশন করবে, যাতে পছন্দমত বেছে নিতে পারে যেখানে পাখির গোস্ত পরিবেশন করবে, যে পাখির গোস্ত ইচ্ছামত ব্যবহার করতে পারবে আর তাদের জন্য থাকবে সুনয়না, হূর এমন অনুপম সুন্দরী যেন লুকিয়ে রাখা মুক্তা আর জান্নাতের বড় নেয়ামত হলো সেখানে কোন অথহীন বা গোনাহের কথা শুনতে পাবে না। মানুষের কান সেখানে কোন অনথক বাঁজে কথা, মিথ্যা, গিবত, চোগলখুরি, অপবাদ, গালি, অহংকার, হিংসা ও বাজে গাল গল্প, বিদ্রুপ ও উপহাস, তিরস্কার ও বদনামূলক কটুকথা শোনা থেকে রক্ষা পাবে।
বরং যে কথাই শুনতে তা হবে যথাযথ ঠিকঠাক। তারা কাঁটাবিহীন কুল গাছের কুল, থরে বিথরে সজ্জিত কলা, দীঘ বিস্তৃত ছায়া, সদা বহমান পানি, অবাধ লভ্য অনিশেষ যোগ্য প্রচুর ফলমূল এবং সুউচ্চ আসনসমূহে অবস্থান করবে। তাদের স্ত্রীদের মহান আল্লাহ তায়াল নতুনরূপে সৃষ্টি করে দিবেন এবং কুমারী বানিয়ে দিবেন। তারা হবে স্বামীর প্রতি আসক্ত ও তাদের সমবয়স্কা। এসব নিয়ামত আল্লাহ তায়ালা রেখেছেন তাঁর নৈকট্য প্রাপ্ত বান্দাদের জন্য।
বান্দার যে সকল আমল আল্লাহ অধিক পছ্ন্দ করেন
যে সকল আমল আল্লাহ তাঁর বান্দাদের নিকট থেকে অধিক পছন্দ করেন এবং অধিক খুশি হন আল্লাহর গোলামীকে পরিপূণ বাস্তবায়ন করতে একজন বান্দা সেসব আমল গুলি করতে যে চেষ্টা ও পরিশ্রম করে তারই ভিত্তিতে আল্লাহর প্রতি বান্দার মহব্বত পূণতা লাভ করে এবং বান্দার প্রতি তার রবের ভালোবাসা বাস্তবে রূপ নেই। আল্লাহ তায়ালা যেসব আমল পছন্দ করেন এবং যেসব আমলে তিনি অধিক খুশি হন তা অনুসন্ধান করে জানা এবং আমল করা আমাদের জন্য অতি জরুরী। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
হে ঈমানদারগণ আল্লাহকে ভয় কর, তার দরবারে নৈকট্য লাভের উপায় অনুসন্ধান কর এবং তার পথে প্রচেষ্টা ও সাধনা কর সম্ভবত তোমরা সফলকাম হতে পারবে। (সুরা মায়িদা, আয়াত ৩৫)
আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় আমল জানার পর তদনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। যেমন আমাদের প্রিয় নবী (সা:) আল্লাহর কাছে এভাবে প্রাথনা করতেন, হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট তোমর মহব্বত কামনা করি, তোমাকে যে মহব্বত করে তার মহব্বত কামনা করি এবং যে আমল তোমার মহব্বত পযন্ত পৌঁছিয়ে দেয় সে আমল কামনা করি। হে আল্লাহ তোমার মহব্বতকে আমার নিকট আমার জানমাল পরিবার পরিজন এবং ঠাণ্ডা পানি হতে অধিক প্রিয় করে দাও। (তিরমিযী)
বান্দার যে সকল আমল আল্লাহ তায়ালা অধিক পছন্দ করেন, সে সকল আমলের কয়েকটি দিক সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো-
ক) ওয়াক্তমত সালাত আয়াদ করা:
মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট সবচেয়ে পছন্দীয় আমল হলো সময়মত সালাত আদায় করা। এছাড়া জামাআতে সালাত আদায়ের ফজিলত তো অপরিসীম। বান্দা আর আল্লাহ তায়ালার সম্পক তৈরীর অন্যতম সেতুবন্ধন হলো সালাত। সালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হওয়া যায়। রাসুল (সা:) এর বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল কোনটি? তিনি বলেন, সময়মত সালাত আদায় করা। (বুখারী, হাদিস নং- ৫২৭)
সময়মত সালাত আদায় না করে যারা গরিমসি করে এটা মুনাফিকের অন্যতম আলামত। অতএব ওয়াক্তমত সালাত আদায় করা একজন খাঁটি মুমিনের কাজ। হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা:) হতে তাঁর পুত্র মুসআব ইবনে সাদ রেওয়াত করেন, যাঁরা সালাতের ব্যাপারে গাফিলতি করে তাদের সম্পর্কে আমি রাসুল (সা:) কে জিঞ্জাসা করেছিলাম, তিনি বলেছিলেন, যারা গরিমসি করতে করতে সালাতের সময় শেষ হয়, এমন অবস্থায় সালাত আদায় করে তারাই হচ্ছে এসব লোক।
খ) লজ্জাশীলতাকে আল্লাহ পছন্দ করেন:
আমাদের প্রিয় নবী (সা:) লজ্জাশীলতা সম্পর্কে বলেন, আল্লাহ তায়ালা ধৈর্য্যশীল গোপনকারী। তিনি লজ্জা ও গোপন রাখাকে পছন্দ করেন। তোমরা যখন গোসল করবে তখন যেন অবশ্যই ঢেকে রাখো। (নাসায়ী)
রাসুল (সা:) আরোও বলেন, ঈমানের সত্তরেরও বেশি শাখা রয়েছে। আর লজ্জা ঈমানের একটি শাখা। (মুসলিম)
লজ্জাশীলতা একজন মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এটি নবীদের সুন্নাত। রাসুল (সা:) বলেন, চারটি জিনিস নবীদের সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত। লজ্জাশীলতা, সুগন্ধি ব্যবহার, মিসওয়াক এবং বিয়ে। (তিরমিযী, হাদিস নং- ১০৮০)
লজ্জাশীলতার প্রকৃত অথ এমন সৎ চরিত্র হওয়া যা মানুষকে নোংরা ও অশ্লীল খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে কিন্তু দূভাগ্যজনক আজ আমরা বতমান সময়ে এই গুণটিকে আনস্মাটনেস বলে মনে করি। লজ্জাশীলতা মানুষকে পেছনে ফেলে দেয় না। বরং কল্যাণ বয়ে আনে। তবে নিজের কোন গোপন সমস্যার শরয়ী সমাধান কিংবা ডাক্তারি সমাধানের ক্ষেত্রে লজ্জা করা ঠিক নয়। আবার গুনাহের মত জঘন্য কাজে আত্মনিয়োগের ক্ষেত্রে লজ্জাহীনতাও কাম্য নয়। আমাদের শ্রেষ্ঠ আদশ রাসুল (সা:) অধিক লাজুক ছিলেন। তিনি যখন লজ্জা পেতেন ফুটন্ত গোলাপের মত হয়ে যেতেন।
গ) দানশীল ব্যক্তিকে আল্লাহ পছন্দ করেনঃ
দানশীল সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা নিজেদের ধন-সম্পদ দিন-রাত গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের কাছে। এবং তাদের কোন ভয় ও দুঃখ নেই। (সুরা বাকারা, আয়াত নং- ২৭৪)
মহান আল্লাহ আরোও বলেন-
মানুষকে হেদায়েত দান করার দায়িত্ব তোমাদের উপর অর্পিত হয়নি। আল্লাহ যাকে চান তাকে হেদায়েত দান করেন। তোমরা যে ধন-সম্পদ দান খয়রাত করো তা তোমাদের নিজেদের জন্য ভালো। তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার জন্যই তো সম্পদ ব্যয় করে থাক, কাজেই দান খয়রাত করে তোমরা যা কিছু সম্পদ ব্যয় করবে তার পুরোপুরি প্রতিদান দেওয়া হবে এবং এক্ষেত্রে কোনক্রমেই তোমাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা হবে না। (সুরা বাকারা, আয়াত নং- ২৭২)
হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত, একদিন তারা একটি ছাগল জবেহ করলেন। তারপর নবী (সা:) বললেন, ছাগলটির কতটা (গোস্ত) অবশিষ্ট আছে? আয়েশা (রা:) বললেন, কেবলমাত্র কাঁধের গোস্ত ছাড়া আর কিছুই বাকি নেই। তিনি বললেন বরং কাঁধের গোস্ত ছাড়া সবটাই বাকি আছে। (তিরমিযী, হাদিস নং- ২৪৭০, আহমদ, হাদিস নং – ২৩)
অর্থাৎ আয়েশা (রা:) বললেন, তার সবটুকু গোস্তই সদকা করে দেওয়া হয়েছে। এবং কেবলমাত্র কাঁধের গোস্ত বাকি রয়ে গেছে। তখন রাসুল (সা:) বললেন, কাঁধের গোস্ত ছাড়া সবই আখিরাতে আমাদের জন্য বাকি আছে। হযরৎ আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা:) বলেন, সদকা করলে মাল কমে যায় না। এবং ক্ষমা করার বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাকারীর সম্মান বৃদ্ধি করেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনয়ী হলে আল্লাহ আযযা অজাল্লা তাকে উচ্চ করেন। (মুসলিম, হাদিস নং- ২৫৮৮, তিরমিযী, হাদিস নং- ২০২৯)
ঘ) আত্মীয় সম্পক বজায় রাখাঃ
মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা তারপর আত্মীয় সম্পক বজায় রাখা। (তিরমিযী, হাদিস নং- ৩৩৭৭)
আত্মীয় সম্পক বজায় রাখার ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, সেই আল্লাহকে ভয় করো, যার দোহাই দিয়ে তোমরা পরস্পরের কাছ থেকে নিজেদের হক আদায় করে থাকো এবং আত্মীয়তা ও নিকট সম্পক বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাক। নিশ্চিতভাবে যেনে রাখো আল্লাহ তোমাদের উপর কড়া নজর রেখেছেন। (সুরা নিসা, আয়াত নং- ১)
আত্মীয় স্বজনের হক (অধিকার) ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এমনটা ভাবা যাবে না যে, তাতে দান করা হচ্ছে এটাতো দানশীলতা নয় বরং এটা তার প্রাপ্য অধিকার। আত্মীয় ও অভাবগ্রস্থদের প্রাপ্ত হক মিটিয়ে দেওয়া সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
কাজেই (হে মুমিন) আত্মীয়দেরকে তাদের অধিকার দাও। এবং মিসকিন ও মুসাফিরকে দাও তাদের অধিকার। (সুরা রূম, আয়াত নং- ৩৮)
আমাদের সমাজের অনেক মুসলমানই পিতামাতার প্রতি কতব্য ও আত্মীয় স্বজনদের অধিকার সম্পর্কে একেবারেই অসচেতন। তারা আত্মীয় স্বজনদের সাথে সম্পর্কের সেতু বন্ধনকেই ছিন্ন করে চলছেন। হাদিসে রাসুল (সা:) বলেন, আত্মীয়তার সম্পক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (বুখারী ও মুসলিম)
ঙ) পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহারঃ
পিতামাতার সাথে সন্তান কেমন আচরণ করবে সে কথাও মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে জানিয়ে দিয়েছেন-
আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া অন্য কারোও ইবাদত করবে না এবং পিতামাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয় যদি তোমার নিকট বার্ধ্যকে উপনিত হয়, তবে তাদেরকে উফ্ বলবে না এবং তাদের কে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বলো। আর দয়া ও কোমলতা সহকারে তাদের সামনে বিনম্র থাকো এবং দোয়া করতে থাকো এই বলে হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করো। যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছে। (সুরা বনী ইসরাঈল- আয়াত নং- ২৩, ২৪)
মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করার অন্তর্ভূক্ত একটি বিষয় হচ্ছে, তাদের কোন প্রকার ধমক না দেওয়া বরং তাদের সাথে সবসময় সুন্দর কথা ও বিনম্র ব্যবহার দ্বারা কোমল আচরণ করা। ইসলামের গুরুত্বপূণ ও মহান ইবাদত সালাতের পর আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় আমল মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করা।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা:) কে জিঞ্জাসা করলাম, আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, সময়মত সালাত আদায় করা। তারপর আমি বললাম, তারপর কোনটি? উত্তরে তিনি বললেন, তারপর মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করা। (বুখারী)
চ) আল্লাহর ভয়ে কান্নাকাটি করাঃ
আল্লাহর ভয়ে ও বড়ত্বের চিন্তায় যে চোখ থেকে অশ্রুর ফোঁটা নিগত হয়, তার চেয়ে অধিক প্রিয় বস্তু আল্লাহর নিকট আর কোন বস্তু নেই। যারা আল্লাহর ভালোবাসায় গভীর রাতে উঠে আল্লাহর স্মরণে চোখের পানি ফেলে, সেই চোখকে কখনোই জাহান্নামের আগুন স্পশ করবে না।
রাসুল (সা:) বলেন, দুটি ফোঁটা ও দুটি চিহ্ন থেকে অধিক প্রিয় কোন বস্তুর আল্লাহর নিকট নেই। এক আল্লাহর ভয়ে নিগত চোখের পানির ফোঁটা। দুই আল্লাহর রাস্তায় প্রবাহিত রক্তের ফোঁটা। আর দুটি চিহ্ন। এক আল্লাহর রাস্তায় আঘাতের চিহ্ন, দুই আল্লাহর ফরজ সমূহ থেকে কোন ফরজ আদায়ের চিহ্ন। (তিরমিযী)
আল্লাহ তায়ালা যাদের ইলেম দান করেছেন, তাদের প্রশংসা করেন, তাদের নিকট যখন আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয় তখন তারা কান্নাকাটি করে, আল্লাহ বলেন- আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। (সুরা ইসরা, আয়াত নং- ১০৯)
আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন, যখন তাদের কাছে পরম করুণাময়ের আয়াতসমূহ পাঠ করা হতো, তারা কাঁদতে কাঁদতে সেজদায় লুটিয়ে পড়তো। (সুরা মারিয়াম, আয়াত নং- ৫৮)
ছ) সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধঃ
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ নিষেধ করা মুমিন ও মুনাফিকের মধ্যে পাথক্য নির্ধারণ করে দেয়। নারী ও পুরুষ যেই সৎ কাজ করবে সে তার প্রতিদান পাবে। আর এটি একজন মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ বলেন-
পুরুষ বা নারী যেই সৎকাজ করবে, সে যদি মুমিন হয়, তাহলে তাকে আমি দুনিয়ায় পবিত্র পরিচ্ছন্ন জীবন দান করবো এবং আখিরাতে তাদের প্রতিদান দেব। তাদের সর্বোত্তম কাজ অনুসারে। (সুরা নাহল, আয়াত নং- ৯৭)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। যাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে মানব জাতির কল্যাণের জন্য। তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। (সুরা আল-ইমরান, আয়াত নং- ১১০)
আমাদের প্রিয় নবী (সা:) বলেন, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা তারপর আত্মীয় সম্পক বজায় রাখা, তারপর ভালো কাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা। (মুসলিম, আবু দাউদ)
সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ করার তিনটি স্তর আছে, যেগুলো রাসুল (সা:) এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। বিশ্বনবী (সা:) বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোন অন্যায় সংঘটিত হতে দেখে তাকে হাত দ্বারা প্রতিহত করবে। যদি তা করা সম্ভব না হয় মুখের দ্বারা প্রতিহত করবে। আর তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে অন্তর দ্বারা ঘৃণা করবে। এটি হলো ঈমানের সবনিম্ম স্তর। (তিরমিযী)
সুতরাং আমরা যদি আল্লাহ তায়ালার বিধান মোতাবেক জীবন পরিচালনা করি সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের বাঁধা দিতে পারি তাহলে আমরা উপহার স্বরুপ পাব একটি সোনালী সমাজ। যে সমাজে থাকবে শান্তির চাঁদরে মোড়ানো এবং আল্লাহর রহমত ও বরকতে ভরা।
জ) আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের পছন্দ করেনঃ
সবর বা ধৈর্য্যধারণকারীদের আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত পছন্দ করেন। তিনি তাদের পুরস্কৃত করার জন্যও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আল্লাহ বলেন-
হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য কামনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সুরা বাকারা, আয়াত নং- ১৫৩)
ধৈর্য্যধারণকারীদের জন্য আল্লাহর নিকট তাদের বিরাট প্রতিদান রয়েছে। আল্লাহ বলেন- তোমাদের কাছে যা কিছু আছে খরচ হয়ে যাবে এবং আল্লাহর কাছে যা কিছু আছে তাই স্থায়ী হবে এবং আমি অবশ্যই যারা সবরের পথ অবলম্বন করবে তাদের প্রতিদান তাদের সর্বোত্তম কাজ অনুযায়ী দেব। (সুরা নাহল, আয়াত নং- ৯৬)
আমাদের আদশ প্রিয় রাসুল (সা:) বলেন, যে ধৈর্য্যধারণ করতে চাই আল্লাহ তাকে ধৈর্য্যশীল করে দেন। ধৈর্য্যের চেয়ে উত্তম ও সুপ্রশস্ত অন্য কোন দান আল্লাহ কাউকে প্রদান করেননি। (বুখারী ও মুসলিম)
সুতরাং তারাই প্রতিদান পাবেন যারা সকল প্রকার লোভ লালসা ও কামনা-বাসনার মোকাবেলায় সত্য ও সততার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। দুনিয়ার অবৈধ পন্থা অবলম্বন করলে যেসব লাভ পাওয়া যেতে পারে তা সবই যারা দূরে নিক্ষেপ করে। যারা ভালো কাজের সুফল লাভ করার জন্য সে সময় পযন্ত অপেক্ষা করতে প্রস্তুত থাকে তথা পরকালিন জীবনের জন্য যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কঠিন বিপদে ধৈর্য্যধারণ করে। কেবলমাত্র প্রতিদানতো তারাই পাবে।

লেখক : ধর্মীয় আলোচক ও উপস্থাপক এফ.এম. রেডিও, টেলিভিশন, ঢাকা।

 

#
জনপ্রিয়

আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়

আপডেটের সময় : ০৯:৪৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩
শেয়ার করুন

আব্দুল কাদের রুহানী

মানুষকে আল্লাহ তায়ালা অগণিত অসংখ্য হেকমত শিক্ষা দিয়েছেন। যাতে আল্লাহর প্রিয় সৃষ্টি মানুষ কোন ভাবেই বিপথগামী না হয়। পরকালিন জিন্দেগিতে সহজেই আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে ধন্য হয়। জাহান্নামের ভয়াবহতা ও আজাব হতে রক্ষা পায়। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-
হে ঈমানদারগণ আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর দরবারে নৈকট্য লাভের উপায় অনুসন্ধান করো। এবং তার পথে প্রচেষ্টা ও সাধনা করো। সম্ভবত তোমরা সফলকাম হতে পারবে। (সুরা মায়িদা, আয়াত নং ৩৫)
অর্থ্যাৎ আপনি এমন প্রত্যেকটি উপায় অনুসন্ধান করবেন যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে এবং তার সন্তুষ্টি অজনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন। আল্লাহ নৈকট্য অজনের পথে যেসব শক্তি প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে যারা আল্লাহর মর্জি অনুসারে চলতে বাঁধা দেয় এবং তার পথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যারা আল্লাহর বান্দা হিসাবে জীবন-যাপন করতে দেয় না। এবং নিজের বা আল্লাহ ছাড়া আর কারোও বান্দাহ হওয়ার জন্য বাধ্য করে তাদের বিরুদ্ধে নিজেদের সম্ভাব্য সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। এপ্রচেষ্টা ও সংগ্রামের উপর আপনার সাফল্য এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ নিভর করছে।
আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথে আপনার বাধা হতে পারে অভিশপ্ত ইবলিস এবং তার শয়তানি সেনাদল। অন্যদিকে আছে মানুষের নিজের নফস ও তাঁর বিদ্রোহী প্রবৃত্তি এছাড়াও আছে এমন এক আল্লাহ বিমুখ মানবগোষ্ঠী যাদের সাথে মানুষ সব ধরনের সামাজিক তামাদ্দুনিক ও অথনৈতিক সম্পক। সবশেষ যে দিকটি আছে এমন ভ্রান্তধর্মীয় তামাদ্দুনিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা যার ভিত্তিকে গড়ে উঠেছে আল্লাহ বিরুদ্ধে বিদ্রোহের উপর তা সত্যের আনুগত্য করার পরিবর্তে মিথ্যার আনুগত্য করতে মানুষকে বাধ্য করে এসকল শয়তানী বাঁধা উপেক্ষা করে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে তার হুকুমকে প্রাধন্য দেওয়া।
মানুষের ভালোবাসার মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া যায়। আর মানুষকে ভালোবাসতে হলে নিজ নিজ আচার ব্যবহার কথাবার্তা ও চালচলনে কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে হয়। যেমন- সবদা হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় মানুষের সাথে কথা বলা এবং দেখা সাক্ষাৎ করা। আমাদের প্রিয় নবী (সা:) সবদা হাস্যোজ্জ্বল থাকতেন। হাসিমুখে মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা, বন্ধুন্ত্ব সৃষ্টির একটি বিশ্বজনীন পদ্ধতি। এ বিষয়ে হাদিসে রাসুল (সা:) বলেন, তোমার ভাইয়ের সম্মুখে তোমার মুচকি হাসি একটি সদকা। (তিরমিযী)
মানুষের কল্যাণে, অভাবে, অনাটনে এগিয়ে আসা। মানুষের হৃদয় জয় করার বড় একটি মাধ্যম। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন- যারা সচ্ছ্বল ও অসচ্ছ্বল সব অবস্থায় অথসম্পদ ব্যয় করে এবং যাঁরা ক্রোধ দমন করে ও অন্যের দোষত্রুটি মাফ করে দেয় এ ধরনের সৎ লোকদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন। (সুরা আল-ইমরান, আয়াত ১৩৪)
আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য ফরজ ইবাদত পালনের পাশাপাশি বেশি বেশি নফল ইবাদত পালন অন্যতম মাধ্যম। বিশেষ করে নফল সিয়াম, দান সদকা, ইলেম অজন ইত্যাদি ইবাদত পালনের চেষ্টা করা। নফল সিয়াম মুমিনের জীবনে অন্যতম ইবাদত। রাসুল (সা:) ও তাঁর সাহাবীগণ নফল সিয়াম পালনের বিষয়ে খুবই গুরুত্ব আরোপ করতেন। তারা নিয়মিত ও অনিয়মিত নফল সিয়াম পালন করতেন। প্রতি দু’দিন পর একদিন বা একদিন পর একদিন বা প্রতি সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার প্রতি আরবী মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ প্রতি মাসের প্রথমে ও শেষে সিয়াম পালনের বিশেষ উৎসাহ প্রদান করেছেন।
মানুষের অভাব চিরন্তর। মনের অভাব থেকেই কেউ মুক্ত নয়। নফল দান, সদকা, সাহায্য অত্যন্ত গুরুত্বপূণ ইবাদত। এ জন্য প্রত্যেক মুমিনের নিয়মিত ও অনিয়মিত দানের অভ্যাস রাখা প্রয়োজন। আর মুমিন সবদা চেষ্টা করবেন গরীব দুঃখী, এতিম বিধবা অসহায় বা অভাবী মানুষকে সাহায্য করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে প্রিয় হবার জন্য সবদা সাধ্যমত দান করার অভ্যাস গড়ে তোলা।

আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত কারা
সারা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক মহান আল্লাহ তায়ালা তার নৈকট্য প্রাপ্ত বান্দাদের পরিচয় পবিত্র কুরআনুল কারিমে তুলে ধরেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-
আর অগ্রগামীরা তো অগ্রগামীই। তারাই তো নৈকট্য লাভকারী। তারা নিয়ামতে ভরা জান্নাতে থাকবে। (সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত ১০, ১১, ১২)
উক্ত আয়াতের শুরুতে সাবেকুন (অগ্রগামীগণ) অথ যারা সৎ কাজ ও ন্যায়পরায়ণতায় সবাইকে অতিক্রম করেছে, প্রতিটি কল্যাণের কাজে সবাই আগে থেকেছে, আল্লাহ ও রাসুলের আহবানের ব্যাপারে সবার আগে সাড়া দিয়েছে, জনসেবার ব্যাপারে হোক কিংবা কল্যাণের পথে হোক কিংবা জিহাদের ব্যাপারে হোক কিংবা আল্লাহর পথে খরচের ব্যাপারে হোক কিংবা আল্লাহর পথে দাওয়াত কিংবা সত্যের পথে দাওয়াতের কাজে হোক মোট কথা পৃথিবীতে কল্যাণের প্রসার এবং অকল্যাণের উচ্ছেদের জন্য ত্যাগ ও কুরবাণী এবং শ্রমদান জীবনপনের যে সুযোগই এসেছে তাতে সে-ই অগ্রগামী হয়ে কাজ করেছে।
এ কারণে আখিরাতেও তাদেরকে সবার আগে রাখা হবে। অর্থাৎ আখিরাতে আল্লাহ তায়ালার দরবারের চিত্র হবে এই যে, ডানে সলেহীন বা নেককারগণ বাঁয়ে থাকবে ফাসেক বা পাপীরা। এবং সবার আগে আল্লাহ তায়ালার দরবারের নিকটে থাকবেন অগ্রগামীগণ।
এ সম্পর্কে হাদিসে হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত, যে রাসুল (সা:) লোকদের জিঞ্জাসা করলেন, তোমরা কি জান কিয়ামতের দিন কারা সবপ্রথম পৌছাবে এবং আল্লাহর ছায়ায় স্থান লাভ করবে? সবাই বললেন আল্লাহ এবং আল্লাহ রাসুলই ভাল জানেন। তখন রাসুল (সা:) বললেন যাদের অবস্থা ছিল এই যে, তাদের সামনে যখনই সত্য পেশ করা হয়েছে, তা গ্রহণ করেছে যখনই তাদের কাছে প্রাপ্য চাওয়া হয়েছে তখনই তা দিয়ে দিয়েছে। আর তারা নিজেদের ব্যাপারে যে ফয়সালা করেছে অন্যদের ব্যাপারেও সেই ফয়সালা করেছে। (মুসনাদে আহমদ)
একজন মুমিন সবদা আল্লাহকে ভালোবাসে তার নৈকট্য লাভের আশায়। আল্লাহর ভালোবাসাই ফুটে উঠেছে মুমিনদের জীবন। যারা আল্লাহকে রব হিসাবে মেনে নিয়েছে জীবনের প্রতিটি মূহুর্তে মুমিন তার রবেরে সান্নিধ্য অনুভব করে। সে জানে আল্লাহর রহমত তাকে সবদা ঘিরে রাখে। আল্লাহ তায়ালা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং রিজিক দিচ্ছেন। সব ধরনের বালা-মুসিবত থেকে তাকে হিফাজত করছেন। নেয়ামতের সাগরে তাকে ডুবিয়ে রেখেছেন। মুমিন যখন আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ করে এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষণে সে চিন্তা করে মহান আল্লাহ তাকে দেখছেন তাই সে বড় আদব ও বিনয়ের সঙ্গে দিন যাবন করে। মহান আল্লাহ ওকে প্রাণভরে ভালোবাসেন। রবের নাফরমানি থেকে যত সম্ভব দূরে থাকে আল্লাহর সব হুকুম আহকাম মেনে চলে, সব সময় আল্লাহর যিকিরে মাশগুল থাকে। আল্লাহ বলেন-

যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের হৃদয় পরিতৃপ্ত হয় যেনে রেখ আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্ত হয়। (সুরা রাদ, আয়াত ২৮)
প্রিয় নবী (সা:) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার ব্যাপারে বান্দা যেরুপ ধারণা রাখে আমিও তার সাথে সেরূপ আচরণ করি। সে যখন আমার যিকির করে আমি তার সাথে থাকি, সে যখন একাকি মনে মনে আমাকে স্মরণ করে আমিও তাকে মনে মনে স্মরণ করি। সে যখন কোন মজলিসে আমাকে স্মরণ করে, আমি তার চেয়ে উত্তম মজলিসে তাকে স্মরণ করি। সে যদি আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হয়। সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হলে আমি তার দিকে দুই হাত অগ্রসর হয়। সে আমার দিকে হেঁটে আসলে আমি তার দিকে দৌঁড়ে যায়। (বুখারী, ৭৪০৫)
সুতরাং একজন মুমিন যে অবস্থায় থাকুক না কেন, সবদা আল্লাহর ভালোবাসার তার তাসবীহ পাঠ করবেন, তার প্রতি ভরসা করবেন। আল্লাহর সকল ফয়সালাকে সে মেনে নেয় বিনিময়ে সে আল্লাহর নৈকট্য অজন করতে চাই, আর আল্লাহর ভালোবাসাই জুড়িয়ে ওঠে প্রতিটি মুমিনের হৃদয়।

আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্তদের জন্য রয়েছে শান্তি
প্রতিটি মুমিনের একমাত্র চাওয়া আল্লাহর নৈকট্য লাভ। যার বিনিময়ে মহান আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন চিরস্থায়ী সুখের স্থান তথা জান্নাত। কিন্তু অপরদিকে যারা তাগুতকে বিশ্বাস করে বিপদগামী তার দিকে ছুটছে। আল্লাহ তাদের জন্য রেখেছেন শাস্তি ও আযাবের স্থান তথা জাহান্নাম। আল্লাহ বলেন-
সুতরাং যদি যে নৈকট্য প্রাপ্তদের একজন হয়, তার জন্য রয়েছে আরাম আয়েশ, উত্তম রিজিক এবং নেয়ামতে ভরা জান্নাত। আর সে যদি ডানদিকের লোক হয়ে থাকে, তাহলে তাকে সাদর অভিনন্দন জানানো হয় এভাবে যে, তোমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আর সে যদি অস্বিকারকারী পথভ্রষ্টদের কেউ হয়ে থাকে, তাহলে সমাদরের জন্য রয়েছে ফুটন্ত গরম পানি। এবং জাহান্নামে ঠেলে দেওয়ার ব্যবস্থা, এসব কিছুই অকাট্য সত্য। (সুরা ওয়াকিয়াহ, আয়াত ৮৮-৯৫)
সুতরাং মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন কোন পথে শান্তি আর কোন পথে শাস্তি। আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কোন পথকে অবলম্বন করলে পথভ্রষ্টদের কাতারে চলে যেতে হবে আর কিয়ামতের দিন আমাদের কোন নেক আমল গ্রহণ যোগ্য হবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
এ আনুগত্য (ইসলাম) ছাড়া যে ব্যক্তি অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করতে চাই তার সে পদ্ধতি কখনই গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ব্যথ, আশাহত ও বঞ্চিত। (সুরা আল-ইমরান, আয়াত ৮৫)
অতএব, আল্লাহর বিধান মোতাবেক জীবন পরিচালিত করতে পারলেই মিলবে পরকালীন মুক্তি। নৈকট্য প্রাপ্তদের চির সুখের স্থান জান্নাতের নেয়ামতের বণনা আল্লাহ তায়ালা তুলে ধরেছেন পবিত্র কুরআনুল কারিমে। আল্লাহ বলেন-
তারা নেয়ামতে ভরা জান্নাতে থাকবে, তারা মনি-মুক্তা খচিত আসন সমুহে হেলান দিয়ে সামনা সামনি বসবে, তাদের মজলিসের চির কিশোররা অর্থাৎ এমন সব বালক যারা চিরদিনই বালক থাকবে তাদের বয়স সবসময় একই রকম অবস্থায় থাকবে।
হযরত আলী (রা:) ও হযরত হাসান বসরী (রা:) বলেন, এরা দুনিয়ার মানুষের সেসব শিশু সন্তান, যারা বয়োপ্রাপ্ত হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেছিল। সুতরাং তাদের এমন কোন নেকি থাকবে না যার প্রতিদান দেওয়া যেতে পারে এবং এমন কোন বদ কাজও থাকবে না যার শাস্তি দেওয়া যেতে পারে তবে একথা সুস্পষ্ট যে, তারা হবে পৃথিবীর এমন লোকদের সন্তান যাদের ভাগ্যে জান্নাত জোটেনি।
অন্যথায় নেককার মুমিনদের মৃত অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারিমে ঘোষণা দিয়েছেন। যে তাদের সন্তানদের কেও জান্নাতে তাদের সাথে একত্রিত করে দেয়া হবে। (সুরা আত-তুর, আয়াত ২১)
জান্নাতে বহমান ঝণার সুরায় ভরা পানপাত্র হাতোল বিশিষ্ট সুরা পাত্র এবং হাতোল বিহীন বড় সুরা নিয়ে সদা ব্যস্ত থাকবে। যা পান করে মাথা ঘুরবে না কিংবা বুদ্ধি বিবেক লোপ পাবে না। তারা তাদের সামনে নানা রকমের সুস্বাদু ফল পরিবেশন করবে, যাতে পছন্দমত বেছে নিতে পারে যেখানে পাখির গোস্ত পরিবেশন করবে, যে পাখির গোস্ত ইচ্ছামত ব্যবহার করতে পারবে আর তাদের জন্য থাকবে সুনয়না, হূর এমন অনুপম সুন্দরী যেন লুকিয়ে রাখা মুক্তা আর জান্নাতের বড় নেয়ামত হলো সেখানে কোন অথহীন বা গোনাহের কথা শুনতে পাবে না। মানুষের কান সেখানে কোন অনথক বাঁজে কথা, মিথ্যা, গিবত, চোগলখুরি, অপবাদ, গালি, অহংকার, হিংসা ও বাজে গাল গল্প, বিদ্রুপ ও উপহাস, তিরস্কার ও বদনামূলক কটুকথা শোনা থেকে রক্ষা পাবে।
বরং যে কথাই শুনতে তা হবে যথাযথ ঠিকঠাক। তারা কাঁটাবিহীন কুল গাছের কুল, থরে বিথরে সজ্জিত কলা, দীঘ বিস্তৃত ছায়া, সদা বহমান পানি, অবাধ লভ্য অনিশেষ যোগ্য প্রচুর ফলমূল এবং সুউচ্চ আসনসমূহে অবস্থান করবে। তাদের স্ত্রীদের মহান আল্লাহ তায়াল নতুনরূপে সৃষ্টি করে দিবেন এবং কুমারী বানিয়ে দিবেন। তারা হবে স্বামীর প্রতি আসক্ত ও তাদের সমবয়স্কা। এসব নিয়ামত আল্লাহ তায়ালা রেখেছেন তাঁর নৈকট্য প্রাপ্ত বান্দাদের জন্য।
বান্দার যে সকল আমল আল্লাহ অধিক পছ্ন্দ করেন
যে সকল আমল আল্লাহ তাঁর বান্দাদের নিকট থেকে অধিক পছন্দ করেন এবং অধিক খুশি হন আল্লাহর গোলামীকে পরিপূণ বাস্তবায়ন করতে একজন বান্দা সেসব আমল গুলি করতে যে চেষ্টা ও পরিশ্রম করে তারই ভিত্তিতে আল্লাহর প্রতি বান্দার মহব্বত পূণতা লাভ করে এবং বান্দার প্রতি তার রবের ভালোবাসা বাস্তবে রূপ নেই। আল্লাহ তায়ালা যেসব আমল পছন্দ করেন এবং যেসব আমলে তিনি অধিক খুশি হন তা অনুসন্ধান করে জানা এবং আমল করা আমাদের জন্য অতি জরুরী। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
হে ঈমানদারগণ আল্লাহকে ভয় কর, তার দরবারে নৈকট্য লাভের উপায় অনুসন্ধান কর এবং তার পথে প্রচেষ্টা ও সাধনা কর সম্ভবত তোমরা সফলকাম হতে পারবে। (সুরা মায়িদা, আয়াত ৩৫)
আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় আমল জানার পর তদনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। যেমন আমাদের প্রিয় নবী (সা:) আল্লাহর কাছে এভাবে প্রাথনা করতেন, হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট তোমর মহব্বত কামনা করি, তোমাকে যে মহব্বত করে তার মহব্বত কামনা করি এবং যে আমল তোমার মহব্বত পযন্ত পৌঁছিয়ে দেয় সে আমল কামনা করি। হে আল্লাহ তোমার মহব্বতকে আমার নিকট আমার জানমাল পরিবার পরিজন এবং ঠাণ্ডা পানি হতে অধিক প্রিয় করে দাও। (তিরমিযী)
বান্দার যে সকল আমল আল্লাহ তায়ালা অধিক পছন্দ করেন, সে সকল আমলের কয়েকটি দিক সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো-
ক) ওয়াক্তমত সালাত আয়াদ করা:
মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট সবচেয়ে পছন্দীয় আমল হলো সময়মত সালাত আদায় করা। এছাড়া জামাআতে সালাত আদায়ের ফজিলত তো অপরিসীম। বান্দা আর আল্লাহ তায়ালার সম্পক তৈরীর অন্যতম সেতুবন্ধন হলো সালাত। সালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হওয়া যায়। রাসুল (সা:) এর বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল কোনটি? তিনি বলেন, সময়মত সালাত আদায় করা। (বুখারী, হাদিস নং- ৫২৭)
সময়মত সালাত আদায় না করে যারা গরিমসি করে এটা মুনাফিকের অন্যতম আলামত। অতএব ওয়াক্তমত সালাত আদায় করা একজন খাঁটি মুমিনের কাজ। হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা:) হতে তাঁর পুত্র মুসআব ইবনে সাদ রেওয়াত করেন, যাঁরা সালাতের ব্যাপারে গাফিলতি করে তাদের সম্পর্কে আমি রাসুল (সা:) কে জিঞ্জাসা করেছিলাম, তিনি বলেছিলেন, যারা গরিমসি করতে করতে সালাতের সময় শেষ হয়, এমন অবস্থায় সালাত আদায় করে তারাই হচ্ছে এসব লোক।
খ) লজ্জাশীলতাকে আল্লাহ পছন্দ করেন:
আমাদের প্রিয় নবী (সা:) লজ্জাশীলতা সম্পর্কে বলেন, আল্লাহ তায়ালা ধৈর্য্যশীল গোপনকারী। তিনি লজ্জা ও গোপন রাখাকে পছন্দ করেন। তোমরা যখন গোসল করবে তখন যেন অবশ্যই ঢেকে রাখো। (নাসায়ী)
রাসুল (সা:) আরোও বলেন, ঈমানের সত্তরেরও বেশি শাখা রয়েছে। আর লজ্জা ঈমানের একটি শাখা। (মুসলিম)
লজ্জাশীলতা একজন মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এটি নবীদের সুন্নাত। রাসুল (সা:) বলেন, চারটি জিনিস নবীদের সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত। লজ্জাশীলতা, সুগন্ধি ব্যবহার, মিসওয়াক এবং বিয়ে। (তিরমিযী, হাদিস নং- ১০৮০)
লজ্জাশীলতার প্রকৃত অথ এমন সৎ চরিত্র হওয়া যা মানুষকে নোংরা ও অশ্লীল খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে কিন্তু দূভাগ্যজনক আজ আমরা বতমান সময়ে এই গুণটিকে আনস্মাটনেস বলে মনে করি। লজ্জাশীলতা মানুষকে পেছনে ফেলে দেয় না। বরং কল্যাণ বয়ে আনে। তবে নিজের কোন গোপন সমস্যার শরয়ী সমাধান কিংবা ডাক্তারি সমাধানের ক্ষেত্রে লজ্জা করা ঠিক নয়। আবার গুনাহের মত জঘন্য কাজে আত্মনিয়োগের ক্ষেত্রে লজ্জাহীনতাও কাম্য নয়। আমাদের শ্রেষ্ঠ আদশ রাসুল (সা:) অধিক লাজুক ছিলেন। তিনি যখন লজ্জা পেতেন ফুটন্ত গোলাপের মত হয়ে যেতেন।
গ) দানশীল ব্যক্তিকে আল্লাহ পছন্দ করেনঃ
দানশীল সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা নিজেদের ধন-সম্পদ দিন-রাত গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের কাছে। এবং তাদের কোন ভয় ও দুঃখ নেই। (সুরা বাকারা, আয়াত নং- ২৭৪)
মহান আল্লাহ আরোও বলেন-
মানুষকে হেদায়েত দান করার দায়িত্ব তোমাদের উপর অর্পিত হয়নি। আল্লাহ যাকে চান তাকে হেদায়েত দান করেন। তোমরা যে ধন-সম্পদ দান খয়রাত করো তা তোমাদের নিজেদের জন্য ভালো। তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার জন্যই তো সম্পদ ব্যয় করে থাক, কাজেই দান খয়রাত করে তোমরা যা কিছু সম্পদ ব্যয় করবে তার পুরোপুরি প্রতিদান দেওয়া হবে এবং এক্ষেত্রে কোনক্রমেই তোমাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা হবে না। (সুরা বাকারা, আয়াত নং- ২৭২)
হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত, একদিন তারা একটি ছাগল জবেহ করলেন। তারপর নবী (সা:) বললেন, ছাগলটির কতটা (গোস্ত) অবশিষ্ট আছে? আয়েশা (রা:) বললেন, কেবলমাত্র কাঁধের গোস্ত ছাড়া আর কিছুই বাকি নেই। তিনি বললেন বরং কাঁধের গোস্ত ছাড়া সবটাই বাকি আছে। (তিরমিযী, হাদিস নং- ২৪৭০, আহমদ, হাদিস নং – ২৩)
অর্থাৎ আয়েশা (রা:) বললেন, তার সবটুকু গোস্তই সদকা করে দেওয়া হয়েছে। এবং কেবলমাত্র কাঁধের গোস্ত বাকি রয়ে গেছে। তখন রাসুল (সা:) বললেন, কাঁধের গোস্ত ছাড়া সবই আখিরাতে আমাদের জন্য বাকি আছে। হযরৎ আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা:) বলেন, সদকা করলে মাল কমে যায় না। এবং ক্ষমা করার বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাকারীর সম্মান বৃদ্ধি করেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনয়ী হলে আল্লাহ আযযা অজাল্লা তাকে উচ্চ করেন। (মুসলিম, হাদিস নং- ২৫৮৮, তিরমিযী, হাদিস নং- ২০২৯)
ঘ) আত্মীয় সম্পক বজায় রাখাঃ
মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা তারপর আত্মীয় সম্পক বজায় রাখা। (তিরমিযী, হাদিস নং- ৩৩৭৭)
আত্মীয় সম্পক বজায় রাখার ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, সেই আল্লাহকে ভয় করো, যার দোহাই দিয়ে তোমরা পরস্পরের কাছ থেকে নিজেদের হক আদায় করে থাকো এবং আত্মীয়তা ও নিকট সম্পক বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাক। নিশ্চিতভাবে যেনে রাখো আল্লাহ তোমাদের উপর কড়া নজর রেখেছেন। (সুরা নিসা, আয়াত নং- ১)
আত্মীয় স্বজনের হক (অধিকার) ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এমনটা ভাবা যাবে না যে, তাতে দান করা হচ্ছে এটাতো দানশীলতা নয় বরং এটা তার প্রাপ্য অধিকার। আত্মীয় ও অভাবগ্রস্থদের প্রাপ্ত হক মিটিয়ে দেওয়া সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
কাজেই (হে মুমিন) আত্মীয়দেরকে তাদের অধিকার দাও। এবং মিসকিন ও মুসাফিরকে দাও তাদের অধিকার। (সুরা রূম, আয়াত নং- ৩৮)
আমাদের সমাজের অনেক মুসলমানই পিতামাতার প্রতি কতব্য ও আত্মীয় স্বজনদের অধিকার সম্পর্কে একেবারেই অসচেতন। তারা আত্মীয় স্বজনদের সাথে সম্পর্কের সেতু বন্ধনকেই ছিন্ন করে চলছেন। হাদিসে রাসুল (সা:) বলেন, আত্মীয়তার সম্পক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (বুখারী ও মুসলিম)
ঙ) পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহারঃ
পিতামাতার সাথে সন্তান কেমন আচরণ করবে সে কথাও মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে জানিয়ে দিয়েছেন-
আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া অন্য কারোও ইবাদত করবে না এবং পিতামাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয় যদি তোমার নিকট বার্ধ্যকে উপনিত হয়, তবে তাদেরকে উফ্ বলবে না এবং তাদের কে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বলো। আর দয়া ও কোমলতা সহকারে তাদের সামনে বিনম্র থাকো এবং দোয়া করতে থাকো এই বলে হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করো। যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছে। (সুরা বনী ইসরাঈল- আয়াত নং- ২৩, ২৪)
মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করার অন্তর্ভূক্ত একটি বিষয় হচ্ছে, তাদের কোন প্রকার ধমক না দেওয়া বরং তাদের সাথে সবসময় সুন্দর কথা ও বিনম্র ব্যবহার দ্বারা কোমল আচরণ করা। ইসলামের গুরুত্বপূণ ও মহান ইবাদত সালাতের পর আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় আমল মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করা।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা:) কে জিঞ্জাসা করলাম, আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, সময়মত সালাত আদায় করা। তারপর আমি বললাম, তারপর কোনটি? উত্তরে তিনি বললেন, তারপর মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করা। (বুখারী)
চ) আল্লাহর ভয়ে কান্নাকাটি করাঃ
আল্লাহর ভয়ে ও বড়ত্বের চিন্তায় যে চোখ থেকে অশ্রুর ফোঁটা নিগত হয়, তার চেয়ে অধিক প্রিয় বস্তু আল্লাহর নিকট আর কোন বস্তু নেই। যারা আল্লাহর ভালোবাসায় গভীর রাতে উঠে আল্লাহর স্মরণে চোখের পানি ফেলে, সেই চোখকে কখনোই জাহান্নামের আগুন স্পশ করবে না।
রাসুল (সা:) বলেন, দুটি ফোঁটা ও দুটি চিহ্ন থেকে অধিক প্রিয় কোন বস্তুর আল্লাহর নিকট নেই। এক আল্লাহর ভয়ে নিগত চোখের পানির ফোঁটা। দুই আল্লাহর রাস্তায় প্রবাহিত রক্তের ফোঁটা। আর দুটি চিহ্ন। এক আল্লাহর রাস্তায় আঘাতের চিহ্ন, দুই আল্লাহর ফরজ সমূহ থেকে কোন ফরজ আদায়ের চিহ্ন। (তিরমিযী)
আল্লাহ তায়ালা যাদের ইলেম দান করেছেন, তাদের প্রশংসা করেন, তাদের নিকট যখন আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয় তখন তারা কান্নাকাটি করে, আল্লাহ বলেন- আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। (সুরা ইসরা, আয়াত নং- ১০৯)
আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন, যখন তাদের কাছে পরম করুণাময়ের আয়াতসমূহ পাঠ করা হতো, তারা কাঁদতে কাঁদতে সেজদায় লুটিয়ে পড়তো। (সুরা মারিয়াম, আয়াত নং- ৫৮)
ছ) সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধঃ
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ নিষেধ করা মুমিন ও মুনাফিকের মধ্যে পাথক্য নির্ধারণ করে দেয়। নারী ও পুরুষ যেই সৎ কাজ করবে সে তার প্রতিদান পাবে। আর এটি একজন মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ বলেন-
পুরুষ বা নারী যেই সৎকাজ করবে, সে যদি মুমিন হয়, তাহলে তাকে আমি দুনিয়ায় পবিত্র পরিচ্ছন্ন জীবন দান করবো এবং আখিরাতে তাদের প্রতিদান দেব। তাদের সর্বোত্তম কাজ অনুসারে। (সুরা নাহল, আয়াত নং- ৯৭)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। যাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে মানব জাতির কল্যাণের জন্য। তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। (সুরা আল-ইমরান, আয়াত নং- ১১০)
আমাদের প্রিয় নবী (সা:) বলেন, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা তারপর আত্মীয় সম্পক বজায় রাখা, তারপর ভালো কাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা। (মুসলিম, আবু দাউদ)
সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ করার তিনটি স্তর আছে, যেগুলো রাসুল (সা:) এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। বিশ্বনবী (সা:) বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোন অন্যায় সংঘটিত হতে দেখে তাকে হাত দ্বারা প্রতিহত করবে। যদি তা করা সম্ভব না হয় মুখের দ্বারা প্রতিহত করবে। আর তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে অন্তর দ্বারা ঘৃণা করবে। এটি হলো ঈমানের সবনিম্ম স্তর। (তিরমিযী)
সুতরাং আমরা যদি আল্লাহ তায়ালার বিধান মোতাবেক জীবন পরিচালনা করি সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের বাঁধা দিতে পারি তাহলে আমরা উপহার স্বরুপ পাব একটি সোনালী সমাজ। যে সমাজে থাকবে শান্তির চাঁদরে মোড়ানো এবং আল্লাহর রহমত ও বরকতে ভরা।
জ) আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের পছন্দ করেনঃ
সবর বা ধৈর্য্যধারণকারীদের আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত পছন্দ করেন। তিনি তাদের পুরস্কৃত করার জন্যও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আল্লাহ বলেন-
হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য কামনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সুরা বাকারা, আয়াত নং- ১৫৩)
ধৈর্য্যধারণকারীদের জন্য আল্লাহর নিকট তাদের বিরাট প্রতিদান রয়েছে। আল্লাহ বলেন- তোমাদের কাছে যা কিছু আছে খরচ হয়ে যাবে এবং আল্লাহর কাছে যা কিছু আছে তাই স্থায়ী হবে এবং আমি অবশ্যই যারা সবরের পথ অবলম্বন করবে তাদের প্রতিদান তাদের সর্বোত্তম কাজ অনুযায়ী দেব। (সুরা নাহল, আয়াত নং- ৯৬)
আমাদের আদশ প্রিয় রাসুল (সা:) বলেন, যে ধৈর্য্যধারণ করতে চাই আল্লাহ তাকে ধৈর্য্যশীল করে দেন। ধৈর্য্যের চেয়ে উত্তম ও সুপ্রশস্ত অন্য কোন দান আল্লাহ কাউকে প্রদান করেননি। (বুখারী ও মুসলিম)
সুতরাং তারাই প্রতিদান পাবেন যারা সকল প্রকার লোভ লালসা ও কামনা-বাসনার মোকাবেলায় সত্য ও সততার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। দুনিয়ার অবৈধ পন্থা অবলম্বন করলে যেসব লাভ পাওয়া যেতে পারে তা সবই যারা দূরে নিক্ষেপ করে। যারা ভালো কাজের সুফল লাভ করার জন্য সে সময় পযন্ত অপেক্ষা করতে প্রস্তুত থাকে তথা পরকালিন জীবনের জন্য যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কঠিন বিপদে ধৈর্য্যধারণ করে। কেবলমাত্র প্রতিদানতো তারাই পাবে।

লেখক : ধর্মীয় আলোচক ও উপস্থাপক এফ.এম. রেডিও, টেলিভিশন, ঢাকা।