কারুবাক রিপোর্ট :
আজ ২২ ডিসেম্বর, আজ কবি কামরুল হাসানের ৬২তম জন্মদিন। ১৯৬১ সালের আজকের এই দিন তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি একজন কবি। একজন প্রাবন্ধিক। একজন ভ্রামণিক। একজন সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক। কথা বলেন চমৎকার। কথায় কোন আঞ্চলিকতার সুর নেই। বাংলা মানে একেবারে মানবাংলায়। যখন বলেন ইংরেজি তখন মনে হয় বাংলার চেয়ে ইংরেজিটাই বেশি ভালো বলেন। পড়ান ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে। অথচ এসএসসি এইচএসসিতে মেধাতালিকাল স্থান পাওয়া কামরুল হাসান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে একবছর পড়েও চলে যান বিমানের খুঁটিনাটি জানতে পড়তে খড়গপুরের বিশ্বখ্যাত আইআইটিতে। ফিরলেনও এ্যারোনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে। যোগ দিলেন বাংলাদেশ বিমানে। বিমান তাকে রাখতে পারেনি। চলে গেলেন চট্টগ্রাম কাফকোতে। সেখানেও বেশিদিন না। ঢাকায় ফিরে এ্যারোনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার পড়লেন এমবিএ। তারপর ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে ব্যবসায় প্রশাসনে শিক্ষকতা। কিছুদিনের মধ্যেই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন। মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারি, ব্যবসায় প্রশাসনে ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি ঘুরে থিতু হলেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে। এখানেও ব্যবসায় প্রশাসনে তুমুল জনপ্রিয় শিক্ষক। একটি পিএইচডি ডিগ্রি না থাকায় শিক্ষকতা পেশার সর্বোচ্চ পদে যেতে পারেননি। আর কি করে পারবেন এই কবিতা পাগল মানুষটি! খুব কি প্রয়োজন!
কবি কামরুল হাসান কবিতার পাশাপাশি লেখেন গল্প। যদিও তাঁর গল্পের বই মোটে একটিই। গল্পগুলো বাঙলার, বাঙালির জনজীবনের বঞ্চনা আর যন্ত্রণার দলিল। এখন লিখছেন প্রবন্ধ। এনিয়ে রয়েছে ‘প্রহরের প্রস্তাবনা’। সমসাময়িক সাহিত্যিক বিষয়আশয় নিয়ে ঝরঝরে শব্দের বুনন প্রহরের প্রস্তবনা।
সবকিছু ছাপিয়ে বেশ কয়েকবছর ধরে লিখছেন ভ্রমণগদ্য। এশুধু গদ্য নয়। গদ্যের ভেতর দিয়ে স্থান, কাল এবং মানুষের তরঙ্গিত জীবনের বুনন। কোথাও কোন ঝুলে পড়া নেই। টানটান এগিয়ে চলাই একমাত্র নিয়তি।
ভ্রমণগদ্যে বাদ যায় না কিছুই। কাঁচাবাজার থেকে সাহিত্যসভা, পাঠ এবং ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটসহ সকল অনুষঙ্গ গায়ে গা লাগিয়ে হাঁটে। পাঠককে ‘মহাদেশের মতো এক দেশ’ থেকে তুলে এনে ছেড়ে দেন ‘সিমলা মানালির পথে’, ‘বিলেতের দিনলিপি’ থেকে ‘আমির তিমুরের দেশে’।
গতকয়েক বছরে কবি পেয়ে বসেছে অন্তর্জালে সাহিত্যিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সচিত্র অনুপুঙ্খ প্রতিবেদন। হয়ে ওঠেছেন সময়ের সাহিত্যিক জার্নালিস্ট। এধারায় আগে এভাবে কাউকে লিখতে দেখা যায়নি। কোনো আয়োজনে কবি কামরুল হাসানের উপস্থিতি মানেই অন্তর্জালে অনুষ্ঠানের ঝকঝকে প্রতিবেদন। প্রতিবেদন পড়ার পর অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদেরও মনে হয় ‘কবি এতোসব কীভাবে দেখলেন, লিখলেন? আমরাও তো অনুষ্ঠানে ছিলাম। কই এতো মনোযোগী হয়েও এতো কিছু দেখিনি শুনিনি?’ কামরুল হাসান এইসব অমনোযোগী দর্শকশ্রোতাদের, যারা অনুষ্ঠানে যেতে পারেননি তাঁদের আলো ঝলমল পর্দায় সবকিছু দেখিয়ে দেন। জানি, কবি হওয়ার কারণেই কামরুল হাসান এইসব প্রতিবেদন সংগ্রহে রাখার তাগিদ বোধ করবেন না। তবে সংগ্রহ করে রাখলে এগুলো একসময় হয়ে উঠবে সাহিত্যিক মহার্ঘ্য, সময়ের দলিল।
কামরুল হাসানের প্রকাশিত গ্রন্থ
কবিতা- সহস্র কোকিলের গ্রীবা (১৯৯১); প্রান্তসীমা অনন্তদূর (১৯৯২); ছুঁলে বিদ্যুল্লতা, না ছুঁলে পাথর (১৯৯৩); পাখি নই আশ্চর্য মানুষ (১৯৯৪); দশদিকে উৎসব (১৯৯৭); বৃক্ষদের শোভা দেখে যাব (২০০০); রূপচৈত্রের অরণ্যটিলায় (২০০৪); পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি আমার গ্রামে (২০০৭); ঈশ্বরের নিজ গ্রহ (২০০৯); ঘুমপ্রহরের মোমকূহক (২০১০); নির্বাচিত কবিতা (২০১২); খিলানের নিচে আলো (২০১৪); সহস্র চরণের ধ্বনি (২০১৬); বাছাই ১০০ কবিতা (২০১৭)। ছোটগল্প: মধ্যবিত্ত বারান্দা ও অন্যান্য গল্প (২০০৫)। প্রবন্ধ: প্রহরের প্রস্তাবনা (২০১৫), ভ্রমণকাহিনী:আমির তিমুরের দেশে, ভ্রমণকাহিনী: বিলেতের দিনলিপি (২০১৭)। অনুবাদ : Poems of Mujib Erom (2014)। সম্পাদনা : Postmodern Bangla Poetry 2003 (2003); (with Tushar Gayen and Samir Roychowdhury)