7:31 am, Sunday, 3 November 2024

পানাম নগর ঘুরে আসি : স্থপতি মশিউর রহমান খান

  • কারুবাক
  • আপডেটের সময় : ০৭:০১:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩
  • 58 ভিউ
শেয়ার করুন

পনেরো শতকে সোনারগাঁয়ে বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেছিলেন ঈশাঁখা। আরো পরে এর পাশেই গড়ে উঠে একটি নগরী, নাম- পানাম। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে পানাম নগরী আজও দাঁড়িয়ে আছে। তবে যারা একদিন নগরীটির গোড়াপত্তন করেছিলেন তাদের কোন উত্তরাধিকার আজ সেখানে নেই। নেই পানামের সেই জৌলুস। এখানকার স্থাপত্য আর ঐতিহাসিক নিদর্শন মনে করিয়ে দেয় বাঙালির অতীত ইতিহাস।

পৃথিবীর ১০০টি ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক শহরের একটি পানাম নগর। World Monument Fund
২০০৬ সালে পানাম নগরকে বিশ্বের ধ্বংসপ্রায় ১০০টি ঐতিহাসিক স্থাপনার তালিকায় প্রকাশ করে। ঈসা খাঁ-র আমলের বাংলার রাজধানী পানাম নগর । বড় নগর, খাস নগর, পানাম নগর –প্রাচীন সোনারগাঁর এই তিন নগরের মধ্যে পানাম ছিলো সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এখানে কয়েক শতাব্দী পুরনো অনেক ভবন রয়েছে, যা বাংলার বার ভূইয়াঁদের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত।

রাজধানীর উপকণ্ঠে পানাম নগর। সোনারগাঁওয়ের বর্ণাঢ্য ইতিহাসের শেষ পর্দাটি পড়েছিল এই পানাম নগরকে কেন্দ্র করেই। পানামের লোনা ইটের ফাঁকে ফাঁকে শেওলার মদির গন্ধ এ প্রজন্মকে করেছে নস্টালজিক। রহস্য, দুর্বোধ্যতা, রোমাঞ্চ ও স্থাপত্যিক, নান্দনিক কারিশমা পানামকে করেছে অজেয়। সরকারী তদারকির অভাবে অবৈধ দখল আর নির্বিচার লিজ ব্যবস্থা পাল্টে দিয়েছে নগরীর মূল চেহারা।

সুবর্নগ্রাম, ঢাকা থেকে 27 K.M. South-East এ অবস্থিত। যার মধ্য দিয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম
হাইওয়ে চলে গেছে। পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে শীতলক্ষা, দক্ষিণে ধলেশ্বরী নদী ও উত্তরে বহ্মপুত্র
নদে ঘেরা সোনারগাঁ। মুঘল শাসনে এর আয়তন ছিল প্রায় ২৪ বর্গমাইল। উনিশ শতকের গোড়ার দিকের কথা। বড় বড় জাহাজ বা নৌকায় করে আসছে বিলাতি থানকাপড়, যাচ্ছে এদেশের মসলিন।

শীতলক্ষা বা মেঘনার ঘাটে প্রতিদিনই ভিড়ছে পালতোলা নৌকা। ঐ সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির বানিজ্যিক কার্যক্রম ও চিরস্থায়ী বন্ধোবস্তের ফলে ইউরোপীয় অনুপ্ররেণায় নতুন ঔপনিবেশিক স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত হয় পানাম নগরী। এটি তখন হিন্দু ব্যবসায়ী ও তালুকদার সম্প্রদায়ের অভিজাত আবাসিক এলাকা ছিল। অনেকে বলেন, এলাকাটি ছিলো প্রথম দিকের মুসলিম শাসকদের আবাসস্থল। বলা হয় ১৬১১ সালে মুঘলদের সোনারগাঁ অধিকারের পর সড়ক ও সেতু নির্মাণ করে রাজধানী শহরের সঙ্গে পানাম এলাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়। পানাম পুল দালালপুর পুল এবং পানাম নগর সেতুর অবস্থান এবং পানামের তিন দিকের খাল বেষ্টনী থেকে বোঝা যায়, এলাকাটি তখন নগরের উপশহর ছিল।

প্রায় পৌনে দুইশ বছর আগে ‘পরিব্রাজক’ জেমস টেলর সোনারগাঁও ভ্রমণ করেছিলেন। জেমস টেলর পানামকে বলেছিলেন ‘পাইন্নাম’। জেমস টেলরের বর্ণনায় ঘন পত্রপল্লবে আচ্ছাদিত পানাম ছিল একটি অস্বাস্থ্যকর স্থান। বিশেষত বর্ষাকালে ঘোড়া এবং হাতি ছাড়া কর্দমাক্ত রাস্তা পার হওয়া খুব কঠিন ব্যাপার। পানামে ঢুকতে মোগল আমলের একটি সেতু আছে (বর্তমানে যা ধ্বংস হয়ে গেছে)। এই সেতু থেকে লক্ষ্য করলে একটি গলির দু’ধারে, দোতলা-তিনতলা পুরনো ইমারত দেখা যায়।
’পাইন্নাম’ শহরের চারদিক ঘিরে রয়েছে খাল, জলাভূমি, বিশাল দীঘি।

পানামের নগর পরিকল্পনা নিখুঁত। সড়কের উত্তর পাশে ৩১টি এবং দক্ষিণ পাশে ২১টি ইমারত। এগুলো কোথাও পরস্পর বিচ্ছিন্ন, কোথাও বা সমিহিত। বাড়িগুলোরঅধিকাংশই আয়তকার, উত্তর- দক্ষিনে বিস্তৃত, উচ্চতায় একতলা থেকে তিনতলা। পানি সরবরাহের জন্য রয়েছে দু পাশে দুটি খাল আর পাঁচটি বড় পুকুর। মুঘল ও দেশজ অলঙ্করণের মিশ্রনে বানানো বাড়িগুলো। ইটের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে ঢালাই লোহার তৈরী ব্রাকেট,ভেন্টিলেটর,জানালার গ্রিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সিরামিক টাইলসের রুপায়ন। মেঝেতে ব্যবহার করা হয়েছে লাল, কালো ও সাদা মোজাইক। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই Arch ও ছাদের মধ্যবর্তী স্থানে নীল ও সাদা ছাপ দেখা যায়। পানাম নগরের সড়কটি প্রস্থে 5m এবং লম্বা 600m সড়কটি curvely চলে গেছে। বাড়ীগুলো সড়কের দিকে মুখ করা। তাদের Transport ছিলো নৌকা এবং ঘোড়ার গাড়ি। প্রায় সবগুলো বাড়ীতেই Internal Court
দেখা যায়। তাদের বিভিন্ন Social Cultural Program এখানে করা হতো। বাড়ির শেষ প্রান্তে খালে, পাকা ঘাট ছিল। কিছু বাড়িতে পুকুর ঘাট ছিলো। সবগুলো বাড়ির দেয়াল ইটের তৈরী। Minimum wall thick ছিল 20"। উপরে উঠার সিড়িগুলো ছিল সরু এবং কারুকার্যপূর্ণ। রেলিংগুলো Cast iron এবং কাঠের তৈরী। কিছু Door – window তে কাঠের Paneled এ color glass ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এগুলো বিশেষ ভাবে কারুকার্যপূর্ণ ছিলো। Arch গুলো ছিলো Wrought Iron এর তৈরী।

বর্তমান পানাম নগর শুধু ইতিহাসে বেচে আছে। পৌরানিক কাহিনী, পর্যটকের Documents,
ঐতিহাসিক এবং কৌতুহলী, researches থেকে এর জৌলুস সম্পর্কে জানা যায়। বতর্মানে পানাম শহরে ঢুকলেই চোখে পড়ে ছোট্ট একটি খাল। একদিন এ খালে ছিল সুদৃশ্য অর্ধচন্দ্রাকার পানাম সেতু। দৈর্ঘ্যে ৭২ এ প্রস্থে ১৫ ফুট। পানাম নগরীর বাড়িগুলোতে ঔপনিবেশিক যুগের স্থাপত্যরীতির ছাপ স্পষ্ট।এখনো যে 40 টি বাড়ি টিকে আছে সেগুলোতে অন্দরবাড়ী ও বহিঃবাড়ি দুটোই রয়েছে।
যদিও বর্তমানে বাড়ীগুলোর লিজ নবায়ন করা হচ্ছে না তবে এখনো এগুলো দখলে। সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় দখলদার। অধিকাংশ বাড়ির মেঝেতে সিরামিক টাইলসের ভাগ্নদশা চোখে পড়ে। Arch গুলি বেশির ভাগই চুরি হয়ে গেছে। যা আছে তাতেও মরচে পড়া।একটি বাড়িতে ঢুকে দেখা যায় বিশাল নাচঘরটি এখনো রয়ে গেছে। চারদিকে একতলা ও দোতলায় দর্শকদের বসার ব্যবস্থা আছে।
শুধু ঘরের উপরিভাগই নয় ভেঙ্গে পড়েছে মুঘল ও গ্রিকরীতির আদলে তৈরী Column গুলোর Plaster এর কারুকাজ।

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পানাম নগরের বাড়িগুলো ইজারা দেয় হয়। কিন্তু অযত্ন আর অবহেলায় বাড়িগুলো নষ্ট হতে থাকে। ফলে ইজারা বন্ধ করা হয়। সংরক্ষণের অভাবে এসময় দুটি বাড়ি সম্পূর্ণ ধসে যায়। ১৯৭৫ সালে ১২ মার্চ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পানাম শহরে গড়ে তোলেন লোকশিল্প সংগ্রহশালা ‘বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন’। প্রাথমিক অবস্থায় পানাম শহরের একটি দ্বিতল বাড়িতে ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ড আরম্ভ হয়। পরবর্তীকালে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন ‘বড় সরদার বাড়িতে’ স্থানান্তর করা হয়। এবং এ বড় সরদার বাড়িকে ঘিরেই জাদুঘর গড়ে ওঠে। ক্রমে ক্রমে জাদুঘর সম্বলিত শতাধিক বছরের বর্ণাঢ্য, ঐশ্বর্যশালী, টেরাকোটা, মনোমুগ্ধকর তোরণ, জলসাঘর, হেরেম, প্রাসাদ সংলগ্ন বহির্বাটির এবং অন্দরমহলের দীঘি, কংক্রিটের ঘোড়ায় উপবিষ্ট অস্ত্রধারী সৈনিকের দুটি ভাস্কর্য বাংলাদেশ এবং বহির্বিশ্বের পর্যটকদের কাছে টানে। ‘‘বড় সরদার বাড়ি’’ প্রাসাদের চারদিকে ঘিরে আছে প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য, এ বিশাল বাড়িটির দুধারেই আছে দুটো বড় দীঘি, এ দীঘির জলে মাছ খেলা করে, দীঘিতে ছায়া পড়ে প্রাসাদের, ঝলমল রাতে প্রাসাদের লাল, নীল, সবুজ চিনামাটির বর্ণাঢ্য তোরণের ছবি দীঘিতে পড়ে এক অপরূপ ছায়াবাজির সৃষ্টি করে।

শের শাহের আমলে নির্মিত সোনারগাঁও থেকে সিন্ধু পর্যন্ত প্রায় ১৭ শ’ মাইলের ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড ট্রাংক রোডের খানিক চিহ্ন পানামে আজো দৃষ্ট হয় বলে হাল আমলে তা পাকা করা হয়েছে। এদিকে ২০০১ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পানাম নগরী সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ সময়ে অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে পানাম নগরীকে উদ্ধারের কার্যক্রম শুরু হয়।
২০০৯ সালে পানাম নগরীকে সম্পূর্ণভাবে দখল মুক্ত করে স্থানীয় প্রশাসন। এ নগরীর ছোট বড় ৫২টি ভবনকে চিহ্নিত করে অবৈধ দখল মুক্ত করা হয়। প্রাথমিকভাবে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে কয়েকটি ভবনের সংস্কার কাজ শুরু করে। সংস্কারের নামে পানাম নগরীতে ৯টি ভবন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সৌন্দর্য নষ্ট করে যেনতেনভাবে চুন-সুরকির প্রলেপ দিয়ে সংস্কার করার চেষ্টা করলে স্থানীয় সুশীলসমাজ ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দল প্রবল আপত্তির মুখে সংস্কার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এ পানাম নগরীর সংস্কার কাজ নিয়ে ওই সময়ে ব্যাপক জালিয়াতি করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর । সংস্কারের নামে নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল পানাম নগরীর প্রকৃত নকশা। অথচ পানাম নগরীর অবিকল নকশা ঠিক রেখে সংস্কার কাজের কথা ছিল।একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে পানাম নগরীর পাঁচটি ভবন প্রাথমিকভাবে সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ সংস্কার কাজের জন্য দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি এর সাথে যোগাযোগ করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ফলে ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও কোরিয়া ইপিজেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিহাক সাং একাধিকবার পানাম নগরী পরিদর্শনে আসেন। ওই কোম্পানির সাথে সংস্কারের চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। বর্তমানে অর্থের অভাবে সংস্কার কাজ আর হচ্ছে না। বিনিয়োগ করার মতো কোনো সংস্থা বা কোম্পানি এগিয়ে আসছে না।১৪ বছর পর সংস্কার না হওয়ায় পানামের সব ভবনের অসংখ্য কক্ষের ইট ধসে পড়ছে।

খসে পড়েছে কারুকাজগুলো। তবুও কোনোভাবে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অবকাঠামোগুলো। ভুতুড়ে পানাম নগরের ভবনগুলোর অন্ধকার কক্ষে একাকী দাঁড়ালে ভয়ে গা শিউরে ওঠে। ভবনের অবকাঠামোগুলো মনে করিয়ে দেয় সে সময়ের বর্ণিল সব আয়োজন। প্রতিটি ইটের সাথে জড়িয়ে আছে নানা অজানা ইতিহাস। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর হিসাব অনুযায়ী নগরীর ২৬টি ভবনকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি ভবনে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন’ সাইন বোর্ড লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।
ফলে বর্তমানে পানাম নগরীতে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা কোনো ভবনই ভালোভাবে ঘুরে ফিরে দেখতে পারছেন না। কারণ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এ ছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশ বড় ধরনের ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। সামান্য ভূমিকম্পই এ নগরী ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। অচিরেই পানাম নগর প্রত্ত্বতাত্ত্বিকভাবে সংরক্ষণ করে ও মধ্যযুগীয় ইমারতের স্থাপত্যেকলার বিন্যাসে পানামের অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করা অতীব জরুরি হয়ে উঠেছে।

একসময় পানাম নগর ছিল মানুষে মানুষে মুখরিত, জমজমাট এক এলাকা, আজ হয়ত সে কিছু নেই। তবে পানাম নগরে গেলে প্রতিটি ইটে, প্রতিটি স্থাপত্য নিদর্শনে ৪৫০ বছর আগের সে ব্যস্ততা অনুভব করা যায়।  যে নীল আর মসলিন একসময় জমজমাট করে তুলেছিল পানাম নগরকে, সেগুলোর অনুপস্থিতি ধীরে ধীরে একে করে তুলল এক ভূতুড়ে নগরী। এক জমজমাট এলাকার কী করুণ পরিণতি!
যদিও অনেকে একে এখন “ঘোস্ট সিটি” বা ভূতুড়ে নগর বলে ডাকেন, আদতে এটি এখন
দর্শনার্থীদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। দেশি বিদেশী নানান পর্যটকের ভিড়ে এখন মুখরিত থাকে পানাম নগর । সময় যতো গড়িয়ে যায় ততই বাড়তে থাকে পানাম নগরের রূপ। শেষ বিকেলের আলোয় পানাম নগরের প্রতিটি ইট রক্তলাল হয়ে ওঠে। সন্ধ্যে নামার আগেই জনমানবহীন হয়ে পড়ে কালের সাক্ষী। রাতের আধারেও শতাব্দি পুরনো ইতিহাস বুকে নিয়ে ঠায় দাড়িয়ে থাকে পানাম নগর।

সূত্র : আনন্দ আলো

#
জনপ্রিয়

পানাম নগর ঘুরে আসি : স্থপতি মশিউর রহমান খান

আপডেটের সময় : ০৭:০১:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩
শেয়ার করুন

পনেরো শতকে সোনারগাঁয়ে বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেছিলেন ঈশাঁখা। আরো পরে এর পাশেই গড়ে উঠে একটি নগরী, নাম- পানাম। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে পানাম নগরী আজও দাঁড়িয়ে আছে। তবে যারা একদিন নগরীটির গোড়াপত্তন করেছিলেন তাদের কোন উত্তরাধিকার আজ সেখানে নেই। নেই পানামের সেই জৌলুস। এখানকার স্থাপত্য আর ঐতিহাসিক নিদর্শন মনে করিয়ে দেয় বাঙালির অতীত ইতিহাস।

পৃথিবীর ১০০টি ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক শহরের একটি পানাম নগর। World Monument Fund
২০০৬ সালে পানাম নগরকে বিশ্বের ধ্বংসপ্রায় ১০০টি ঐতিহাসিক স্থাপনার তালিকায় প্রকাশ করে। ঈসা খাঁ-র আমলের বাংলার রাজধানী পানাম নগর । বড় নগর, খাস নগর, পানাম নগর –প্রাচীন সোনারগাঁর এই তিন নগরের মধ্যে পানাম ছিলো সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এখানে কয়েক শতাব্দী পুরনো অনেক ভবন রয়েছে, যা বাংলার বার ভূইয়াঁদের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত।

রাজধানীর উপকণ্ঠে পানাম নগর। সোনারগাঁওয়ের বর্ণাঢ্য ইতিহাসের শেষ পর্দাটি পড়েছিল এই পানাম নগরকে কেন্দ্র করেই। পানামের লোনা ইটের ফাঁকে ফাঁকে শেওলার মদির গন্ধ এ প্রজন্মকে করেছে নস্টালজিক। রহস্য, দুর্বোধ্যতা, রোমাঞ্চ ও স্থাপত্যিক, নান্দনিক কারিশমা পানামকে করেছে অজেয়। সরকারী তদারকির অভাবে অবৈধ দখল আর নির্বিচার লিজ ব্যবস্থা পাল্টে দিয়েছে নগরীর মূল চেহারা।

সুবর্নগ্রাম, ঢাকা থেকে 27 K.M. South-East এ অবস্থিত। যার মধ্য দিয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম
হাইওয়ে চলে গেছে। পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে শীতলক্ষা, দক্ষিণে ধলেশ্বরী নদী ও উত্তরে বহ্মপুত্র
নদে ঘেরা সোনারগাঁ। মুঘল শাসনে এর আয়তন ছিল প্রায় ২৪ বর্গমাইল। উনিশ শতকের গোড়ার দিকের কথা। বড় বড় জাহাজ বা নৌকায় করে আসছে বিলাতি থানকাপড়, যাচ্ছে এদেশের মসলিন।

শীতলক্ষা বা মেঘনার ঘাটে প্রতিদিনই ভিড়ছে পালতোলা নৌকা। ঐ সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির বানিজ্যিক কার্যক্রম ও চিরস্থায়ী বন্ধোবস্তের ফলে ইউরোপীয় অনুপ্ররেণায় নতুন ঔপনিবেশিক স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত হয় পানাম নগরী। এটি তখন হিন্দু ব্যবসায়ী ও তালুকদার সম্প্রদায়ের অভিজাত আবাসিক এলাকা ছিল। অনেকে বলেন, এলাকাটি ছিলো প্রথম দিকের মুসলিম শাসকদের আবাসস্থল। বলা হয় ১৬১১ সালে মুঘলদের সোনারগাঁ অধিকারের পর সড়ক ও সেতু নির্মাণ করে রাজধানী শহরের সঙ্গে পানাম এলাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়। পানাম পুল দালালপুর পুল এবং পানাম নগর সেতুর অবস্থান এবং পানামের তিন দিকের খাল বেষ্টনী থেকে বোঝা যায়, এলাকাটি তখন নগরের উপশহর ছিল।

প্রায় পৌনে দুইশ বছর আগে ‘পরিব্রাজক’ জেমস টেলর সোনারগাঁও ভ্রমণ করেছিলেন। জেমস টেলর পানামকে বলেছিলেন ‘পাইন্নাম’। জেমস টেলরের বর্ণনায় ঘন পত্রপল্লবে আচ্ছাদিত পানাম ছিল একটি অস্বাস্থ্যকর স্থান। বিশেষত বর্ষাকালে ঘোড়া এবং হাতি ছাড়া কর্দমাক্ত রাস্তা পার হওয়া খুব কঠিন ব্যাপার। পানামে ঢুকতে মোগল আমলের একটি সেতু আছে (বর্তমানে যা ধ্বংস হয়ে গেছে)। এই সেতু থেকে লক্ষ্য করলে একটি গলির দু’ধারে, দোতলা-তিনতলা পুরনো ইমারত দেখা যায়।
’পাইন্নাম’ শহরের চারদিক ঘিরে রয়েছে খাল, জলাভূমি, বিশাল দীঘি।

পানামের নগর পরিকল্পনা নিখুঁত। সড়কের উত্তর পাশে ৩১টি এবং দক্ষিণ পাশে ২১টি ইমারত। এগুলো কোথাও পরস্পর বিচ্ছিন্ন, কোথাও বা সমিহিত। বাড়িগুলোরঅধিকাংশই আয়তকার, উত্তর- দক্ষিনে বিস্তৃত, উচ্চতায় একতলা থেকে তিনতলা। পানি সরবরাহের জন্য রয়েছে দু পাশে দুটি খাল আর পাঁচটি বড় পুকুর। মুঘল ও দেশজ অলঙ্করণের মিশ্রনে বানানো বাড়িগুলো। ইটের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে ঢালাই লোহার তৈরী ব্রাকেট,ভেন্টিলেটর,জানালার গ্রিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সিরামিক টাইলসের রুপায়ন। মেঝেতে ব্যবহার করা হয়েছে লাল, কালো ও সাদা মোজাইক। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই Arch ও ছাদের মধ্যবর্তী স্থানে নীল ও সাদা ছাপ দেখা যায়। পানাম নগরের সড়কটি প্রস্থে 5m এবং লম্বা 600m সড়কটি curvely চলে গেছে। বাড়ীগুলো সড়কের দিকে মুখ করা। তাদের Transport ছিলো নৌকা এবং ঘোড়ার গাড়ি। প্রায় সবগুলো বাড়ীতেই Internal Court
দেখা যায়। তাদের বিভিন্ন Social Cultural Program এখানে করা হতো। বাড়ির শেষ প্রান্তে খালে, পাকা ঘাট ছিল। কিছু বাড়িতে পুকুর ঘাট ছিলো। সবগুলো বাড়ির দেয়াল ইটের তৈরী। Minimum wall thick ছিল 20"। উপরে উঠার সিড়িগুলো ছিল সরু এবং কারুকার্যপূর্ণ। রেলিংগুলো Cast iron এবং কাঠের তৈরী। কিছু Door – window তে কাঠের Paneled এ color glass ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এগুলো বিশেষ ভাবে কারুকার্যপূর্ণ ছিলো। Arch গুলো ছিলো Wrought Iron এর তৈরী।

বর্তমান পানাম নগর শুধু ইতিহাসে বেচে আছে। পৌরানিক কাহিনী, পর্যটকের Documents,
ঐতিহাসিক এবং কৌতুহলী, researches থেকে এর জৌলুস সম্পর্কে জানা যায়। বতর্মানে পানাম শহরে ঢুকলেই চোখে পড়ে ছোট্ট একটি খাল। একদিন এ খালে ছিল সুদৃশ্য অর্ধচন্দ্রাকার পানাম সেতু। দৈর্ঘ্যে ৭২ এ প্রস্থে ১৫ ফুট। পানাম নগরীর বাড়িগুলোতে ঔপনিবেশিক যুগের স্থাপত্যরীতির ছাপ স্পষ্ট।এখনো যে 40 টি বাড়ি টিকে আছে সেগুলোতে অন্দরবাড়ী ও বহিঃবাড়ি দুটোই রয়েছে।
যদিও বর্তমানে বাড়ীগুলোর লিজ নবায়ন করা হচ্ছে না তবে এখনো এগুলো দখলে। সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় দখলদার। অধিকাংশ বাড়ির মেঝেতে সিরামিক টাইলসের ভাগ্নদশা চোখে পড়ে। Arch গুলি বেশির ভাগই চুরি হয়ে গেছে। যা আছে তাতেও মরচে পড়া।একটি বাড়িতে ঢুকে দেখা যায় বিশাল নাচঘরটি এখনো রয়ে গেছে। চারদিকে একতলা ও দোতলায় দর্শকদের বসার ব্যবস্থা আছে।
শুধু ঘরের উপরিভাগই নয় ভেঙ্গে পড়েছে মুঘল ও গ্রিকরীতির আদলে তৈরী Column গুলোর Plaster এর কারুকাজ।

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পানাম নগরের বাড়িগুলো ইজারা দেয় হয়। কিন্তু অযত্ন আর অবহেলায় বাড়িগুলো নষ্ট হতে থাকে। ফলে ইজারা বন্ধ করা হয়। সংরক্ষণের অভাবে এসময় দুটি বাড়ি সম্পূর্ণ ধসে যায়। ১৯৭৫ সালে ১২ মার্চ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পানাম শহরে গড়ে তোলেন লোকশিল্প সংগ্রহশালা ‘বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন’। প্রাথমিক অবস্থায় পানাম শহরের একটি দ্বিতল বাড়িতে ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ড আরম্ভ হয়। পরবর্তীকালে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন ‘বড় সরদার বাড়িতে’ স্থানান্তর করা হয়। এবং এ বড় সরদার বাড়িকে ঘিরেই জাদুঘর গড়ে ওঠে। ক্রমে ক্রমে জাদুঘর সম্বলিত শতাধিক বছরের বর্ণাঢ্য, ঐশ্বর্যশালী, টেরাকোটা, মনোমুগ্ধকর তোরণ, জলসাঘর, হেরেম, প্রাসাদ সংলগ্ন বহির্বাটির এবং অন্দরমহলের দীঘি, কংক্রিটের ঘোড়ায় উপবিষ্ট অস্ত্রধারী সৈনিকের দুটি ভাস্কর্য বাংলাদেশ এবং বহির্বিশ্বের পর্যটকদের কাছে টানে। ‘‘বড় সরদার বাড়ি’’ প্রাসাদের চারদিকে ঘিরে আছে প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য, এ বিশাল বাড়িটির দুধারেই আছে দুটো বড় দীঘি, এ দীঘির জলে মাছ খেলা করে, দীঘিতে ছায়া পড়ে প্রাসাদের, ঝলমল রাতে প্রাসাদের লাল, নীল, সবুজ চিনামাটির বর্ণাঢ্য তোরণের ছবি দীঘিতে পড়ে এক অপরূপ ছায়াবাজির সৃষ্টি করে।

শের শাহের আমলে নির্মিত সোনারগাঁও থেকে সিন্ধু পর্যন্ত প্রায় ১৭ শ’ মাইলের ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড ট্রাংক রোডের খানিক চিহ্ন পানামে আজো দৃষ্ট হয় বলে হাল আমলে তা পাকা করা হয়েছে। এদিকে ২০০১ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পানাম নগরী সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ সময়ে অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে পানাম নগরীকে উদ্ধারের কার্যক্রম শুরু হয়।
২০০৯ সালে পানাম নগরীকে সম্পূর্ণভাবে দখল মুক্ত করে স্থানীয় প্রশাসন। এ নগরীর ছোট বড় ৫২টি ভবনকে চিহ্নিত করে অবৈধ দখল মুক্ত করা হয়। প্রাথমিকভাবে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে কয়েকটি ভবনের সংস্কার কাজ শুরু করে। সংস্কারের নামে পানাম নগরীতে ৯টি ভবন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সৌন্দর্য নষ্ট করে যেনতেনভাবে চুন-সুরকির প্রলেপ দিয়ে সংস্কার করার চেষ্টা করলে স্থানীয় সুশীলসমাজ ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দল প্রবল আপত্তির মুখে সংস্কার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এ পানাম নগরীর সংস্কার কাজ নিয়ে ওই সময়ে ব্যাপক জালিয়াতি করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর । সংস্কারের নামে নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল পানাম নগরীর প্রকৃত নকশা। অথচ পানাম নগরীর অবিকল নকশা ঠিক রেখে সংস্কার কাজের কথা ছিল।একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে পানাম নগরীর পাঁচটি ভবন প্রাথমিকভাবে সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ সংস্কার কাজের জন্য দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি এর সাথে যোগাযোগ করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ফলে ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও কোরিয়া ইপিজেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিহাক সাং একাধিকবার পানাম নগরী পরিদর্শনে আসেন। ওই কোম্পানির সাথে সংস্কারের চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। বর্তমানে অর্থের অভাবে সংস্কার কাজ আর হচ্ছে না। বিনিয়োগ করার মতো কোনো সংস্থা বা কোম্পানি এগিয়ে আসছে না।১৪ বছর পর সংস্কার না হওয়ায় পানামের সব ভবনের অসংখ্য কক্ষের ইট ধসে পড়ছে।

খসে পড়েছে কারুকাজগুলো। তবুও কোনোভাবে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অবকাঠামোগুলো। ভুতুড়ে পানাম নগরের ভবনগুলোর অন্ধকার কক্ষে একাকী দাঁড়ালে ভয়ে গা শিউরে ওঠে। ভবনের অবকাঠামোগুলো মনে করিয়ে দেয় সে সময়ের বর্ণিল সব আয়োজন। প্রতিটি ইটের সাথে জড়িয়ে আছে নানা অজানা ইতিহাস। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর হিসাব অনুযায়ী নগরীর ২৬টি ভবনকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি ভবনে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন’ সাইন বোর্ড লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।
ফলে বর্তমানে পানাম নগরীতে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা কোনো ভবনই ভালোভাবে ঘুরে ফিরে দেখতে পারছেন না। কারণ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এ ছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশ বড় ধরনের ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। সামান্য ভূমিকম্পই এ নগরী ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। অচিরেই পানাম নগর প্রত্ত্বতাত্ত্বিকভাবে সংরক্ষণ করে ও মধ্যযুগীয় ইমারতের স্থাপত্যেকলার বিন্যাসে পানামের অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করা অতীব জরুরি হয়ে উঠেছে।

একসময় পানাম নগর ছিল মানুষে মানুষে মুখরিত, জমজমাট এক এলাকা, আজ হয়ত সে কিছু নেই। তবে পানাম নগরে গেলে প্রতিটি ইটে, প্রতিটি স্থাপত্য নিদর্শনে ৪৫০ বছর আগের সে ব্যস্ততা অনুভব করা যায়।  যে নীল আর মসলিন একসময় জমজমাট করে তুলেছিল পানাম নগরকে, সেগুলোর অনুপস্থিতি ধীরে ধীরে একে করে তুলল এক ভূতুড়ে নগরী। এক জমজমাট এলাকার কী করুণ পরিণতি!
যদিও অনেকে একে এখন “ঘোস্ট সিটি” বা ভূতুড়ে নগর বলে ডাকেন, আদতে এটি এখন
দর্শনার্থীদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। দেশি বিদেশী নানান পর্যটকের ভিড়ে এখন মুখরিত থাকে পানাম নগর । সময় যতো গড়িয়ে যায় ততই বাড়তে থাকে পানাম নগরের রূপ। শেষ বিকেলের আলোয় পানাম নগরের প্রতিটি ইট রক্তলাল হয়ে ওঠে। সন্ধ্যে নামার আগেই জনমানবহীন হয়ে পড়ে কালের সাক্ষী। রাতের আধারেও শতাব্দি পুরনো ইতিহাস বুকে নিয়ে ঠায় দাড়িয়ে থাকে পানাম নগর।

সূত্র : আনন্দ আলো