8:32 pm, Monday, 4 November 2024

জমিদার রবীন্দ্রনাথ ও তাঁরপল্লি-উন্নয়ন ভাবনার সূচনা : ড. আনোযারুল করীম

  • কারুবাক
  • আপডেটের সময় : ০৮:০৯:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩
  • 60 ভিউ
শেয়ার করুন

বলেছি, রবীন্দ্রনাথ পল্লি উন্নয়ন ভাবনা গড়ে উঠেছিল জমিদারি দায়িত্ব নেবার পর পরই। তবে পুরো কাজটা হাতে নিতে তিনি কিছুটা দেরি করেছিলেন। এই সম্পর্কে তিনি বলেন, “এখানকার গ্রাম সম্পর্কে আমি যে সব কথা ভাবছি তা’ এখনই কাজে লাগাবার সময় হয়নি, এখন কেবলমাত্র অবস্থাটা জানার চেষ্টা করছি। ভূপেন প্রধানত তথ্য সংগ্রহ করেছেন, সেগুলো ভাল করে জমে উঠলে তখন প¬ান ঠিক করতে হবে। আমি যথার্থভাবে স্বরাজ স্থাপন করতে চাই। ১৭

রবীন্দ্রনাথের এই পল্লি উন্নয়ন ভাবনা গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশের গ্রামীণ দুরবস্থার কারণে, কিন্তু কৃষকদের এমন দুর্ভাগ্য এক দিনে আসেনি। সুলতানী এবং মোগল যুগে চাষীদের অবস্থা কমবেশি ভাল ছিল। সে সময় ভূমি ব্যবস্থা তিন ভাগে বিভক্ত ছিল। খলিসা (সরকারি), জায়গীর (দান), তালুক (রাজস্ব-ব্যবস্থা)। এসবের অধিকারীবৃন্দকে ভূঁইয়া, তালুকদার এবং জমিদার বলা হতো। তাঁরা কৃষকদের নিকট থেকে খাজনা পেতেন। কিন্তু জমির মালিক ছিল স্থানীয়ভাবে কৃষক শ্রেণি। মোগল আমলে এসব ভূঁইয়া বা জমিদার শ্রেণি কৃষকদের নিকট থেকে যথারীতি খাজনা না পেলে তাদের ওপর অযথা পীড়ন করে। তবে শেষ পর্যায়ে এই ব্যবস্থার অবক্ষয় ঘটে। বাংলাদেশে মুর্শিদকুলী খাঁ বড় এবং ছোট জমিদার শ্রেণি করেন এবং এ সময়ে সৃষ্টি মধ্যস্বত্বভোগী তালুকদার, চৌধুরী, মোড়ল/মণ্ডল প্রভৃতির সৃষ্টি হয়।৩ ইজারাদারি প্রথার ব্যাপক প্রসারে বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থা অনেকটা ভেঙে পড়ে এবং কৃষকসমাজ এসবের মাধ্যমে শোষিত হতে থাকে। বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থা ইংরেজ শাসনামলে প্রথমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং পরবর্তীকালে বৃটিশ আওতাধীন হয় এবং কৃষকদের শোষণ অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পায়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক জমিদার শ্রেণি গড়ে ওঠে। বৃটিশ সরকারকে নির্ধারিত সময়ে খাজনা দেবার নিশ্চয়তা প্রদান করে জমিদারি লাভ সম্ভব হয়। কিন্তু এতে সাধারণ কৃষকের শোষণের মাত্রা আগের মতই থেকে যায়। এসব জমিদার কৃষক বা গ্রামোন্নয়নের জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ কৃষি প্রধান হলেও এখানে অতীতকাল থেকে নানা ধরণের শিল্প তৈরি হয়েছে। তন্মধ্যে ঢাকার মসলিন বস্ত্রশিল্প ছিল অন্যতম। বৃটিশ শাসনামলে এ ধরনের শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে।

এ প্রসঙ্গে রমেশ চন্দ্র দত্ত তাঁর ‘TheEconomic History of India in the Victorian Age Ge‡jb “The sources of a nation’s wealth are agriculture, commerce and manufactures and sound financial administration. British rule has given India peace; but British Administration has not promoted or widened these sources of national wealth in India” AZtci wZwb AviI e‡jb, “The production of raw material in India for British industries and the consumption of British manufactures in India where two fold objects of the early commercial policy of England the twofold objects of the early commercial policy of England…………

Coarse Indian goods, which did not in any way compete with Lancashire goods, were taxed as well as finer fabrics. The miserable condition of the miserable Indian labourer earning less than 2, a day, was taxed by jealous Government. The infant mill industry of Bombay instead of receiving help and encouragement was repressed by an excise duty unknown in any other part of the civilized world.” 18

এখানে বলা প্রয়োজন যে, তৎকালীন ভারতবর্ষে গ্রাম্য শিল্পের ধ্বংসের ক্ষেত্রে বৃটিশ সরকারের অবহেলোা একমাত্র কারণ ছিল না। এসবের অন্যতম কারণ হিসেবে জাতিভেদ প্রথাকেই সবিশেষ দায়ী করা চলে। আরও বলা যায় যে সে সময় ভারতে বিশাল ধন সম্পদের অধিকারী মানুষের বসবাস করতেন যাদের ধন সম্পদ ছিল কিংবদন্তীর মতো। অপরদিকে বিত্তহীন এবং নির্ধনের সংখ্যা ছিল অগণিত। এদের ঘরবাড়ী ছিল কাদামাটির এবং রোগও- শোক ছিল তাদের নিত্য সঙ্গী। ভারতবর্ষের এই বিশাল জনগোষ্ঠী যে দারিদ্র্য এবং অভাবের মধ্যে বসবাস করতো সেজন্যে তাদের উন্নয়নের জন্য বৃটিশ সরকার নানা লোক দেখানো উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। উন্ন্য়নের এশটি পূর্বশর্ত হলো শিক্ষা। বৃটিশ সরকার এ দিকে মোটেই দৃষ্টিপাত করেন। এ প্রসঙ্গে ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে উইলিয়াম টি, হ্যারিস বলেন “England`s educational policy in India is a blight on civilization. I have studied the problem pretty closely. In the latter part of the eighteenth century, writeforce,The English philanthropists, proposed to send school teachers to India, but a director of the East India Company objected, saying: “We have lost America from our folly in allowing the establishment of schools and colleges, and it would not do for us to repeat the same act of folly in regard to India…

There are no free public schools in British India and no compulsory system of primary education . Young Indians are hungry for education and it is England’s duty to do whatever,she can to help the spread of education in that great country of ancient cultures and wonderful philosophy.”19 (Mr. William T Harris, The US Commissioners of Education presented this address before the American National Council of Education at a meeting in Cleaveland in 1903).20

 

সে সময় ব্রিটিশ ভারত ছিল পুরোপুরি একটি বিরাট গ্রাম যেখানে অধিকাংশ মানুষই গ্রামে বসবাস করত। তৎকালীন ঘরহঃয ছঁরহয়ঁবহহরধষ ৎবারব’ি এ উল্লেখ করা হয় যে সমগ্র ব্রিটিশ ভারতে ৭ লক্ষ ৩০ হাজার গ্রামের জন্য ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৬৬৬ টি প্রাইমারি বিদ্যালয় ছিল এবং এসব প্রাইমারি বিদ্যালয়ে আদৌ কোনো শিক্ষা-উপকরণ ও সরঞ্জাম ছিল না। ২১ এসব প্রাইমারি বিদ্যালয়ে যারা শিক্ষকতার কাজে নিয়োজিত ছিলেন তাদের শিক্ষাগত যেমন কোনো যোগ্যতা ছিলনা তেমনি তাদের বেতনের অবস্থাও ছিল একবারে নগণ্য।

১৯৩০ সালের পূর্বে ব্রিটিশ ভারতে এবং বাংাদেশে প্রাইমারি শিক্ষা বাধ্যতামূলক ছিল না। এ সময় বাংলাদেশে (অবিভক্ত বাংলা) প্রাইমারি শিক্ষা এ্যাক্ট গঠিত হয়। কিন্তু এই ব্যবস্থা প্রথমদিকে কয়েকটি শহরে এবং নগরে প্রচরিত থাকে। প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য সরকার তেমন অর্থ বরাদ্দ করতেন না এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা আরও করুণ ছিল। কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পর ভালো চাকুরির ব্যবস্থা না থাকায় অধিকাংশই বেকার হয়ে পড়ত। সামান্য সংখ্যক সরকারের অধীনে কেরানীগিরি রাভ করলেও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ করা যুবক-যুবতীদের জন্য তেমন কোনো সুযোগ ছিলনা। এ প্রসঙ্গে All Bengal College and University and Teachers Association এর সম্মুখে প্রফেসর রাধাকৃষাণ এর বক্তব্য প্রনিধান যোগ্য। তিনি বলেন,

The Educational Policy of the Government trains men into docile tools of an external authority, it does not help them to become self respecting citizens of a free nation. Love of one’s native land is the basis of all progress. This principle is recognized in all countries but in our unfortunate country it is the otherway. A conquered race feels its heart sink. It loses hope, courage and conficence. Ourpolitical subjection carries with it the suggestion that we cannot consider ourselves the equals of free nations. Indian history is taught to impress on us the one lessonthat Indian history is taught to impress on us the one lesson that “India has failed”. The worst form of bondage is that of despair and dejection which creeps on defeated peoples, breeding on them loss of faith in themselves. The aim of true education should be to keep alive the spark of national pride and self respect. If we lose our wealth and resources we may recover them tomorrow, if not today; but if we lose our national consciousness there is no hope for us”22

প্রফেসর রাধাকৃষাণ তাঁর ব্রিটিশ ভারতে শিক্ষার দুরবস্থা এবং একটি পরাজিত জাতির অসহায়ত্বকে তুরে ধরছেন। তাঁর মতে একমাত্র যথার্থ শিক্ষাই একটি দেশের উন্নয়নের জন্য যেমন প্রয়োজন তেমনি তার ভাগ্যকে গড়ে নিতে এই শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

(অসমাপ্ত)

রবীন্দ্রনাথ এবং বাংলাদেশ গ্রন্থ থেকে নেয়া

#
জনপ্রিয়

জমিদার রবীন্দ্রনাথ ও তাঁরপল্লি-উন্নয়ন ভাবনার সূচনা : ড. আনোযারুল করীম

আপডেটের সময় : ০৮:০৯:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩
শেয়ার করুন

বলেছি, রবীন্দ্রনাথ পল্লি উন্নয়ন ভাবনা গড়ে উঠেছিল জমিদারি দায়িত্ব নেবার পর পরই। তবে পুরো কাজটা হাতে নিতে তিনি কিছুটা দেরি করেছিলেন। এই সম্পর্কে তিনি বলেন, “এখানকার গ্রাম সম্পর্কে আমি যে সব কথা ভাবছি তা’ এখনই কাজে লাগাবার সময় হয়নি, এখন কেবলমাত্র অবস্থাটা জানার চেষ্টা করছি। ভূপেন প্রধানত তথ্য সংগ্রহ করেছেন, সেগুলো ভাল করে জমে উঠলে তখন প¬ান ঠিক করতে হবে। আমি যথার্থভাবে স্বরাজ স্থাপন করতে চাই। ১৭

রবীন্দ্রনাথের এই পল্লি উন্নয়ন ভাবনা গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশের গ্রামীণ দুরবস্থার কারণে, কিন্তু কৃষকদের এমন দুর্ভাগ্য এক দিনে আসেনি। সুলতানী এবং মোগল যুগে চাষীদের অবস্থা কমবেশি ভাল ছিল। সে সময় ভূমি ব্যবস্থা তিন ভাগে বিভক্ত ছিল। খলিসা (সরকারি), জায়গীর (দান), তালুক (রাজস্ব-ব্যবস্থা)। এসবের অধিকারীবৃন্দকে ভূঁইয়া, তালুকদার এবং জমিদার বলা হতো। তাঁরা কৃষকদের নিকট থেকে খাজনা পেতেন। কিন্তু জমির মালিক ছিল স্থানীয়ভাবে কৃষক শ্রেণি। মোগল আমলে এসব ভূঁইয়া বা জমিদার শ্রেণি কৃষকদের নিকট থেকে যথারীতি খাজনা না পেলে তাদের ওপর অযথা পীড়ন করে। তবে শেষ পর্যায়ে এই ব্যবস্থার অবক্ষয় ঘটে। বাংলাদেশে মুর্শিদকুলী খাঁ বড় এবং ছোট জমিদার শ্রেণি করেন এবং এ সময়ে সৃষ্টি মধ্যস্বত্বভোগী তালুকদার, চৌধুরী, মোড়ল/মণ্ডল প্রভৃতির সৃষ্টি হয়।৩ ইজারাদারি প্রথার ব্যাপক প্রসারে বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থা অনেকটা ভেঙে পড়ে এবং কৃষকসমাজ এসবের মাধ্যমে শোষিত হতে থাকে। বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থা ইংরেজ শাসনামলে প্রথমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং পরবর্তীকালে বৃটিশ আওতাধীন হয় এবং কৃষকদের শোষণ অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পায়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক জমিদার শ্রেণি গড়ে ওঠে। বৃটিশ সরকারকে নির্ধারিত সময়ে খাজনা দেবার নিশ্চয়তা প্রদান করে জমিদারি লাভ সম্ভব হয়। কিন্তু এতে সাধারণ কৃষকের শোষণের মাত্রা আগের মতই থেকে যায়। এসব জমিদার কৃষক বা গ্রামোন্নয়নের জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ কৃষি প্রধান হলেও এখানে অতীতকাল থেকে নানা ধরণের শিল্প তৈরি হয়েছে। তন্মধ্যে ঢাকার মসলিন বস্ত্রশিল্প ছিল অন্যতম। বৃটিশ শাসনামলে এ ধরনের শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে।

এ প্রসঙ্গে রমেশ চন্দ্র দত্ত তাঁর ‘TheEconomic History of India in the Victorian Age Ge‡jb “The sources of a nation’s wealth are agriculture, commerce and manufactures and sound financial administration. British rule has given India peace; but British Administration has not promoted or widened these sources of national wealth in India” AZtci wZwb AviI e‡jb, “The production of raw material in India for British industries and the consumption of British manufactures in India where two fold objects of the early commercial policy of England the twofold objects of the early commercial policy of England…………

Coarse Indian goods, which did not in any way compete with Lancashire goods, were taxed as well as finer fabrics. The miserable condition of the miserable Indian labourer earning less than 2, a day, was taxed by jealous Government. The infant mill industry of Bombay instead of receiving help and encouragement was repressed by an excise duty unknown in any other part of the civilized world.” 18

এখানে বলা প্রয়োজন যে, তৎকালীন ভারতবর্ষে গ্রাম্য শিল্পের ধ্বংসের ক্ষেত্রে বৃটিশ সরকারের অবহেলোা একমাত্র কারণ ছিল না। এসবের অন্যতম কারণ হিসেবে জাতিভেদ প্রথাকেই সবিশেষ দায়ী করা চলে। আরও বলা যায় যে সে সময় ভারতে বিশাল ধন সম্পদের অধিকারী মানুষের বসবাস করতেন যাদের ধন সম্পদ ছিল কিংবদন্তীর মতো। অপরদিকে বিত্তহীন এবং নির্ধনের সংখ্যা ছিল অগণিত। এদের ঘরবাড়ী ছিল কাদামাটির এবং রোগও- শোক ছিল তাদের নিত্য সঙ্গী। ভারতবর্ষের এই বিশাল জনগোষ্ঠী যে দারিদ্র্য এবং অভাবের মধ্যে বসবাস করতো সেজন্যে তাদের উন্নয়নের জন্য বৃটিশ সরকার নানা লোক দেখানো উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। উন্ন্য়নের এশটি পূর্বশর্ত হলো শিক্ষা। বৃটিশ সরকার এ দিকে মোটেই দৃষ্টিপাত করেন। এ প্রসঙ্গে ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে উইলিয়াম টি, হ্যারিস বলেন “England`s educational policy in India is a blight on civilization. I have studied the problem pretty closely. In the latter part of the eighteenth century, writeforce,The English philanthropists, proposed to send school teachers to India, but a director of the East India Company objected, saying: “We have lost America from our folly in allowing the establishment of schools and colleges, and it would not do for us to repeat the same act of folly in regard to India…

There are no free public schools in British India and no compulsory system of primary education . Young Indians are hungry for education and it is England’s duty to do whatever,she can to help the spread of education in that great country of ancient cultures and wonderful philosophy.”19 (Mr. William T Harris, The US Commissioners of Education presented this address before the American National Council of Education at a meeting in Cleaveland in 1903).20

 

সে সময় ব্রিটিশ ভারত ছিল পুরোপুরি একটি বিরাট গ্রাম যেখানে অধিকাংশ মানুষই গ্রামে বসবাস করত। তৎকালীন ঘরহঃয ছঁরহয়ঁবহহরধষ ৎবারব’ি এ উল্লেখ করা হয় যে সমগ্র ব্রিটিশ ভারতে ৭ লক্ষ ৩০ হাজার গ্রামের জন্য ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৬৬৬ টি প্রাইমারি বিদ্যালয় ছিল এবং এসব প্রাইমারি বিদ্যালয়ে আদৌ কোনো শিক্ষা-উপকরণ ও সরঞ্জাম ছিল না। ২১ এসব প্রাইমারি বিদ্যালয়ে যারা শিক্ষকতার কাজে নিয়োজিত ছিলেন তাদের শিক্ষাগত যেমন কোনো যোগ্যতা ছিলনা তেমনি তাদের বেতনের অবস্থাও ছিল একবারে নগণ্য।

১৯৩০ সালের পূর্বে ব্রিটিশ ভারতে এবং বাংাদেশে প্রাইমারি শিক্ষা বাধ্যতামূলক ছিল না। এ সময় বাংলাদেশে (অবিভক্ত বাংলা) প্রাইমারি শিক্ষা এ্যাক্ট গঠিত হয়। কিন্তু এই ব্যবস্থা প্রথমদিকে কয়েকটি শহরে এবং নগরে প্রচরিত থাকে। প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য সরকার তেমন অর্থ বরাদ্দ করতেন না এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা আরও করুণ ছিল। কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পর ভালো চাকুরির ব্যবস্থা না থাকায় অধিকাংশই বেকার হয়ে পড়ত। সামান্য সংখ্যক সরকারের অধীনে কেরানীগিরি রাভ করলেও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ করা যুবক-যুবতীদের জন্য তেমন কোনো সুযোগ ছিলনা। এ প্রসঙ্গে All Bengal College and University and Teachers Association এর সম্মুখে প্রফেসর রাধাকৃষাণ এর বক্তব্য প্রনিধান যোগ্য। তিনি বলেন,

The Educational Policy of the Government trains men into docile tools of an external authority, it does not help them to become self respecting citizens of a free nation. Love of one’s native land is the basis of all progress. This principle is recognized in all countries but in our unfortunate country it is the otherway. A conquered race feels its heart sink. It loses hope, courage and conficence. Ourpolitical subjection carries with it the suggestion that we cannot consider ourselves the equals of free nations. Indian history is taught to impress on us the one lessonthat Indian history is taught to impress on us the one lesson that “India has failed”. The worst form of bondage is that of despair and dejection which creeps on defeated peoples, breeding on them loss of faith in themselves. The aim of true education should be to keep alive the spark of national pride and self respect. If we lose our wealth and resources we may recover them tomorrow, if not today; but if we lose our national consciousness there is no hope for us”22

প্রফেসর রাধাকৃষাণ তাঁর ব্রিটিশ ভারতে শিক্ষার দুরবস্থা এবং একটি পরাজিত জাতির অসহায়ত্বকে তুরে ধরছেন। তাঁর মতে একমাত্র যথার্থ শিক্ষাই একটি দেশের উন্নয়নের জন্য যেমন প্রয়োজন তেমনি তার ভাগ্যকে গড়ে নিতে এই শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

(অসমাপ্ত)

রবীন্দ্রনাথ এবং বাংলাদেশ গ্রন্থ থেকে নেয়া