1:44 pm, Sunday, 10 November 2024

সবাই মিলে থাকি : আফরোজা পারভীন

  • কারুবাক
  • আপডেটের সময় : ০১:২০:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩
  • 175 ভিউ
শেয়ার করুন

সোমা বাবা- মায়ের সাথে দাদির বাড়ি বেড়াতে গেছে । অনেক দিন পরে গাঁয়ে এল । দাদি কত যে চিঠি লেখেন, ফোন করেন। ওদের যাওয়া হয় না। বাবা মা দুজনই চাকরি করেন। একজনের ছুটি হলে আরেকজনের হয় না, আবার দুজনের ছুটি হলে সোমার ইসকুল ছুটি হয় না। এবার সবার ছুটি মিলে গেল।
যাবার জায়গা দুটো, দাদাবাড়ি আর নানাবাড়ি। কোথায় যাবে এই নিয়ে বাবা- মা ভাবনায় পড়লেন। বাবা চান তার মার কাছে যেতে। মাও চান নিজের মার কাছে যেতে। এ আলোচনা আর ফুরোয় না। দুজনে একমত হতে পারেন না। শেষে মা বললেন,
: সোমার উপর ছেড়ে দাও। ও যেখানে যেতে চায় যাব।
সোমা বলল,
: দাদির কাছে।
মার মনটা একটু খারাপ হল। সোমা বুঝল।
দাদা বাড়ির উঠোনে এসে গাড়ি থামল। দাদি ওদের অপেক্ষাতেই ছিলেন। ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলেন সোমাকে।
: আয় আয় দাদু আমার কাছে। কতদিন তোকে দেখিনি।
একের পর এক চুমু খেতে থাকলেন সোমার কপালে, গালে। টেনে নিলেন বুকের মাঝে। চোখে তার পানি।

মা-বাবা দাদিকে সালাম করলেন। সালাম করল সোমাও। তারপর ‘আয় বাবা, এসো বউমা, এতদিন পর মাকে মনে পড়ল’ বলতে বলতে ওদের নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। ততক্ষণে সারা গায়ের লোক ভেঙে পড়েছে দাদির উঠোনে। তারাও ঢুকে পড়ল ঘরে। বসে পড়ল কেউ খাটে, কেউ চেয়ারে। ওদের সাথে কথা বলতে লাগল, বড়রা সোমাকে আদর করল। যেন কতদিনের চেনা!
ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা সোমাকে ঘিরে ধরল। ওর কাছে ঢাকার কথা, ওদের ইসকুলের কথা জানতে চাইল। সোমা বলল। ওরা চোখ বড় বড় করে শুনল। তারপর বলল,
: কাল থেকে আমরা একসাথে খেলব, একসাথে ঘুরব। গাঁ ঘুরিয়ে দেখাব। যাবে তো আমাদের সাথে?
: তোমরা না নিলেও জোর করে যাব।

দাদিদের গাঁ নদীর তীরে। মাঝে মাঝে নদীর পাড় ভাঙে। তলিয়ে যায় জনপদের পর জনপদ। যতটুকু যায় তার থেকে অনেক কম উঠে আসে। ঘরবাড়ি পাকাফসল ক্ষেত খামার সবই তলিয়ে যায়। তাই এ গাঁয়ের বেশিরভাগ মানুষ গরীব। ধনী ঘর কয়েকটা। অনেক মানুষের দুবেলা ভাত জোটেনা। বাবা মাঝে মাঝেই দুঃখ করে এসব কথা বলেন। এদের দেখে সোমার খুব বেদনা হয়।
ঢাকা থেকে অনেক খাবার -দাবার এনেছিলেন সোমার বাবা-মা। সেগুলো ছেলে মেয়েদের হাতে তুলে দেন। ওরা খুব খুশি হয়।
দাদি কত রকমের কত কিছু খাওয়াতে থাকেন। তবু যেন তার মন ভরে না। সারাবছর ধরে একটু একটু করে জমিয়ে রেখেছেন ওদের জন্য। গাওয়া ঘি, নলেন গুড়, নানা রকম আচার, নারকেলের বরফি আরও কত কি। একের পর এক আসতে থাকে ওদের সামনে। মার সামনে এনে দেন তেঁতুল। হাসিমাখা মুখে বলেন,
: তোমার জন্য রেখেছিলাম বউমা। সেকি আজকের কথা ! সেবার যখন এলে চেয়ে চেয়ে এই তেঁতুল খেয়েছিলে। যাবার সময় নিয়েও গিয়েছিলে। মনে আছে তোমার?
: থাকবে না কেন মা! মনে আছে।
: আর রেখেছি চলের গুড়ো, পোলাউএর চাল। ঢাকায় কোথায় পাবে এসব?
: ঢাকায় সবই পাওয়া যায় মা। মা সব কথাই বলেন হেসে হেসে। তবে সোমা বোঝে, নানিবাড়ি না যেতে পারাটা মাকে এখনও মনমরা করে রেখেছে।

পরদিন থেকে শুরু হল সোমার খেলা, গাঁ ঘোরা, পুকুরে সাঁতার কাটা। গাঁয়ের ছেলে মেয়েরা সব সময় আছে ওর সাথে। যেন কতকালে চেনা খেলার সাথী। আর খেতে লাগল দাওয়াত। সকালে এ বাড়িতে তো দুপুরে আরেক বাড়ি। রাতও বাদ যায় না।
ঘরে ঢুকে মার হাত ধরে খুব দাবি নিয়ে বলেন,
: দেখ আমরা তোমাদের পর না। তোমার চাচি শাশুড়ি আমি। গরিব হয়েছি এই যা। দুটো ডাল ভাত খাবো একসাথে। না বলো না। অনেক আশা করে এসেছি।
বাবা-মা কিছু না বলার আগেই সোমা বলে,
: যাবো যাবো। ডাল ভাত, মাছ গোশত যা দেন খাবো।
: কি ভাল মেয়ে! কোন অহংকার নেই। বুক ভরে গেল তোমার কথা শুনে।
এমন দাওয়াত আসতেই থাকে। পড়শীরাও দাওয়াত দেন। কত কিছু যে খাওয়ান। অথচ ওদের বাড়িঘর দেখেই বোঝা যায় ঘরে পয়সা নেই। তারপরও আতিথেয়তা, উদারতার কমতি নেই।

ওদের যত দেখে ততই অভিভূত হয় সোমা। ওরা ঢাকায় যে বহুতল ভবনে থাকে সেখানে কারো সাথে কারো তেমন কথা হয় না। দেখা হলে দুএক কথায় শেষ হয়ে যায় আলাপ। কেউ কারো বাড়িতে বেড়াতে যায় না। বলে, সময় নেই। এখানে একজন আরেকজনের বাড়িতে আসা যাওয়া করছে। বিপদে পাশে থাকছে। কি মিল নিজেদের মাঝে!
রাতে দাদির কোলে মাথা রেখে এসব কথা বলছিল সোমা। দাদি বললেন,
: সবাইকে নিয়ে একসাথে জড়িয়ে থাকতে হয় দাদু। সবাইকে আপন ভাবতে হয়। সবার সুখে সুখি আর দুঃখে দুখি হতে হয়। তাহলে মানুষ কখনও একা হয় না। দেখ আপনজনেরা তো সরাজীবন পাশে থাকে না। এই ধরো আমি আর কতদিনইবা বাঁচব। আমার বাবা-মা, তোমার দাদাভাই সবাইতো চলে গেছেন। তোমরা থাকো ঢাকায়। এরা যদি আমার পাশে না থাকত কাদের নিয়ে থাকতাম বলো। এরাই আমার পরিবার।

দাদির কথাগুলো মন দিয়ে শোনে সোমা। ও ভাবে, দাদি ঠিক কথাই বলেছেন। সবাইকে নিয়ে থাকার যে কি সুখ এই কয়দিনে বেশ বুঝতে পেরেছে। এবার ঢাকায় গিয়ে পড়শিদের বাসায় যাবে, ওনাদের ছেলে মেয়ের সাথে মিশবে। মাকেও বলবে সবার বাসায় যেতে। মা একবার গেলে, দুবার গেলে ওরা না এসে পারবে না।
এইভাবে একসময় সবার মাঝে একটা যোগাযোগ হবে। সবাই সবার পাশে দাঁড়াবে। সবাই মিলে হয়ে উঠবে এক পরিবার। ভাবতে ভাবতে দাদির কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে সোমা। ////////////////////////
সকাল থেকে শুরু হয়েছে গোছানো। দাদি মলিন মুখে সব জড়ো করছেন। পোলাইয়ের চাল, চালের গুড়ে, পিঠে যেন কিছু বাদ না যায়। পড়শীরাও একে একে আসছে সবাই।
সবার কাছ থেকে বিদায় নেয়ে গাড়িতে ওঠে ওরা। দাদি চোখ মোছেন। গাড়ি ছেড়ে দেয়। সবাই হাত নাড়ছে। একসময় দাদি সবার মাঝে এক হয়ে যান। সোমার মনে হয় সারা গাঁয়ের লোক ওর আপনজন।

ঢাকায় ফিরে একদিন পাশের বাসায় যায় সোমা। তারপর মাকেও রাজি করিয়ে নিয়ে যায়। আর এভাবে যেতে যেতে বাসাগুলোর মাঝে যাতায়াত শুরু হয়ে যায়।
বছর ঘুরে আবারও ছুটি এসেছে। এবারও ছুটিটা মিলে গেছে। ওরা গাঁয়ে যাবে। কোথায় যাবে এখনও ঠিক হয়নি।
সোমা ইসকুল থেকে এসে বলল,
: ছুটি হয়ে গেছে টানা আট দিনের। কবে যাবো আমরা?
: কোথায় যাবো সেটাই তো এখনও ঠিক হয়নি। বাবা-মা দুজনই একযোগে বললেন।
: ঠিক হয়নি কে বলল ? হয়েছেতো
: কোথায় কোথায়? মা বাবা তাকিয়ে আছে সোমার দিকে।
: নানিবাড়ি। এটা তো সহজ হিসেব। গতবার গেছি দাদির আদর খেতে, এবার খাবো নানির আদর। মিশব ওই গাঁয়ের লোকের সাথে।
মা হাততালি দিয়ে ওঠেন। আর বাবা রাগ করতে গিয়ে হেসে ফেলেন।
———————————————

#
জনপ্রিয়

সবাই মিলে থাকি : আফরোজা পারভীন

আপডেটের সময় : ০১:২০:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩
শেয়ার করুন

সোমা বাবা- মায়ের সাথে দাদির বাড়ি বেড়াতে গেছে । অনেক দিন পরে গাঁয়ে এল । দাদি কত যে চিঠি লেখেন, ফোন করেন। ওদের যাওয়া হয় না। বাবা মা দুজনই চাকরি করেন। একজনের ছুটি হলে আরেকজনের হয় না, আবার দুজনের ছুটি হলে সোমার ইসকুল ছুটি হয় না। এবার সবার ছুটি মিলে গেল।
যাবার জায়গা দুটো, দাদাবাড়ি আর নানাবাড়ি। কোথায় যাবে এই নিয়ে বাবা- মা ভাবনায় পড়লেন। বাবা চান তার মার কাছে যেতে। মাও চান নিজের মার কাছে যেতে। এ আলোচনা আর ফুরোয় না। দুজনে একমত হতে পারেন না। শেষে মা বললেন,
: সোমার উপর ছেড়ে দাও। ও যেখানে যেতে চায় যাব।
সোমা বলল,
: দাদির কাছে।
মার মনটা একটু খারাপ হল। সোমা বুঝল।
দাদা বাড়ির উঠোনে এসে গাড়ি থামল। দাদি ওদের অপেক্ষাতেই ছিলেন। ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলেন সোমাকে।
: আয় আয় দাদু আমার কাছে। কতদিন তোকে দেখিনি।
একের পর এক চুমু খেতে থাকলেন সোমার কপালে, গালে। টেনে নিলেন বুকের মাঝে। চোখে তার পানি।

মা-বাবা দাদিকে সালাম করলেন। সালাম করল সোমাও। তারপর ‘আয় বাবা, এসো বউমা, এতদিন পর মাকে মনে পড়ল’ বলতে বলতে ওদের নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। ততক্ষণে সারা গায়ের লোক ভেঙে পড়েছে দাদির উঠোনে। তারাও ঢুকে পড়ল ঘরে। বসে পড়ল কেউ খাটে, কেউ চেয়ারে। ওদের সাথে কথা বলতে লাগল, বড়রা সোমাকে আদর করল। যেন কতদিনের চেনা!
ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা সোমাকে ঘিরে ধরল। ওর কাছে ঢাকার কথা, ওদের ইসকুলের কথা জানতে চাইল। সোমা বলল। ওরা চোখ বড় বড় করে শুনল। তারপর বলল,
: কাল থেকে আমরা একসাথে খেলব, একসাথে ঘুরব। গাঁ ঘুরিয়ে দেখাব। যাবে তো আমাদের সাথে?
: তোমরা না নিলেও জোর করে যাব।

দাদিদের গাঁ নদীর তীরে। মাঝে মাঝে নদীর পাড় ভাঙে। তলিয়ে যায় জনপদের পর জনপদ। যতটুকু যায় তার থেকে অনেক কম উঠে আসে। ঘরবাড়ি পাকাফসল ক্ষেত খামার সবই তলিয়ে যায়। তাই এ গাঁয়ের বেশিরভাগ মানুষ গরীব। ধনী ঘর কয়েকটা। অনেক মানুষের দুবেলা ভাত জোটেনা। বাবা মাঝে মাঝেই দুঃখ করে এসব কথা বলেন। এদের দেখে সোমার খুব বেদনা হয়।
ঢাকা থেকে অনেক খাবার -দাবার এনেছিলেন সোমার বাবা-মা। সেগুলো ছেলে মেয়েদের হাতে তুলে দেন। ওরা খুব খুশি হয়।
দাদি কত রকমের কত কিছু খাওয়াতে থাকেন। তবু যেন তার মন ভরে না। সারাবছর ধরে একটু একটু করে জমিয়ে রেখেছেন ওদের জন্য। গাওয়া ঘি, নলেন গুড়, নানা রকম আচার, নারকেলের বরফি আরও কত কি। একের পর এক আসতে থাকে ওদের সামনে। মার সামনে এনে দেন তেঁতুল। হাসিমাখা মুখে বলেন,
: তোমার জন্য রেখেছিলাম বউমা। সেকি আজকের কথা ! সেবার যখন এলে চেয়ে চেয়ে এই তেঁতুল খেয়েছিলে। যাবার সময় নিয়েও গিয়েছিলে। মনে আছে তোমার?
: থাকবে না কেন মা! মনে আছে।
: আর রেখেছি চলের গুড়ো, পোলাউএর চাল। ঢাকায় কোথায় পাবে এসব?
: ঢাকায় সবই পাওয়া যায় মা। মা সব কথাই বলেন হেসে হেসে। তবে সোমা বোঝে, নানিবাড়ি না যেতে পারাটা মাকে এখনও মনমরা করে রেখেছে।

পরদিন থেকে শুরু হল সোমার খেলা, গাঁ ঘোরা, পুকুরে সাঁতার কাটা। গাঁয়ের ছেলে মেয়েরা সব সময় আছে ওর সাথে। যেন কতকালে চেনা খেলার সাথী। আর খেতে লাগল দাওয়াত। সকালে এ বাড়িতে তো দুপুরে আরেক বাড়ি। রাতও বাদ যায় না।
ঘরে ঢুকে মার হাত ধরে খুব দাবি নিয়ে বলেন,
: দেখ আমরা তোমাদের পর না। তোমার চাচি শাশুড়ি আমি। গরিব হয়েছি এই যা। দুটো ডাল ভাত খাবো একসাথে। না বলো না। অনেক আশা করে এসেছি।
বাবা-মা কিছু না বলার আগেই সোমা বলে,
: যাবো যাবো। ডাল ভাত, মাছ গোশত যা দেন খাবো।
: কি ভাল মেয়ে! কোন অহংকার নেই। বুক ভরে গেল তোমার কথা শুনে।
এমন দাওয়াত আসতেই থাকে। পড়শীরাও দাওয়াত দেন। কত কিছু যে খাওয়ান। অথচ ওদের বাড়িঘর দেখেই বোঝা যায় ঘরে পয়সা নেই। তারপরও আতিথেয়তা, উদারতার কমতি নেই।

ওদের যত দেখে ততই অভিভূত হয় সোমা। ওরা ঢাকায় যে বহুতল ভবনে থাকে সেখানে কারো সাথে কারো তেমন কথা হয় না। দেখা হলে দুএক কথায় শেষ হয়ে যায় আলাপ। কেউ কারো বাড়িতে বেড়াতে যায় না। বলে, সময় নেই। এখানে একজন আরেকজনের বাড়িতে আসা যাওয়া করছে। বিপদে পাশে থাকছে। কি মিল নিজেদের মাঝে!
রাতে দাদির কোলে মাথা রেখে এসব কথা বলছিল সোমা। দাদি বললেন,
: সবাইকে নিয়ে একসাথে জড়িয়ে থাকতে হয় দাদু। সবাইকে আপন ভাবতে হয়। সবার সুখে সুখি আর দুঃখে দুখি হতে হয়। তাহলে মানুষ কখনও একা হয় না। দেখ আপনজনেরা তো সরাজীবন পাশে থাকে না। এই ধরো আমি আর কতদিনইবা বাঁচব। আমার বাবা-মা, তোমার দাদাভাই সবাইতো চলে গেছেন। তোমরা থাকো ঢাকায়। এরা যদি আমার পাশে না থাকত কাদের নিয়ে থাকতাম বলো। এরাই আমার পরিবার।

দাদির কথাগুলো মন দিয়ে শোনে সোমা। ও ভাবে, দাদি ঠিক কথাই বলেছেন। সবাইকে নিয়ে থাকার যে কি সুখ এই কয়দিনে বেশ বুঝতে পেরেছে। এবার ঢাকায় গিয়ে পড়শিদের বাসায় যাবে, ওনাদের ছেলে মেয়ের সাথে মিশবে। মাকেও বলবে সবার বাসায় যেতে। মা একবার গেলে, দুবার গেলে ওরা না এসে পারবে না।
এইভাবে একসময় সবার মাঝে একটা যোগাযোগ হবে। সবাই সবার পাশে দাঁড়াবে। সবাই মিলে হয়ে উঠবে এক পরিবার। ভাবতে ভাবতে দাদির কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে সোমা। ////////////////////////
সকাল থেকে শুরু হয়েছে গোছানো। দাদি মলিন মুখে সব জড়ো করছেন। পোলাইয়ের চাল, চালের গুড়ে, পিঠে যেন কিছু বাদ না যায়। পড়শীরাও একে একে আসছে সবাই।
সবার কাছ থেকে বিদায় নেয়ে গাড়িতে ওঠে ওরা। দাদি চোখ মোছেন। গাড়ি ছেড়ে দেয়। সবাই হাত নাড়ছে। একসময় দাদি সবার মাঝে এক হয়ে যান। সোমার মনে হয় সারা গাঁয়ের লোক ওর আপনজন।

ঢাকায় ফিরে একদিন পাশের বাসায় যায় সোমা। তারপর মাকেও রাজি করিয়ে নিয়ে যায়। আর এভাবে যেতে যেতে বাসাগুলোর মাঝে যাতায়াত শুরু হয়ে যায়।
বছর ঘুরে আবারও ছুটি এসেছে। এবারও ছুটিটা মিলে গেছে। ওরা গাঁয়ে যাবে। কোথায় যাবে এখনও ঠিক হয়নি।
সোমা ইসকুল থেকে এসে বলল,
: ছুটি হয়ে গেছে টানা আট দিনের। কবে যাবো আমরা?
: কোথায় যাবো সেটাই তো এখনও ঠিক হয়নি। বাবা-মা দুজনই একযোগে বললেন।
: ঠিক হয়নি কে বলল ? হয়েছেতো
: কোথায় কোথায়? মা বাবা তাকিয়ে আছে সোমার দিকে।
: নানিবাড়ি। এটা তো সহজ হিসেব। গতবার গেছি দাদির আদর খেতে, এবার খাবো নানির আদর। মিশব ওই গাঁয়ের লোকের সাথে।
মা হাততালি দিয়ে ওঠেন। আর বাবা রাগ করতে গিয়ে হেসে ফেলেন।
———————————————