8:34 pm, Sunday, 22 December 2024

মধ্যযুগের প্রকৃতিপ্রেমী এক মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনে বাইতার

  • কারুবাক
  • আপডেটের সময় : ০৬:৫৫:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৩
  • 56 ভিউ
শেয়ার করুন

ইমরান উদ্দিন :

ইসলামের সোনালী ইতিহাসে অনেক মুসলিম মনীষী অবদান রেখেছেন বিভিন্নভাবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের এমন কোনো শাখা নেই, যেখানে মুসলিম মনীষীরা অবদান রাখেননি। ইতিহাস, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, রসায়ন, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি থেকে শুরু করে সবশাখায় মুসলিম মনীষীরা অবদান রেখে গেছেন। কিন্তু মুসলমানরা তাদের সম্পদগুলোকে কালের গর্ভে হারিয়ে ফেলেছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে থাকা মুসলমানদের কাছে তারা অপরিচিত হয়ে গেছে ধীরে ধীরে। তাদের অবদানের কথা সেভাবে স্মরণ ও উচ্চারণ করা হয় না। উল্টো মুসলিম মনীষীদের অবদানগুলো অন্যরা নাম বিকৃত করে বিশ্বে সমাদৃত হচ্ছে। যেসব মুসলিম মনীষী জ্ঞান-বিজ্ঞানের সব শাখায় অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন, সেসব মনীষাদের একজন হলেন- ইবনে বাইতার।

ইবনে বাইতার, নামটি বলতে গেলে আমাদের মাঝে একেবারে অপরিচিত। ইবনে বাইতারের পুরো নাম আবু মুহাম্মদ জিয়াউদ্দিন আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ মালেকি। তার গ্রামের নাম মালেকা, এটা আন্দালুসিয়ার অন্তর্ভুক্ত একটি গ্রাম। জন্মস্থানের দিক দিয়ে তাকে মালেকি হিসাবে ডাকা হয়। তৎকালীন সময়ে অনেক মনীষা আছেন বিখ্যাত শহর, জন্মস্থানকে নামের সঙ্গে সংযুক্ত করতেন। ইবনে বাইতারকেও জন্মস্থানকে নামের সঙ্গে যোগ করে মালেকি সাব্যস্ত করা হয়। তিনি মালেকি মাজহাবের অনুসারী ছিলেন না। তার পিতা ছিলেন দক্ষ পশু চিকিৎসক। পশু চিকিৎসককে আরবিতে বলা হয় বাইতার। এই বাইতার থেকে তার উপনাম হয় ইবনে বাইতার।

ছোটবেলা থেকে ইবনে বাইতার ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী। এই প্রকৃতিপ্রেমে তিনি বনজঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন। আস্তে আস্তে প্রকৃতির সঙ্গে তার মিতালি হয়, খুব ভাব জমে যায়। সারাদিন ঘুরে ঘুরে তিনি প্রকৃতি দেখতেন। এই প্রকৃতিপ্রেম থেকে তিনি আস্তে আস্তে উদ্ভিদ ও গাছপালা পর্যবেক্ষণ করে প্রকৃতি নিয়ে গবেষণায় নেমে পড়েন। ধীরে ধীরে আগ্রহী হয়ে উঠেন প্রকৃতি উদ্ভিদের দিকে। এর ফলে, বনজঙ্গলই হয়ে উঠে তার বিদ্যালয়। তবে এমন নয় যে, তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করেননি। তিনি সেভিলের পণ্ডিত আবুল আব্বাস আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ফায়াজের কাছে উদ্ভিদ বিজ্ঞানের পাঠ শুরু করেন। ইবনে ফায়াজ নাবাতি ছিলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানের ভালো পণ্ডিত। ইবনে বাইতার দ্রুতসময়ের মধ্যে তার ওস্তাদকে ছাড়িয়ে যান। তিনি তৎকালীন সময়ে উদ্ভিদ গবেষণায় সবাইকে ছাড়িয়ে যান।

তৎকালীন মুসলিম মনীষারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতেন। ইবনে বাইতারও তার ব্যতিক্রম নয়। ইবনে বাইতারের মধ্যে জ্ঞানের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিলো। তার বয়স যখন ২০, তখন তিনি বিভিন্ন দেশে সফরে বেরিয়ে যান। তিনি ছুটে যান গ্রিস, রোম, মরক্কো, মারাকেশ, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, এশিয়া মাইনর, আনতাকিয়া, সিরিয়া, হেজাজ, গাজা, জেরুজালেম, বৈরুত ও মিসরে। এসব দেশে গিয়ে জ্ঞানী-গুণীদের সাহচর্য লাভ করেন। তাদের সঙ্গে উদ্ভিদের প্রকার, বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করেন। তিনি বনে-জঙ্গলে গিয়ে ভেষজ উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করতেন। এমনকি উদ্ভিদ উৎপাদনস্থল পর্যবেক্ষণ করতেন গভীরভাবে। এ সম্পর্কে ইবনে আবি উসাইরিয়া বলেন, ‘দামেশকের বাইরে তার সঙ্গে বনে-জঙ্গলে প্রচুর গাছপালা দেখেছি।’

ইবনে বাইতার সুলতান আল-কামিলের শাসনকালে মিসরে অবস্থান গ্রহণ করেন। সুলতান তাকে নিযুক্ত করেন প্রধান ভেষজবিজ্ঞানী হিসাবে। তিনি ছিলেন উদ্ভিদ ও ভেষজ ওষুধের ক্ষেত্রে সুলতানের আস্থাভাজন। সুলতান আল-কামিলের ইন্তেকালের পর তিনি সুলতান নাজমুদ্দিন আইয়ুবের অধীনে কাজ শুরু করেন। তার দরবারেও তিনি বেশ সমাদৃত ছিলেন। ইবনে বাইতারের ভ্রমণসঙ্গী ইবনে আবি উসাইবিয়া বলেন, ‘আমি তার কাছে ডায়োসকোরাইডসের মেটেরিয়া মেডিকা গ্রন্থের ব্যাখ্যা পড়েছি। তার বিস্তৃত জ্ঞান, মেধা, প্রজ্ঞা ও বিশ্লেষণক্ষমতা ও অনুধাবনশক্তি আমাকে মুগ্ধ ও সমৃদ্ধ করেছে। গ্যালেন, গাফিকি ও ডায়োসকোরাইডসহ এই শাস্ত্রের দিকপালদের গুরুত্বপূর্ণ বই নিয়ে আমি তার কাছে উপস্থিত হতাম।’

ইবনে বাইতার তার পূর্বের এবং সমকালীন যারা গবেষক ও চিকিৎসা বিজ্ঞানী ছিলেন সকলকে তিনি ভালোভাবে অধ্যয়ন করেছেন। মুসলিম গবেষকরা এ বিষয়ে যেসব রচনা রেখে গেছে, সেসবও তিনি গভীরভাবে অধ্যয়ন করেন। ইবনে সিনা, আল-ইদরিসি, ইবনুল আব্বাস নাবাতি প্রমুখের গ্রন্থাদি তিনি পাঠ করেন এবং সেসব গ্রন্থের নিগূঢ় মর্ম ব্যাখ্যা করেছেন। আবার তিনি অধ্যয়নে থেমে যাননি, এসব গ্রন্থে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে সংশোধন-সংযোজন ও সমালোচনা করেছেন বলে জানা যায়। রমল্যান্ডো তার লেখা ইসহামু উলামাইল আরব ফিল হাযারাতিল উরুব্বিয়া গ্রন্থে বলেন, উদ্ভিদবিজ্ঞানে ইবনে রাইতারের অবদান ডায়োসকোরাইডসসহ পূর্ববর্তীদের সকল অবদান ছাড়িয়ে গেছে। তার একচ্ছত্র প্রভাব দশম হিজরি শতাব্দী পর্যন্ত বলবৎ ছিল।

তার গ্রন্থগুলোর অন্যতম হলো- আল জামি লি মুফরাদাতিল আদভিয়া ওয়াল আগযিয়া (ঔষধপত্রের শব্দকোষ)। ইবনে বাইতার এই বইয়ে কোন উদ্ভিদ থেকে কোন ঔষধ তৈরি হয় সেগুলো বর্ণনা করেছেন। তিনি প্রতিটি উদ্ভিদের আলাদা আলাদা গুণ, ঔষধের উপকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ বর্ণনা করেছেন। প্রত্যেক জায়গায় তিনি সবকিছু পূঙ্খানুপুঙ্খ বণর্না করেছেন। তার বইয়ের আরেকটা বৈশিষ্ট্য ছিলো- তিনি বইয়ে উদ্ভিদের ঔষধের নাম লিখতেন তারপর সেগুলোর বর্ণনা করে দিতেন। ফলে, শিল্পবিল্পবের আগ পর্যন্ত এই বই ছিলো ইউরোপের চিকিৎসা বিজ্ঞানের একমাত্র ভরসাস্থল। তিনি এ বইয়ে প্রায় ১৪০০ ঔষধের নাম লিখেন বলে জানা যায়। যার মধ্যে ৩০০টি তার নিজের আবিস্কার। ইবনে বাইতারের আরেকটি গ্রন্থ আল মুগনি ফিল আদভিয়াতিল মুফরাদা আছে, যেখানে তিনি বিভিন্ন অঙ্গের চিকিৎসা ও ঔষধের কথা উল্লেখ করেন।

ইবনে বাইতারের বিষয়ে ইউরোপীয়রা সাক্ষ্য দিয়েছে ইবনে বাইতার ছিলেন তৎকালীন আরব বিশ্বে শ্রেষ্ঠ লেখক এবং ভেষজ উদ্ভিদবিশারদ। তিনি ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ উদ্ভিদ বিজ্ঞানী হিসেবে অমর হয়ে থাকবেন। ইবনে বাইতার ইন্তেকাল করেন ১২৪৮ খ্রিস্টাব্দে দামেস্ক শহরে। তার কর্ম আমাদের মধ্যে এখনো অমর হয়ে আছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে উদ্ভিদের নানান রকমের ঔষধ উৎপাদনে ইবনে বাইতার পৃথিবীর ইতিহাস এক বিরল সাক্ষর রেখে যান। মুসলিম মনীষারা ইতিহাসে আমাদের জন্য অনেক গৌরবময় অধ্যায় রেখে গেছেন। আমাদের এগুলো জানা উচিত তাদের অবদান স্মরণ করা উচিত।

 

#
জনপ্রিয়

মধ্যযুগের প্রকৃতিপ্রেমী এক মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনে বাইতার

আপডেটের সময় : ০৬:৫৫:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৩
শেয়ার করুন

ইমরান উদ্দিন :

ইসলামের সোনালী ইতিহাসে অনেক মুসলিম মনীষী অবদান রেখেছেন বিভিন্নভাবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের এমন কোনো শাখা নেই, যেখানে মুসলিম মনীষীরা অবদান রাখেননি। ইতিহাস, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, রসায়ন, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি থেকে শুরু করে সবশাখায় মুসলিম মনীষীরা অবদান রেখে গেছেন। কিন্তু মুসলমানরা তাদের সম্পদগুলোকে কালের গর্ভে হারিয়ে ফেলেছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে থাকা মুসলমানদের কাছে তারা অপরিচিত হয়ে গেছে ধীরে ধীরে। তাদের অবদানের কথা সেভাবে স্মরণ ও উচ্চারণ করা হয় না। উল্টো মুসলিম মনীষীদের অবদানগুলো অন্যরা নাম বিকৃত করে বিশ্বে সমাদৃত হচ্ছে। যেসব মুসলিম মনীষী জ্ঞান-বিজ্ঞানের সব শাখায় অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন, সেসব মনীষাদের একজন হলেন- ইবনে বাইতার।

ইবনে বাইতার, নামটি বলতে গেলে আমাদের মাঝে একেবারে অপরিচিত। ইবনে বাইতারের পুরো নাম আবু মুহাম্মদ জিয়াউদ্দিন আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ মালেকি। তার গ্রামের নাম মালেকা, এটা আন্দালুসিয়ার অন্তর্ভুক্ত একটি গ্রাম। জন্মস্থানের দিক দিয়ে তাকে মালেকি হিসাবে ডাকা হয়। তৎকালীন সময়ে অনেক মনীষা আছেন বিখ্যাত শহর, জন্মস্থানকে নামের সঙ্গে সংযুক্ত করতেন। ইবনে বাইতারকেও জন্মস্থানকে নামের সঙ্গে যোগ করে মালেকি সাব্যস্ত করা হয়। তিনি মালেকি মাজহাবের অনুসারী ছিলেন না। তার পিতা ছিলেন দক্ষ পশু চিকিৎসক। পশু চিকিৎসককে আরবিতে বলা হয় বাইতার। এই বাইতার থেকে তার উপনাম হয় ইবনে বাইতার।

ছোটবেলা থেকে ইবনে বাইতার ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী। এই প্রকৃতিপ্রেমে তিনি বনজঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন। আস্তে আস্তে প্রকৃতির সঙ্গে তার মিতালি হয়, খুব ভাব জমে যায়। সারাদিন ঘুরে ঘুরে তিনি প্রকৃতি দেখতেন। এই প্রকৃতিপ্রেম থেকে তিনি আস্তে আস্তে উদ্ভিদ ও গাছপালা পর্যবেক্ষণ করে প্রকৃতি নিয়ে গবেষণায় নেমে পড়েন। ধীরে ধীরে আগ্রহী হয়ে উঠেন প্রকৃতি উদ্ভিদের দিকে। এর ফলে, বনজঙ্গলই হয়ে উঠে তার বিদ্যালয়। তবে এমন নয় যে, তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করেননি। তিনি সেভিলের পণ্ডিত আবুল আব্বাস আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ফায়াজের কাছে উদ্ভিদ বিজ্ঞানের পাঠ শুরু করেন। ইবনে ফায়াজ নাবাতি ছিলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানের ভালো পণ্ডিত। ইবনে বাইতার দ্রুতসময়ের মধ্যে তার ওস্তাদকে ছাড়িয়ে যান। তিনি তৎকালীন সময়ে উদ্ভিদ গবেষণায় সবাইকে ছাড়িয়ে যান।

তৎকালীন মুসলিম মনীষারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতেন। ইবনে বাইতারও তার ব্যতিক্রম নয়। ইবনে বাইতারের মধ্যে জ্ঞানের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিলো। তার বয়স যখন ২০, তখন তিনি বিভিন্ন দেশে সফরে বেরিয়ে যান। তিনি ছুটে যান গ্রিস, রোম, মরক্কো, মারাকেশ, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, এশিয়া মাইনর, আনতাকিয়া, সিরিয়া, হেজাজ, গাজা, জেরুজালেম, বৈরুত ও মিসরে। এসব দেশে গিয়ে জ্ঞানী-গুণীদের সাহচর্য লাভ করেন। তাদের সঙ্গে উদ্ভিদের প্রকার, বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করেন। তিনি বনে-জঙ্গলে গিয়ে ভেষজ উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করতেন। এমনকি উদ্ভিদ উৎপাদনস্থল পর্যবেক্ষণ করতেন গভীরভাবে। এ সম্পর্কে ইবনে আবি উসাইরিয়া বলেন, ‘দামেশকের বাইরে তার সঙ্গে বনে-জঙ্গলে প্রচুর গাছপালা দেখেছি।’

ইবনে বাইতার সুলতান আল-কামিলের শাসনকালে মিসরে অবস্থান গ্রহণ করেন। সুলতান তাকে নিযুক্ত করেন প্রধান ভেষজবিজ্ঞানী হিসাবে। তিনি ছিলেন উদ্ভিদ ও ভেষজ ওষুধের ক্ষেত্রে সুলতানের আস্থাভাজন। সুলতান আল-কামিলের ইন্তেকালের পর তিনি সুলতান নাজমুদ্দিন আইয়ুবের অধীনে কাজ শুরু করেন। তার দরবারেও তিনি বেশ সমাদৃত ছিলেন। ইবনে বাইতারের ভ্রমণসঙ্গী ইবনে আবি উসাইবিয়া বলেন, ‘আমি তার কাছে ডায়োসকোরাইডসের মেটেরিয়া মেডিকা গ্রন্থের ব্যাখ্যা পড়েছি। তার বিস্তৃত জ্ঞান, মেধা, প্রজ্ঞা ও বিশ্লেষণক্ষমতা ও অনুধাবনশক্তি আমাকে মুগ্ধ ও সমৃদ্ধ করেছে। গ্যালেন, গাফিকি ও ডায়োসকোরাইডসহ এই শাস্ত্রের দিকপালদের গুরুত্বপূর্ণ বই নিয়ে আমি তার কাছে উপস্থিত হতাম।’

ইবনে বাইতার তার পূর্বের এবং সমকালীন যারা গবেষক ও চিকিৎসা বিজ্ঞানী ছিলেন সকলকে তিনি ভালোভাবে অধ্যয়ন করেছেন। মুসলিম গবেষকরা এ বিষয়ে যেসব রচনা রেখে গেছে, সেসবও তিনি গভীরভাবে অধ্যয়ন করেন। ইবনে সিনা, আল-ইদরিসি, ইবনুল আব্বাস নাবাতি প্রমুখের গ্রন্থাদি তিনি পাঠ করেন এবং সেসব গ্রন্থের নিগূঢ় মর্ম ব্যাখ্যা করেছেন। আবার তিনি অধ্যয়নে থেমে যাননি, এসব গ্রন্থে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে সংশোধন-সংযোজন ও সমালোচনা করেছেন বলে জানা যায়। রমল্যান্ডো তার লেখা ইসহামু উলামাইল আরব ফিল হাযারাতিল উরুব্বিয়া গ্রন্থে বলেন, উদ্ভিদবিজ্ঞানে ইবনে রাইতারের অবদান ডায়োসকোরাইডসসহ পূর্ববর্তীদের সকল অবদান ছাড়িয়ে গেছে। তার একচ্ছত্র প্রভাব দশম হিজরি শতাব্দী পর্যন্ত বলবৎ ছিল।

তার গ্রন্থগুলোর অন্যতম হলো- আল জামি লি মুফরাদাতিল আদভিয়া ওয়াল আগযিয়া (ঔষধপত্রের শব্দকোষ)। ইবনে বাইতার এই বইয়ে কোন উদ্ভিদ থেকে কোন ঔষধ তৈরি হয় সেগুলো বর্ণনা করেছেন। তিনি প্রতিটি উদ্ভিদের আলাদা আলাদা গুণ, ঔষধের উপকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ বর্ণনা করেছেন। প্রত্যেক জায়গায় তিনি সবকিছু পূঙ্খানুপুঙ্খ বণর্না করেছেন। তার বইয়ের আরেকটা বৈশিষ্ট্য ছিলো- তিনি বইয়ে উদ্ভিদের ঔষধের নাম লিখতেন তারপর সেগুলোর বর্ণনা করে দিতেন। ফলে, শিল্পবিল্পবের আগ পর্যন্ত এই বই ছিলো ইউরোপের চিকিৎসা বিজ্ঞানের একমাত্র ভরসাস্থল। তিনি এ বইয়ে প্রায় ১৪০০ ঔষধের নাম লিখেন বলে জানা যায়। যার মধ্যে ৩০০টি তার নিজের আবিস্কার। ইবনে বাইতারের আরেকটি গ্রন্থ আল মুগনি ফিল আদভিয়াতিল মুফরাদা আছে, যেখানে তিনি বিভিন্ন অঙ্গের চিকিৎসা ও ঔষধের কথা উল্লেখ করেন।

ইবনে বাইতারের বিষয়ে ইউরোপীয়রা সাক্ষ্য দিয়েছে ইবনে বাইতার ছিলেন তৎকালীন আরব বিশ্বে শ্রেষ্ঠ লেখক এবং ভেষজ উদ্ভিদবিশারদ। তিনি ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ উদ্ভিদ বিজ্ঞানী হিসেবে অমর হয়ে থাকবেন। ইবনে বাইতার ইন্তেকাল করেন ১২৪৮ খ্রিস্টাব্দে দামেস্ক শহরে। তার কর্ম আমাদের মধ্যে এখনো অমর হয়ে আছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে উদ্ভিদের নানান রকমের ঔষধ উৎপাদনে ইবনে বাইতার পৃথিবীর ইতিহাস এক বিরল সাক্ষর রেখে যান। মুসলিম মনীষারা ইতিহাসে আমাদের জন্য অনেক গৌরবময় অধ্যায় রেখে গেছেন। আমাদের এগুলো জানা উচিত তাদের অবদান স্মরণ করা উচিত।