12:25 am, Monday, 2 December 2024

ভ্রমণ পিয়াসী হৃদয় জয় করা বই `শূন্য প্রেমের তৃপ্তি ভ্রমণ’

  • কারুবাক
  • আপডেটের সময় : ০৭:৩৭:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩
  • 88 ভিউ
শেয়ার করুন

সুসেন কান্তি দাশ :

মনের আকাশে যখন রংধনু জেগে ওঠে, তখন কে তাকে ঘরে বন্দি করে রাখে, সে তো উড়ে চলে, ঘুরে চলে দূরে বহু দূরে। মনের জাগানো মায়াবী সুরের হাতছানিতে সাড়া দিয়ে সে দুর্বার গতিতে ছুটে চলে। সুপ্রিয় পাঠক, ভ্রমণ পিয়াসী মানুষের মনের কথা প্রকাশ করতে গিয়ে যে বইটির কথা বলতে হয় সেটি ‘শূন্য প্রেমের তুপ্তি ভ্রমণ’ গ্রন্থের কবি ও লেখক বিদ্যুৎ কুমার দাশ। তিনি কবিতা লেখেন, গল্প লেখেন, উপন্যাস লেখেন, প্রবন্ধ লেখেন। সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রায় সব মাধ্যমে সাধনা করেছেন। আজ তার লিখিত এই ভ্রমণকাহিনি-সংক্রান্তে গ্রন্থটি নিয়ে কিছু বলার, কিছু লেখার উৎসাহ পাওয়া যায়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রমণ-সংক্রান্ত কটি লাইনের কথা তুলে ধরে কবির ভ্রমণ বিলাসী মানসিকতার প্রাথমিক প্রকাশ করেন, কবিগুরুর মতে- “বহু সাধকের বহু সাধনার ধারা ধ্যানে তোমার মিলিত হয়েছে তারা তোমার জীবনের অসীমের লীলা পথে নতুন তীর্থ রূপ নিল এ জগতে।’

কবি বিদ্যুৎ কুমার দাশ কবিগুরুর ভ্রমণ পিয়াসী মনের সঙ্গে মন মিশিয়ে ২০০০ সালে ভারত ঘুরতে যায়। গ্রন্থের প্রথম অংশে ভারতের বিশেষ বিশেষ স্থানের পরিচয় তুলে ধরছেন। সেই কথা পরেই আসছি- স্বনামধন্য সাহিত্যিক, কবি বিদ্যুৎ কুমার দাশ মনে করেন ধর্মদর্শন যেমন মানব মনের চিরাচরিত চাওয়া, তেমনি ভ্রমণ ও ধর্মচর্চার অংশ হয়ে যায়। দেশ ভ্রমণ বলতে কেবল পরিবেশ দর্শন নয়, বরং পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলা মানুষের, প্রাণীর সঙ্গে প্রাণের সম্পর্ক তৈরি হয়। আর এই সম্পর্কই প্রেম আর পবিত্র প্রেমই পুণ্য সঞ্চার করে থাকে, গ্রন্থের দুই নং অংশে কবি স্বামী বিবেকানন্দের উদ্ধৃতি টেনেছেন- “মানুষের মধ্যে যে দেবত্ব প্রথম থেকেই আছে, তার বিকাশ‍ই ধর্ম;

‘শূন্য প্রেমের তুপ্তি ভ্রমণ’ গ্রন্থে কবি বিদ্যুৎ কুমার দাশ বিশটি অংশে বিভক্ত করে প্রকাশ করেছেন, প্রতিটি অংশই ভিন্ন মাত্রার, ভিন্ন অনুপ্রাস আর ভিন্ন ভিন্ন ভালোলাগা-ভালোবাসার প্রকাশ করেছেন। প্রায় প্রতিটি অংশে বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের উদ্ধৃতি, জীবনবোধ আর লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রকাশ করেছেন। চার নং অংশে সাহিত্যে নোবেলজয়ী সাহিত্যিক ‘হারন্ড পিন্টার -এর কয়েকটি কবিতার চরণ যুক্ত করেছেন, এভাবে-ভগবান গোপনে ‘শব্দ’ খুঁজলেন/মর্তের ভিড়ে আশীর্বাদ শব্দ। কিন্তু যতই খুঁজুন। আর যতই প্রেতাত্মাদের জীবনের ভিক্ষা করুন। নিঃশব্দ কক্ষ সুতীব্র যন্ত্রণায় খুঁজে পেলেন। তার আশীর্বাদ করবার কিছু নেই। বিশ্ববিখ্যাত লেখক হারল্ড পিন্টারের লেখার মাধ্যমে কবি ও ছোট কাগজ ‘পান্থ সম্পাদক বিদ্যুৎ কুমার দাশ প্রকাশ করতে চেয়েছেন- নিজ নিজ মনের শব্দগুচ্ছ দ্বারা সাজানো কথার মাধ্যমে ফুটে ওঠা জীবনের অনুরাগ। শব্দের মাধ্যমে অদেখার স্বপ্নকথা ব্যক্ত করা যায়, দৃশ্যমান বিষয়ের প্রকাশ করা যায়। চার নং অংশে ১৯ অক্টোবর ২০০০ সালে চিকচিকে রোদের শরীর বেয়ে সিলেট তামাবিল বর্ডার পার হয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে ভারতের সীমানায় এগিয়ে যাওয়ার গল্প শোনালেন । কবি লিখেছেন- রূপালী চাঁদ ডাকা আদরের জমিতে কোনো বৃদ্ধ বুক-ঝাঁপ দেয়। স্বর্ণ যুবতী তোর-ওই নিসর্গমণ্ডলে সূর্যরশ্মি আঁকাবাকা দৌড়ায়। লেখায় আরো বলেন- মেঘালয়ের ফুলের গন্ধ নেই। নারীদের আধিপত্য বেশি।

মেঘালয়ে মেঘ-মেঘ ভাব থাকে। এ রকম অজানা অনেক ভাবের প্রকাশ করেছেন লেখায়, মূলত ভ্রমণ না করে কেউ এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারে না। পৃথিবীর বিখ্যাত সব কবি-সাহিত্যিক নিজেদের লেখায় ভ্রমণ আর ভ্রমণের সঙ্গে জড়িত থাকা পরিস্থিতির প্রকাশ করেছেন, ভ্রমণকাহিনি এমন মজার বিষয় এই যে, কারো মতের সঙ্গে অন্য কারো মতের মিল থাকে না, কোনো এক লেখকের দৃষ্টিতে একই দৃশ্য ভিন্ন আমেজ ভিন্ন আমোদের সূত্রপাত করে থাকে। অনেকটা ভিন্ন চিন্তার ভিন্ন রকম। এই ‘শূন্য প্রেমের তৃপ্তি ভ্রমণ’ । কেউবা সুন্দরের খোঁজ করতে যান হিমালয়ের পাদদেশে, কেউবা মহাসাগরের তলদেশ পর্যন্ত যায়। কেউবা চাঁদের দেশে না পৌঁছেও কল্পনার জাল বিস্তার করে রাখেন । মন মাঝিকে পৌছে দেন অনন্তের সীমানায়, আমাদের কবি-সাহিত্যিক বিদ্যুৎ কুমার দাশ চলার পথে ক্ষণিক দেখা পরিবেশ পরিস্থিতিকে প্রকাশ করতে ভালোবাসেন। আবার বিশ্বনন্দিত কবিগুরু ঘরের সামনে ছড়িয়ে থাকা ছোট- ছোট দৃশ্যের মাঝেও অনন্তের তৃপ্তি খুঁজে বেড়ান। কবিগুরুর ভাষায়-

‘বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে

বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে

দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা,

দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

শুধু ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া

একটি ধানের শীষের উপর

একটি শিশির বিন্দু!’

ভ্রমণ করতে গেলে প্রয়োজন হয় অর্থের, সময়ের, মানসিকতার। পেটের ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য যেমন খাবার চাই, তেমনি মন ভালো রাখার জন্য চাই ভ্রমণের, এই ভ্রমণের পেছনে আনন্দের পাশাপাশি রয়েছে কষ্ট । অনেকটা কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে। কবি বিদ্যুৎ কুমার দাশ লিখেছেন, দুঃখ না পেলে দুঃখ ঘুচাই কী করে দশ নং অংশে লেখক কলকাতায়, কুচবিহার, আসাম অবস্থানরত দাদা, পিসি, মামা, মামি, মামাতো বোনসহ অগণিত সুজন-স্বজনের কথা বলেছেন। তাদের সঙ্গে কাটানো মধুময় সময়ের কথা ব্যক্ত করেছেন। এমনিতেই কবি, শিশু সাহিত্যিক বিদ্যুৎ কুমার দাশ একজন বহুজ-সরল মনের মানুষ। তাই কারো সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টিকে তিনি স্বর্গীয় সুখের মতোই অনুভব করেন। দশম অংশে ভ্রমণকাহিনির শেষাংশে লিখেছেন- আমার পিসির বাসায় মধ্যরাতে ঘুমাতে চেষ্টা করেও ঘুম আসছে না। গভীর ভাবনায় ডুবে গেলাম। ভাবতে-ভাবতে শেষ রাতে মনে পড়ল কত… 1 মূলত কবি বিদ্যুৎ কুমার দাশের লিখিত এই গ্রন্থ একটি ব্যতিক্রমধর্মী বই। লেখার বিষয় ভ্রমণবিষয়ক হলেও ভ্রমণকাহিনির ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে নানা স্বপ্নরাশির ঝলকানি। অনেকটা ঝকঝকাঝক ট্রেন চলার মতো মুহূর্তে পথের দুপাশের প্রতিচ্ছবির মতো। ‘শূন্য প্রেমের তৃপ্তি ভ্রমণ’ গ্রন্থে আছে দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, ধর্ম, মানবতার কাহিনি, আরো আছে ধর্মতত্ত্ব, ধর্মের আবশ্যকতা বিষয়ক কাহিনির সূত্রপাত।

লেখকের মন বিরহে ভরা। তাই ভ্রমণকাহিনির ভেতর দিয়ে তিনি লিখে গেছেন প্রেম, দহন, ভাবনা, ভয় পায় আতঙ্কের মর্মবাণী। তার লেখায় আছে তিন বিখ্যাত তারুণ্যের বৈচিত্র্যভরা ভ্রমণের কাহিনি। এ ছাড়া আধুনিক, উত্তর আধুনিক ও পুরাণ কথা। “ভট্ট সংগীত’ বা ‘ভাটের গান’-এর কতকথা । একদম বাংলা সাহিত্যে নতুন মনে হয়।

একরাশ নতুনত্বে ঘেরা একটি ভ্রমণকাহিনি বিদ্যুৎ কুমার দাশের ‘শূন্য প্রেমের তৃপ্তি ভ্রমণ’ । বলতে গেলে অন্যান্য বই হতে একেবারে আলাদা। এই প্ৰকাশক স্বনামধন্য কারুবাক প্রকাশন, গ্রন্থের প্রচ্ছদ এঁকেছে গোলাম কিবরিয়া, গ্রন্থের মূল্যমান ৩৫০ টাকা। শিশু শিল্পী ঋভু দাশ এবং অর্নি দাশের আঁকা ছবি। বিভিন্ন শহরের ভ্রমণ ছবিকে আলাদা পর্ব করে ভ্রমণে শৈল্পিকতা এনেছেন।

তবে মূল্যের চেয়ে ভালোলাগা আর ভালোবাসার মূল্য লেখায় আটক করে ফিরে পাওয়া যাবে। চট্টগ্রামের জন্ম নেয়া ২১টি বিভিন্ন বিষয়ে বই লেখেন এই গ্রন্থের লেখক বিদ্যুৎ কুমার দাশ। তবে তার পরিচয় পাওয়া যায়- লেখায় তার ভ্রমণকাহিনি শূন্য প্রেমের তৃপ্তি ভ্রমণ’ । লেখক আজীবন বেঁচে থাকুক তার সৃষ্টিতে, তার সাহিত্যে, তার ভ্রমণকাহিনিতে। সর্বশেষে অমর অক্ষয় হয়ে আজীবন টিকে থাকুক এই দেশে এই মাটিতে, এই বাংলায়, এই মহাবিশ্বে।

 

 

#
জনপ্রিয়

ভ্রমণ পিয়াসী হৃদয় জয় করা বই `শূন্য প্রেমের তৃপ্তি ভ্রমণ’

আপডেটের সময় : ০৭:৩৭:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩
শেয়ার করুন

সুসেন কান্তি দাশ :

মনের আকাশে যখন রংধনু জেগে ওঠে, তখন কে তাকে ঘরে বন্দি করে রাখে, সে তো উড়ে চলে, ঘুরে চলে দূরে বহু দূরে। মনের জাগানো মায়াবী সুরের হাতছানিতে সাড়া দিয়ে সে দুর্বার গতিতে ছুটে চলে। সুপ্রিয় পাঠক, ভ্রমণ পিয়াসী মানুষের মনের কথা প্রকাশ করতে গিয়ে যে বইটির কথা বলতে হয় সেটি ‘শূন্য প্রেমের তুপ্তি ভ্রমণ’ গ্রন্থের কবি ও লেখক বিদ্যুৎ কুমার দাশ। তিনি কবিতা লেখেন, গল্প লেখেন, উপন্যাস লেখেন, প্রবন্ধ লেখেন। সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রায় সব মাধ্যমে সাধনা করেছেন। আজ তার লিখিত এই ভ্রমণকাহিনি-সংক্রান্তে গ্রন্থটি নিয়ে কিছু বলার, কিছু লেখার উৎসাহ পাওয়া যায়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রমণ-সংক্রান্ত কটি লাইনের কথা তুলে ধরে কবির ভ্রমণ বিলাসী মানসিকতার প্রাথমিক প্রকাশ করেন, কবিগুরুর মতে- “বহু সাধকের বহু সাধনার ধারা ধ্যানে তোমার মিলিত হয়েছে তারা তোমার জীবনের অসীমের লীলা পথে নতুন তীর্থ রূপ নিল এ জগতে।’

কবি বিদ্যুৎ কুমার দাশ কবিগুরুর ভ্রমণ পিয়াসী মনের সঙ্গে মন মিশিয়ে ২০০০ সালে ভারত ঘুরতে যায়। গ্রন্থের প্রথম অংশে ভারতের বিশেষ বিশেষ স্থানের পরিচয় তুলে ধরছেন। সেই কথা পরেই আসছি- স্বনামধন্য সাহিত্যিক, কবি বিদ্যুৎ কুমার দাশ মনে করেন ধর্মদর্শন যেমন মানব মনের চিরাচরিত চাওয়া, তেমনি ভ্রমণ ও ধর্মচর্চার অংশ হয়ে যায়। দেশ ভ্রমণ বলতে কেবল পরিবেশ দর্শন নয়, বরং পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলা মানুষের, প্রাণীর সঙ্গে প্রাণের সম্পর্ক তৈরি হয়। আর এই সম্পর্কই প্রেম আর পবিত্র প্রেমই পুণ্য সঞ্চার করে থাকে, গ্রন্থের দুই নং অংশে কবি স্বামী বিবেকানন্দের উদ্ধৃতি টেনেছেন- “মানুষের মধ্যে যে দেবত্ব প্রথম থেকেই আছে, তার বিকাশ‍ই ধর্ম;

‘শূন্য প্রেমের তুপ্তি ভ্রমণ’ গ্রন্থে কবি বিদ্যুৎ কুমার দাশ বিশটি অংশে বিভক্ত করে প্রকাশ করেছেন, প্রতিটি অংশই ভিন্ন মাত্রার, ভিন্ন অনুপ্রাস আর ভিন্ন ভিন্ন ভালোলাগা-ভালোবাসার প্রকাশ করেছেন। প্রায় প্রতিটি অংশে বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের উদ্ধৃতি, জীবনবোধ আর লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রকাশ করেছেন। চার নং অংশে সাহিত্যে নোবেলজয়ী সাহিত্যিক ‘হারন্ড পিন্টার -এর কয়েকটি কবিতার চরণ যুক্ত করেছেন, এভাবে-ভগবান গোপনে ‘শব্দ’ খুঁজলেন/মর্তের ভিড়ে আশীর্বাদ শব্দ। কিন্তু যতই খুঁজুন। আর যতই প্রেতাত্মাদের জীবনের ভিক্ষা করুন। নিঃশব্দ কক্ষ সুতীব্র যন্ত্রণায় খুঁজে পেলেন। তার আশীর্বাদ করবার কিছু নেই। বিশ্ববিখ্যাত লেখক হারল্ড পিন্টারের লেখার মাধ্যমে কবি ও ছোট কাগজ ‘পান্থ সম্পাদক বিদ্যুৎ কুমার দাশ প্রকাশ করতে চেয়েছেন- নিজ নিজ মনের শব্দগুচ্ছ দ্বারা সাজানো কথার মাধ্যমে ফুটে ওঠা জীবনের অনুরাগ। শব্দের মাধ্যমে অদেখার স্বপ্নকথা ব্যক্ত করা যায়, দৃশ্যমান বিষয়ের প্রকাশ করা যায়। চার নং অংশে ১৯ অক্টোবর ২০০০ সালে চিকচিকে রোদের শরীর বেয়ে সিলেট তামাবিল বর্ডার পার হয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে ভারতের সীমানায় এগিয়ে যাওয়ার গল্প শোনালেন । কবি লিখেছেন- রূপালী চাঁদ ডাকা আদরের জমিতে কোনো বৃদ্ধ বুক-ঝাঁপ দেয়। স্বর্ণ যুবতী তোর-ওই নিসর্গমণ্ডলে সূর্যরশ্মি আঁকাবাকা দৌড়ায়। লেখায় আরো বলেন- মেঘালয়ের ফুলের গন্ধ নেই। নারীদের আধিপত্য বেশি।

মেঘালয়ে মেঘ-মেঘ ভাব থাকে। এ রকম অজানা অনেক ভাবের প্রকাশ করেছেন লেখায়, মূলত ভ্রমণ না করে কেউ এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারে না। পৃথিবীর বিখ্যাত সব কবি-সাহিত্যিক নিজেদের লেখায় ভ্রমণ আর ভ্রমণের সঙ্গে জড়িত থাকা পরিস্থিতির প্রকাশ করেছেন, ভ্রমণকাহিনি এমন মজার বিষয় এই যে, কারো মতের সঙ্গে অন্য কারো মতের মিল থাকে না, কোনো এক লেখকের দৃষ্টিতে একই দৃশ্য ভিন্ন আমেজ ভিন্ন আমোদের সূত্রপাত করে থাকে। অনেকটা ভিন্ন চিন্তার ভিন্ন রকম। এই ‘শূন্য প্রেমের তৃপ্তি ভ্রমণ’ । কেউবা সুন্দরের খোঁজ করতে যান হিমালয়ের পাদদেশে, কেউবা মহাসাগরের তলদেশ পর্যন্ত যায়। কেউবা চাঁদের দেশে না পৌঁছেও কল্পনার জাল বিস্তার করে রাখেন । মন মাঝিকে পৌছে দেন অনন্তের সীমানায়, আমাদের কবি-সাহিত্যিক বিদ্যুৎ কুমার দাশ চলার পথে ক্ষণিক দেখা পরিবেশ পরিস্থিতিকে প্রকাশ করতে ভালোবাসেন। আবার বিশ্বনন্দিত কবিগুরু ঘরের সামনে ছড়িয়ে থাকা ছোট- ছোট দৃশ্যের মাঝেও অনন্তের তৃপ্তি খুঁজে বেড়ান। কবিগুরুর ভাষায়-

‘বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে

বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে

দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা,

দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

শুধু ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া

একটি ধানের শীষের উপর

একটি শিশির বিন্দু!’

ভ্রমণ করতে গেলে প্রয়োজন হয় অর্থের, সময়ের, মানসিকতার। পেটের ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য যেমন খাবার চাই, তেমনি মন ভালো রাখার জন্য চাই ভ্রমণের, এই ভ্রমণের পেছনে আনন্দের পাশাপাশি রয়েছে কষ্ট । অনেকটা কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে। কবি বিদ্যুৎ কুমার দাশ লিখেছেন, দুঃখ না পেলে দুঃখ ঘুচাই কী করে দশ নং অংশে লেখক কলকাতায়, কুচবিহার, আসাম অবস্থানরত দাদা, পিসি, মামা, মামি, মামাতো বোনসহ অগণিত সুজন-স্বজনের কথা বলেছেন। তাদের সঙ্গে কাটানো মধুময় সময়ের কথা ব্যক্ত করেছেন। এমনিতেই কবি, শিশু সাহিত্যিক বিদ্যুৎ কুমার দাশ একজন বহুজ-সরল মনের মানুষ। তাই কারো সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টিকে তিনি স্বর্গীয় সুখের মতোই অনুভব করেন। দশম অংশে ভ্রমণকাহিনির শেষাংশে লিখেছেন- আমার পিসির বাসায় মধ্যরাতে ঘুমাতে চেষ্টা করেও ঘুম আসছে না। গভীর ভাবনায় ডুবে গেলাম। ভাবতে-ভাবতে শেষ রাতে মনে পড়ল কত… 1 মূলত কবি বিদ্যুৎ কুমার দাশের লিখিত এই গ্রন্থ একটি ব্যতিক্রমধর্মী বই। লেখার বিষয় ভ্রমণবিষয়ক হলেও ভ্রমণকাহিনির ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে নানা স্বপ্নরাশির ঝলকানি। অনেকটা ঝকঝকাঝক ট্রেন চলার মতো মুহূর্তে পথের দুপাশের প্রতিচ্ছবির মতো। ‘শূন্য প্রেমের তৃপ্তি ভ্রমণ’ গ্রন্থে আছে দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, ধর্ম, মানবতার কাহিনি, আরো আছে ধর্মতত্ত্ব, ধর্মের আবশ্যকতা বিষয়ক কাহিনির সূত্রপাত।

লেখকের মন বিরহে ভরা। তাই ভ্রমণকাহিনির ভেতর দিয়ে তিনি লিখে গেছেন প্রেম, দহন, ভাবনা, ভয় পায় আতঙ্কের মর্মবাণী। তার লেখায় আছে তিন বিখ্যাত তারুণ্যের বৈচিত্র্যভরা ভ্রমণের কাহিনি। এ ছাড়া আধুনিক, উত্তর আধুনিক ও পুরাণ কথা। “ভট্ট সংগীত’ বা ‘ভাটের গান’-এর কতকথা । একদম বাংলা সাহিত্যে নতুন মনে হয়।

একরাশ নতুনত্বে ঘেরা একটি ভ্রমণকাহিনি বিদ্যুৎ কুমার দাশের ‘শূন্য প্রেমের তৃপ্তি ভ্রমণ’ । বলতে গেলে অন্যান্য বই হতে একেবারে আলাদা। এই প্ৰকাশক স্বনামধন্য কারুবাক প্রকাশন, গ্রন্থের প্রচ্ছদ এঁকেছে গোলাম কিবরিয়া, গ্রন্থের মূল্যমান ৩৫০ টাকা। শিশু শিল্পী ঋভু দাশ এবং অর্নি দাশের আঁকা ছবি। বিভিন্ন শহরের ভ্রমণ ছবিকে আলাদা পর্ব করে ভ্রমণে শৈল্পিকতা এনেছেন।

তবে মূল্যের চেয়ে ভালোলাগা আর ভালোবাসার মূল্য লেখায় আটক করে ফিরে পাওয়া যাবে। চট্টগ্রামের জন্ম নেয়া ২১টি বিভিন্ন বিষয়ে বই লেখেন এই গ্রন্থের লেখক বিদ্যুৎ কুমার দাশ। তবে তার পরিচয় পাওয়া যায়- লেখায় তার ভ্রমণকাহিনি শূন্য প্রেমের তৃপ্তি ভ্রমণ’ । লেখক আজীবন বেঁচে থাকুক তার সৃষ্টিতে, তার সাহিত্যে, তার ভ্রমণকাহিনিতে। সর্বশেষে অমর অক্ষয় হয়ে আজীবন টিকে থাকুক এই দেশে এই মাটিতে, এই বাংলায়, এই মহাবিশ্বে।